চাষিরা শীতকালীন সবজি আগাম চাষ করে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  02:07 PM, 10 November 2023

বর্ষা শেষে ভিজে মাটিতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকেছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। তাই অল্প সময়ে কম খরচে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, পালংশাকসহ শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা।

কৃষি বিভাগ বলছে, আগাম জাতের সবজি চাষ করে জেলার কৃষকরা সফল হচ্ছেন। তাই শীত শুরুর আগেই এক লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হতে পারে।

চাষিরা জানান, জেলার তিন উপজেলার বিভিন্ন মাঠজুড়ে এ বছর শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্বল্প সময়ে শীতকালীন সবজির চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। প্রতি বিঘায় সবজি উৎপাদনে খরচ হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যা মাঠ থেকেই বিক্রি হয় ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর ৭০ থেকে ৭৫ দিনেই বাজারজাত করা যায় এসব সবজি। তাই মেহেরপুরের চাষিরা আগাম জাতের সবজি চাষে ঝুঁকেছেন।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, এ বছর ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার ৬১৬ মেট্রিক টন সবজি। প্রতি মেট্রিক টন সবজির আনুমানিক বাজারদর ৩৩ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৩২৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কৃষি বিভাগের।

মেহেরপুর সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সবজিচাষি আরাফাত শেখ জানান, তিনি এ বছর দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে তিনি ৯০ হাজার টাকায় এক বিঘা জমির বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন। আরও এক বিঘা জমির সবজি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

একই গ্রামের সবজিচাষি জুয়েল হোসেন বলেন, আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষে সুবিধা হচ্ছে এটি মাত্র ৭০ থেকে ৭৫ দিনেই বাজারজাত করা যায়। যার ফলে স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হন চাষিরা।

জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের সবজিচাষি সাহাবুল হোসেন। তিনি সারা বছরই বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন করেন। তিনি বলেন, সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত শাহারবাটি গ্রাম। এ গ্রামে সব ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। শীতকালীন আগাম জাতের মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, পালংশাক ও ধনেপাতার আবাদ করা হয়। বাজারে প্রতিটি সবজিরই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিক্রির জন্য এখন আর বাজারে যাওয়া লাগে না। ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকেই সবজি কিনে নিয়ে যান। তাই এ অঞ্চলের চাষিরা আগাম জাতের সবজি চাষে ঝুঁকেছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া পারভেজ বলেন, সবজি উৎপাদনের জন্য মেহেরপুর বিখ্যাত। এই জেলায় সারা বছর বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন হয়। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন অনেক সহজ হচ্ছে। জেলার কৃষি বিভাগ সব সময়ই কৃষকদের পাশে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের উৎপাদনমুখী করতে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সব সময় সব সবজি উৎপাদন হয়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি মেহেরপুরে যাতে আরও বেশি বেশি সবজি উৎপাদন হয়, সে ব্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে।’

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, সবজি উৎপাদনে সুখ্যাতি রয়েছে মেহেরপুর জেলার। বৈজ্ঞানিক কৃষি ও প্রযুক্তির কারণে এখন সব সময় সব ধরনের সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। মেহেরপুর জেলায় এ বছর এ বছর ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। এর চাষ বাড়াতে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে জেলার কৃষি বিভাগ।

তিনি আরও বলেন, আগাম জাতের সবজি চাষে দেশ একদিকে যেমন সবজিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হবেন কৃষকরা। তাই এর উৎপাদন আরও বাড়াতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

আপনার মতামত লিখুন :