মেহেরপুরে গাজর চাষে আগ্রহ বাড়ছে

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  05:17 PM, 24 January 2022

দেশের অন্যান্য অঞ্চলে কমবেশি গাজরের চাষ করা হলেও মেহেরপুরে গাজরের চাষ তেমন একটা নজরে মেলেনি। বিগত বছরগুলোতে গাজরের চাষ নজরে না মিললেও চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলার কিছু কিছু এলাকায় গাজরের ক্ষেত নজরে মিলেছে। অর্থাৎ মেহেরপুরের কৃষকদের গাজর চাষে কিছুটা আগ্রহ বেড়েছে।
শীতকালীন সবজির মধ্যে গাজর অন্যতম। প্রায় সকলেরই খুব প্রিয় এই সবজি। অনেকেই কাঁচা গাজর খেতে খুব পছন্দ করে।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা শহরের রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক পুষ্টিবিদ তরিকুল ইসলাম বলেন, গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আঁশ সমৃদ্ধ একটি সবজি। এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
তিনি জানান, কাঁচা গাজর সালাদ, হালুয়া, পায়েস, জুস তৈরিসহ কিংবা তরকারি হিসাবেও খাওয়া যায়। ছোট মাছের সাথে বা অন্যান্য সবজির সাথে নিরামিষ খাবার হিসেবে অনেকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাছাড়া চোখ, ত্বক, চুল ও শরীরের নানা অঙ্গের জন্য গাজর অনেক উপকারী একটি সবজি।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটী চারচারা বাজারের বীজ ব্যবসায়ী তৌহিদ মুর্শেদ অতুল বিশ্বাস জানান, আমাদের দেশে গাজরের কোন অনুমোদিত জাত নেই। বিদেশ থেকে বিভিন্ন জাতের গাজরের বীজ আমদানি করে চাষ করা হয়। আমদানিকৃত বীজের মধ্যে রয়েল ক্রস, কোরেল ক্রস, কিনকো সানটিনে রয়েল ও স্কারলেট নান্টেস উল্লেখযোগ্য।
গাংনী উপজেলার পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন বেলে দোআঁশ মাটিই সাধারণত গাজর চাষের জন্যে উপযোগী।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন জানান, গাজরের বীজ বপনের উত্তম সময় আশ্বিন থেকে কার্তিকের মধ্যে, সেপ্টেম্বরের মধ্য থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম পর্যন্ত। হেক্টর প্রতি জমিতে ২০-২৫ টন ফলন হয় বলেও তিনি জানান।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, প্রতি হেক্টর জমিতে গাজর চাষের জন্য ৩-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনে সারি-সারির দুরত্ব ২০-২৫ সেঃমিঃ এবং গাছ-গাছের দুরত্ব ১০ সেঃমিঃ হতে হবে। গাজর চাষের জন্য ভালোভাবে চাষ ও মই দিতে হবে এবং মাটি ঝুরঝুরে হতে হবে। গাজরের বীজ সারিতে বপন করা ভালো এতে পরিচর্যা করা সহজ হয়। গাজরের বীজ আকারে খুব ছোট হওয়ায় বীজের সাথে শুকনা ছাই কিংবা গুড়া মাটি মিশিয়ে বপন করা যেতে পারে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে গাজর চাষ করা হয়েছে। পরিচর্যার ক্ষেত্রে মাটিতে রস কম হলে সেচ দেওয়া ও সেচের পর জো এলে নিড়ানি দেওয়াসহ চটা ভেঙ্গে মাটি আলগা করে দিতে হয় বলে জানালেন। একইসাথে আগাছা দমনের পরামর্শও দেন।

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, চলতি মৌসুমে মুজিবনগর উপজেলায় গাজর চাষ করা হয়নি। তবে কেউ গাজর চাষ করে থাকলে পোকা দমনের জন্য অনুমোদিত মাত্রাই কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ২৪ হেক্টর জমিতে গাজর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চারা গজানোর ৭০-৮০ দিন পর সবজি হিসেবে গাজর খাওয়ার জন্য তোলার উপযুক্ত হয়।

মেহেরপুর জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিস্তির্ন এলাকা সরেজমিনে গিয়ে কিছু কিছু গাজরের চাষ চোখে মেলে। মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়ি বাঁকা গ্রামের জনৈক কৃষক জানান, ইতিপূর্বে গাজর চাষ না করলেও প্রথম বার চাষ করে ব্যাপক ফলনের আশা করছেন।
এদিকে মেহেরপুরের খুচরা বাজারে প্রথম অবস্থায় প্রতি কেজি গাজর ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর বড়বাজার কাঁচাবাজারের মেসার্স মহলদার ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকার নাসির উদ্দীন জানান, পাইকারী ১৫ টাকা কেজি দরে গাজর ক্রয় করা হচ্ছে। আমদানি বেশি হলে বাজার মূল্য আরো কমতে পারে। তবে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাজার মূল্য ওঠানামা করে।
মেহেরপুর জেলার সাহারবাটী এলাকার গাজর চাষিদের অনেকেই জানান, বাইরে থেকে মেহেরপুরের বাজারে গাজর আমদানি করা না হলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে এবং গাজর চাষে আগ্রহ বাড়বে। কারণ মেহেরপুর জেলায় যে গাজর চাষ হয়েছে তা দিয়ে স্হানীয় ভাবে চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে। এতে করে গাজর চাষিরা বেশি লাভের মুখ দেখবেন এবং গাজর চাষে আগ্রহ বাড়বে।

আপনার মতামত লিখুন :