মেহেরপুরে বিলুপ্তির পথে দৃষ্টিনন্দন ঢোলকলমি গাছ

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:22 PM, 28 January 2022

ঢোলকলমি হচ্ছে কনভলভালাসি পরিবারের এক ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ইংরেজিতে একে বলে pink morning glory এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea carnea। একসময় মেহেরপুরের প্রায় প্রতিটি গ্রামের পথের ধারে, জলার পাশে, জমির পাশে বসত বাড়ির বেড়া হিসেবে সর্বত্র এদের দেখা যেত।

মেহরপুরের গ্রাম-গঞ্জে ঢোলকলমি বেড়ালতা বা বেড়াগাছ নামেও পরিচিত। সবুজ পাতার গাছটি ছয় থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছে দৃষ্টিনন্দন ফুল হয়। ফুল দেখতে মাইক বা ঘণ্টার আকৃতির। রং হয় হালকা বেগুনি ও সাদা। কলমি পরিবারের উদ্ভিদ হলেও ঢোলকলমি লতাজাতীয় নয়। ফাঁপা কাণ্ড নিয়ে ঢোলকলমি বেড়ে ওঠে। ব্রাজিলের আদিবাসীরা এর কাণ্ড তামাকের পাইপ হিসেবে ব্যবহার করে। এ ছাড়া কাণ্ড দিয়ে কাগজ তৈরি করা হয়।

একসময় গ্রাম অঞ্চলে রাস্তার ধারে পাশে দেখা গেলেও এখন সেটি বিলুপ্তির পথে। এখনও রাঙ্গুনিয়ার কিছুকিছু এলাকায় এই ঢোলকলমি গাছ দেখা যায়। তবে গ্রাম অঞ্চলে কয়েক দশক আগেও ঢোলকলমি গাছটি প্রায় দেখা যেতো।

ঢোলকলমি সুন্দর ফুল দেওয়া ছাড়াও জমির ক্ষয়রোধ করে। এটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে বলে গ্রামাঞ্চলে এই গাছ বাড়ি বা জমিতে বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকে আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করে। নদীর তীরে কিংবা ফসলের মাঠে ঢোলকলমি পাখির বসার জায়গা করে দেয়।

সারা বছর এই ফুল দেখা গেলেও বর্ষার শেষ ভাগ থেকে শরৎ ও শীতে এই ফুল বেশি ফোটে। একটি মঞ্জরিতে চার থেকে আটটি ফুল থাকে। ফুলের মধুর জন্য কালো ভ্রমর আসে। তবে এর পাতা ও কাণ্ড বিষাক্ত ও তেতো স্বাদের বলে গবাদি পশু এতে মুখে দেয় না। ফুল বা পাতা ছিঁড়লে সেখান থেকে সাদা কষ বা আঠা বের হয়।

ঢোলকলমির চাষ করতে হয় না। আর্দ্র পরিবেশে এর ডালপালা পড়ে থাকলেও আগাছার মতো এই গাছ জন্মে।

মেহেরপুর জেলার আমদাহ ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ আক্তারুল শেখ বলেন, ‘গ্রামের ভাষায় এই গাছ আমাদের কাছে ‘ঢোলকলমি’ হিসেবেই পরিচিত। এটি খুবই উপকারী গাছ। ঢোলকলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গরু-ছাগল গাছটি না খাওয়ায় বিভিন্ন ফসলের বেড়া হিসেবে ব্যবহার করতাম এবং আমরা দেখেছি পুকুরের পাড় বাধতে এটি ব্যবহার করা হতো । আবার রান্নার জ্বালানি উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতাম। তবে এখন আর এই গাছটি দেখা যায় না। নতুন প্রজন্মের সন্তানদের ‘ঢোলকলমির’ বললে হয়তো তারা চিনবেও না।’

আপনার মতামত লিখুন :