মেহেরপুরে ভুট্রা চাষে লাভের আশা করছে চাষীরা

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  05:59 PM, 17 January 2022

মেহেরপুরে চলতি মৌসুমেও অনেক বেশি ভুট্টার চাষ হয়েছে।মাঠের মধ্যে সবুজ পাতার আড়ালে হাসছে হলুদ রঙের ভুট্টা মাথায় লাল ফুল, গায়ে হলুদ বর্ণের এসব ভুট্টা দোল খাচ্ছে বাতাসে। উৎপাদন বেশি ও খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে লাভের আশা করছেন মেহেরপুরের কৃষকরা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে এখানকার কৃষকদের।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,
চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, গাংনী উপজেলায় ৬ হাজার হেক্টর ও মুজিবনগর উপজেলায় ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, যদিও গাংনী উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ করা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
তিনি বলেন, শুধু উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, মাটির উবরতা যেন ঠিক থাকে এবং চাষীরা যাতে পরিকল্পিতভাবে ভুট্টার আবাদ করতে পারে সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১ভাগ আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।আমিষে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ থাকে।

মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কৃষকরা জানান, ধান চাষের পর ভুট্টা চাষটা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ ভুট্টা চাষে লাভ বেশি। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। একই সাথে অনেকগুলো সুবিধার কারণে এ চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।

মেহেরপুর জেলার ময়ামারী, ঝাউবাড়ি, দক্ষিণ শালিকা, হরিরামপুর, রঘুনাথপুর, তারানগর, জয়পুর, মোনাখালী, আশরাফপুর, সাহারবাটী, ভাটপাড়া, নওপাড়া, মাইলমারী, শ্যামপুর, হিজুলী, কুলবাড়িয়া, রামকৃষ্ণপুর, হাড়াভাঙ্গা, শুভ রাজপুর, ফতেহপুরসহ প্রায় সকল গ্রামের কৃষকরাই অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা চাষ করে আসছে। উচ্ছ ফলন, বেশি লাভ আর চাহিদা অনেক থাকায় সম্প্রতি বছরগুলোতে ভুট্টা চাষাবাদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি ভুট্টা ক্রয় করেছেন।
কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা বীজ বিতরণের জন্য বিভিন্ন বীজ ভান্ডাররাও এগিয়ে এসেছে।
গতবছর ফলন ভালো হওয়ায় এবছরও জেএফ এগ্রো প্রাঃ লিঃ বাজারজাত করেছে জে এফ-৫৫ জাতের হাইব্রিড ভুট্টা বীজ। মেহেরপুরের বিশ্বাস বীজ ভান্ডার এর মাধ্যমে জেলার প্রায় ৯০ টি গ্রামের কৃষকদের মাঝে বাকিতে এ বীজ প্রদান করা হয়েছে।
প্রতি বিঘা জমিতে আড়াই থেকে তিন কেজি বীজ প্রয়োজন পড়ে এবং ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলন হয় বলে জানা যায়।

স্থানীয় ভুট্টা চাষিদের দাবি, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হলে ভুট্টচাষীরা আরো ব্যাপক হারে এ চাষাবাদ এগিয়ে নিতে পারবে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, চলতি রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে জেলার ৩ টি উপজেলার ৫ হাজার ভুট্টা চাষির মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান করা হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা তাদের ফসলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :