মেহেরপুরে আলুক্ষেতে পচন রোগ লোকসানের মুখে আলু চাষিরা

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:05 PM, 31 January 2024

মেহেরপুরে চলতি মৌসুমে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে আলু খেতে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। প্রতিকার হিসেবে ছত্রাকনাশক ও বিষ প্রয়োগ করেও দমন করা যাচ্ছে না এ রোগ। এতে আলুর ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। ফলে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। কৃষি বিভাগ বলছে, বৈরী আবহাওয়ার কারনে এমনটি ঘটছে, তবে বৈরী আবহওয়া কেটে গেলে এ রোগের সমস্যা থাকবে না।

মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। গেল মৌসুমে ভাল দাম পাওয়ায় চাষিরা এবারও আলু চাষে আগ্রহী হন। সে অনুযায়ি চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চাষিরা দেশি জাতের আলু আউশা, চল্লিশা, দোহাজারী লাল, পাটনাই, সাদা গুটি শীল বিলাতী ও সূর্যমূখী আবাদ করে থাকেন। উন্নত জাতের আলুরও চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে ডায়ামন্ট, কার্ডিনাল, সিন্দুরী, ক্লিওপেট্রা বারি আলু-১ (হীরা), বারি আলু-৪ (আইলসা), বারি আলু-৭ (ডায়ামন্ট), বারি আলু-১৮ (বারাকা), বারি আলু-১৯ (বিন্টজে) এবং বারি আলু-২০ (জারলা) জাত উল্লেখ্য। তবে দেশি জাতগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। দেখা গেছে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দেশি জাতের আলুর ফলন কমে যায়। বীজের মাধ্যমেই এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে। ।

বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতে দেখা দিয়েছে গাছ পুড়া ও পচন রোগ। এতে গাছ মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। তবে কোন সুফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন চাষিরা। আবার অনেকেই কি কারনে রোগ বালাই দেখা দিয়েছে তার কারন খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে আলুর ফলন কমে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত। সব অঞ্চলে এ রোগের ভয়াবহতা ।

কৃষকরা বলছেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ও ওষুধ স্প্রে করেও কোনো সুফল মিলছে না। আলুর গাছ নির্ধারিত সময়ের আগেই মরে যাচ্ছে। ফলে মাটির নিচে থাকা আলু আকারে ছোট হয়ে থাকছে। আলু গাছ মরে যাওয়ার কারনে আকারে সেই ছোট আলু তুলে ফেলা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমে গিয়ে চার ভাগের এক ভাগ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষতির মুখে বর্গা চাষিরা। এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আলু আবাদ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সেখানে আলু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকাও জমছে না।

মুজিবনগর উপজেলার রামনগর গ্রামের আলু চাষি মুরাদ জানান, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। এতে প্রায় দুই লক্ষ টাকার মত খরচ হয়েছে। দুই বিঘা জমিতে আলু ভালো আছে। বাকি তিন বিঘা আলু গাছ পুড়ে গেছে। এসব আলু আর বড় হবে না। তাই বাধ্য হয়ে আলু তুলে ফেলতে হচ্ছে। একই কথা জানালেন আলু চাষি সাইফুল ইসলাম। তার সাড়ে চার বিঘা জমির সব আলু গাছপুড়া ও পচন রোগে আক্রান্ত। এ মৌসুমে মোটা টাকার লোকসান হবে বলেও জানান তিনি।

মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর আলু চাষি আব্দুল আলিম জানান, মৌসুমের শুরুতে ৭৫ টাকা কেজি দরে আলুর বীজ কিনে আলু চাষ করেছিলেন তিনি। দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। রোগাক্রান্ত আলু ছোট অবস্থায় তুলে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমে গেছে অর্ধেকে। এবার আলুর বাজারদর খুব ভালো ছিলো তারপর ও উৎপাদন কম হওয়াই লোকশানে পড়তে হবে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, জানান, চলতি মৌসুমে ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। শুরুতে আবহওয়া অনুকূলে থাকাই গাছ খুব ভালো হয়েছিলো। কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে তীব্র ঠাণ্ডা ও কুয়াশায় আলু ক্ষেতে গাছ পুড়া ও পচন রোগের আক্রমণে গাছ মরে যাচ্ছে। যার ফলে আক্রান্ত আলুর ফলন কমে গিয়েছে। আসলে বৈরী আবহওয়ার কারনে এমনটি হয়েছে। এ আবহাওয়া কেটে গেলে এ রোগের আক্রমণ কমে যাবে। তাছাড়া চাষিদেরকে বিভিন্ন বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :