মেহেরপুরের বাজারে আগাম কচু তোলা শুরু

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:56 PM, 04 June 2022

গত কয়েকবারে কচু চাষে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে মেহেরপুরের কৃষকদের। এ সাফল্যের আশায় কচু চাষেই লেগে রয়েছেন তাঁরা।
মেহেরপুর জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কচু চাষ নজরে পড়ার মতো। ইতিমধ্যেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন কচু। তবে তুলনামূলকভাবে বাজার মূল্য একটু কম বলে জানান কৃষকরা।

মেহেরপুর শহরের কচু ব্যবসায়ী মন্টু জানান, এবছরে প্রতি বিঘা জমির কচু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ হাজার টাকায়। যা গত বছরে বিক্রি হয় ১ লক্ষ টাকায়।

দিঘির পাড়া এলাকার কচু বাছাইয়ে কর্মরত শ্রমিকদের একজন হারান জানান, কাঠা প্রতি জমিতে কচু উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ১০০ কেজি। প্রতি বিঘা জমির কচু ৩৫-৫০ টাকায় জমি থেকে বেচাকেনা হচ্ছে।

নূরপুর গ্রামের জনৈক কৃষক জানান, শুরুতে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। অনেকেই আমাকে কচু চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসল চাষের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি কচু চাষে লেগেই ছিলাম। পরে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা লাভ করলে আমার চাষ করা কচু থেকে লাভ আসতে শুরু করে। এবছরেও আশানুরূপ ফলন হবে।

উত্তর শালিকা গ্রামে আবাদ কৃত আরেক কচু চাষি শ্যামপুর গ্রামের জনৈক মাছ ব্যবসায়ী জানান, আমি মাছ বেচাকেনার পাশাপাশি ১৬ কাঠা জমিতে নিজ প্রচেষ্টায় কচু চাষ করে সাফল্য লাভ করি। কচু লাভজনক ফসল। প্রথম দিকে লোকসান গুনতে হলেও গত কয়েকবছরে লাভের মুখ দেখেছি। যেকারণে এবারও কচু চাষ করছি। তবে তুলনামূলকভাবে এ বছরে কচুর বাজার মূল্য অনেকটাই কম।

সোনাপুর বাজারের জনৈক ব্যবসায়ী জানান, আগাম কচুতে লাভ বেশি। আমি গতবছর ১০ কাঠা জমিতে আগাম কচু চাষ করে জমি থেকেই তা ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। তবে এবার বাজার মূল্য অনেকটাই কম। খুচরা বাজারে আগাম কচু ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবছরে তা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুরের একাধিক কচু চাষি ও ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কচু বর্তমানে লাভজনক ফসল। বিগত বছরগুলোতে বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকেছেন কচু চাষে। আগাম কচু খুচরা বাজারে ৮০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে তা কমতে কমতে ৬০ টাকা বা ৪০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু এবছরে শুরুতেই স্থানীয় বাজারে খুচরা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা পাইকারি বাজারে ২৫ টাকা। এতে করে চলতি বছরে কৃষকরা তেমন একটা লাভবান হবেন না বলে তাঁরা জানান।

এদিকে জেলার কয়েকটি এলাকার অনেকে কচুর লতির আবাদ করে থাকেন। যা স্হানীয় হাটবাজারে চাহিদা মিটিয়ে বরিশাল, রাজবাড়ী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। লতি থেকেও প্রচুর অর্থ লাভ করা যায় বলে চাষিরা জানান। চলতি বছরে লতির বাজার মূল্য ভালো রয়েছে। তবে উৎপাদন ভালো হলেও মূল্য কমের কারণে কচু চাষিরা লাভের মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে তাঁরা জানান।

মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ঘুরে এখন ব্যাপক কচু চাষ লক্ষ্য করা গেছে। কারও জমিতে কচু তোলার সময় হয়েছে। কারও জমিতে আরও কয়েকদিন পর কচু তোলা হবে। তবে অনেকেই তাদের জমির কচু আগাম বিক্রি করে দিয়েছেন। যা ব্যবসায়ীরা তুলে ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছেন চিটাগাং কিংবা ঢাকা।

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান খান জানান, আমরা কচু চাষের ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহিত করেছি। নতুন যারা কচু চাষ করেছেন আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিয়েও সহযোগিতা করেছি। চাষিরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন বলে তিনি আশাবাদী।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (শস্য) একেএম কামরুজ্জামান দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল কে জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে কচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে, গাংনী উপজেলায় ১৩০ হেক্টর এবং মুজিবনগর উপজেলায় ৪৬০ হেক্টর জমিতে কচু চাষ করা হয়।
কচু চাষির অনেকেই শুরুতে কিছুটা কম হলেও পরে ধীরে ধীরে কচু চাষের জমি বাড়াতে থাকেন। এভাবে একটু একটু করে এগিয়ে অনেকেই সফলতার মুখ দেখেছেন। একইসাথে তাঁরা তাদের চাষকৃত জমিতে কচুর বাম্পার ফলন পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আপনার মতামত লিখুন :