মেহেরপুরে সজনের বাম্পার ফলন, দামে খুশি চাষি

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:36 PM, 23 March 2024

ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা,সজনে ডাটায় ভরে গেছে গাছটা,আর, আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি-খোকা তুই কবে আসবি! কবে ছুটি?’ কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বিখ্যাত কবিতা ‘মাগো, ওরা বলে’-এর বাস্তবচিত্র এখন মেহেরপুরের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায়। ছেলেদের প্রতি মায়েদের এমন আর্তির পাশাপাশি বানিজ্যিকভাবে সজিনা ডাটা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। সজিনা পাতা ও ডাটা পুষ্টি ও ভেজষগুনে ভরা সবজি হিসাবে খুব দামী। ফলে দিন দিন বসতবাড়ীর আশে পাশে, রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে এবং বানিজ্যিক সজনে ক্ষেত বাড়ছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায ৩৫ হেক্টর জমিতে ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার সজিনা গাছ আছে। প্রতি হেক্টরে ফলন ৪ থেকে সাড়ে ৪ টন। দেশে ২টি জাত আছে, একটি হালো সজিনা ও আর একটি নজিনা। ভারত থেকে হাইব্রিড সজিনার জাত এদেশে এসেছে। এ জাতের বীজ বপন করে লাগাতে হয়। হাইব্রিড জাতের সজিনা গাছে দু’বার ফুল আসে। ফেব্রয়ারী-মার্চ ও জুন-জুলাই মাস। গত বছর জেলায় ৬০ হাজার সজিনার ডাল রোপন করা হয়েছে। সজিনা গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজিনার পুষ্টি গুন অনেক বেশী।

এ গাছের অনেক গুন থাকায়, এ গাছকে যাদুর গাছ বলা হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর মেহেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ সজিনার ফলন হয়েছে। সজিনায় উচ্চ মূল্য পাওয়ায় চাষীরা খুশি। শুরুতে বাজারে সজিনার কেজি ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে বর্তমানে বিভিন্ন সাইজ হিসেবে ১৪০-২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভাল দাম পাওয়ায় এখন রোজার মাসে এই সজনে ডাটা বিক্রি করে সামনে ঈদের কেনা-কাটা করছে অনেকে।

পুষ্টিবিদ ডা. অলোক কুমার দাস জানান, সজিনার পাতা, ফল, ফুল, বীজ, ছাল, মুলের ভেজষ গুনও আছে। তাই সজিনা গাছের বিভিন্ন অংশ ভেজষ চিকিৎসায় কাজে লাগে। সজিনার পাতার পুষ্টিগুন বেশী, যেভাবে খাওয়া হোক না কেন তা শরীরে পুষ্টি যোগাবে, আর ঔষধীগুন তো আছেই। সজিনার পাতায় যে পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে তা অনেক পুষ্টিকর খাবারেও নেই। যেমন, ডিমের চেয়ে বেশী আমিষ, দুধের চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, কমলার চেয়ে বেশী ভিটামিন সি, কলার চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, গাজরের চেয়ে বেশী ভিটামিন এ আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজিনার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতি বাড়ীতে কমবেশি সজিনা গাছ আছে। সজিনা পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :