মেহেরপুরের লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে অধিক সরিষার চাষ

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  09:14 AM, 14 December 2022

সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়েছে মেহেরপুরের চাষীদের। যতদূর চোখ যায় হলুদ আর হলুদ। দূর থেকে দেখলে মনেই হবে না যে সরিষার চাষ,এ যেন ঢেলে দেওয়া প্রকৃতির হলুদের সমরহ।সরিষা বাড়তি চাষ হিসেবে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, সরিষা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি করতে চাষীদের দেওয়া হচ্ছে প্রনোদনা। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় ‘ জেলায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। মেহেরপুর জেলার কৃষকেরা স্থানীয় জাতির পাশাপাশি বারি সরিষা ১৪,১৫,১৭,বিনা ৯,৪,১১ ও টোরি ১৭ সরিষা চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সরিষা চাষের উপযুক্ত সময়,আর তাই ওই সময় সরিষার ফুলে ভরে গেছে মাঠ। সরিষা চাষে বাম্পার ফলন পেয়ে বেশ খুশি কৃষকেরা। স্থানীয় কৃষকরা জানাই বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণেই তারা আগ্রহ হয়েছেন সরিষা চাষে। কয়েক বছর ধরে ধান চাষে তেমন লাভ হয় না তাই বিকল্প হিসেবে সরিষা চাষ করেছেন কৃষকেরা। প্রতিবছরই ধান চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাই বিকল্প ফসল হিসেবে অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহ হয়েছে।

চর গোয়াল গ্রামের চাষি ফারুক হোসেন গাংনীর চোখ’কে জানান, এবার আমি ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ২ বিঘা জমিতে আমার মাত্র ১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই বিঘা জমিতে ৫০-৬০ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবো।

নওদা মুটমুড়া গ্রামের চাষি হুসাইন গাংনীর চোখ’কে জানান, কয়েক বছর ধরে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। এত দাম দিয়ে আমাদের সয়াবিন তেল কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। পরিবারের তেলের চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যেই আমরা সরিষা চাষ করেছি। আমার চার বিঘা জমিতে অনেক ভালো সরিষা হয়েছে,সারা বছরের তেলের চাহিদা মিটিয়ে আমি ৪০-৪৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবো।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন গাংনীর চোখ’কে জানান, গত বছর গাংনী উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছিল ৪৫০ হেক্টর জমিতে, আর গাংনী উপজেলায় ২৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।স্থানীয়ভাবে যে পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হয়েছে তা থেকে আমরা ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটিয়ে,যে সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিষা চাষ হয় না সেসব অঞ্চলে সরিষার তেল সরবরাহ করতে পারব।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার গাংনীর চোখ’কে জানান,জেলায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। মেহেরপুর জেলার কৃষকেরা স্থানীয় জাতির পাশাপাশি বারি সরিষা ১৪,১৫,১৭,বিনা ৯,৪,১১ ও টোরি ১৭ সরিষা চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন।জেলা কৃষি বিভাগের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশিক্ষণ, কৃষি প্রণোদন,, ডাল তেল প্রকল্প ও তেল জাতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে সরিষার চাষের উৎপাদন বৃদ্ধি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা খামারবাড়ি (অর্থকারী ফসল) ক্রপস্ উইং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড.মো ছাইদুর রহমান গাংনীর চোখ’কে জানান,আমরা আগামী ৩ বছরে তেলের ৪০% বৃদ্ধি করব, এ বছরেই ২০-২৫% হয়ে গেছে অভিমত।সরিষা চাষ যদি অব্যাহত থাকে,সয়াবিনের উপর আমাদের যে নির্ভরশীলতা তা অনেকটা কমে যাবে। কয়েক বছরের মধ্যে,আমরা সেই আগের সরিষার পূর্বের জগতে ফিরে যেতে পারবো। নিজের ক্ষেতে সরিষা চাষ করে, সেই তেল দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

আপনার মতামত লিখুন :