রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুমের সংস্কৃতি চালু করেছে সরকার : রিজভী

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:06 AM, 30 August 2023

দেশে সভ্যতার কোনো মাপকাঠি বিদ্যমান নেই মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ এখন বিবেকবর্জিত অরণ্যচারী নরপিশাচদের দ্বারাই অধিকৃত। গুমের মতো কাজ কেবল পশুদের দ্বারাই সম্ভব। ক্ষমতাসীনরা সর্বযুগের পৈশাচিক দুঃশাসনের অনুসারী। এদের মন ও মননে বাসা বেঁধেছে হিটলার-মুসোলিনি-নমরুদ-ফেরাউনের হিংস্রতা। বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এরা দখল করা রাষ্ট্রকে কাজে লাগাচ্ছে। শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুমের সংস্কৃতি চালু করেছে। এক্ষেত্রে তিনি আর কতদূর অগ্রসর হবেন সেটি নিয়ে গোটা জাতি শঙ্কিত।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, মো. মুনির হোসেন, আসাদুল করিম শাহিন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৮ ও ২৯ জুলাই হতে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন রিজভী।

তিনি বলেন, সোমবার রাত ১২টায় রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন সেলিম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদ, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল আহমেদ চৌধুরী, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টিপু আহমেদ এবং ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিল্লাদ হোসেনকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়াও মঙ্গলবার ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুন হোসাইন একটি মিথ্যা মামলায় আদালতে জামিন চাইতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।

এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পিরোজপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম উত্তর, জামালপুর, বাগেরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী। তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মোট আহত ১২৫০ জন, মোট মামলা ৩২৭টি, মোট গ্রেপ্তার ১৬২০ জন, মোট আসামি ১৩,৪৩০ জন।

৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৬০০ এর অধিক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন।

এদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, তরুণ, যুবক, ছাত্র, সাংবাদিক ও অধিকার গ্রুপের লোকজন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনের মতো মানুষের লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং বহুদিন পর অনেককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কেউ কেউ দীর্ঘদিন পর ফেরত এসেছে। এখনো অসংখ্য গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। এক্ষেত্রে প্রায় সবাই দাবি করেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়েই তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গুম হওয়া অনেককেই নিজ বাসায় পরিবারের সদস্যদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অথবা আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশী বা দোকানপাটে দাঁড়ানো লোকজন সচক্ষে দেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনদেরই তুলে নিয়ে যেতে। গুমের মতো ঘটনা মানবতার শত্রুদের দ্বারাই করা সম্ভব।

তিনি বলেন, নিশিরাতে সরকারের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন স্পর্ধার পরিণতিই হচ্ছে জোরপূর্বক গুম। একক ক্ষমতার অপ্রতিদ্বন্দ্বীহীন প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাকিরসহ শত শত নেতা, ভিন্নমতের মানুষ ও অধিকার গ্রুপের মানুষদের অদৃশ্য করা হয়েছে। আরেকটি ভয়ানক গুমের ঘটনা বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের, তাকে ৬২ দিন গুম করে রাখার পর পাশের দেশে চালান দেওয়া হয়। গুমের মতো মানবতাবিরোধী কাজ করেও নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠী নিজেদের নিরাপদ মনে করেনি। তাই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি রেখেছেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার পাশাপাশি আদালতকে দিয়ে তার বক্তব্য প্রচারে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। তবে শেখ হাসিনার অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে। আদালতকে দিয়ে তারেক রহমানের কণ্ঠরোধ করা যাবে না।

অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান এবং আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন রিজভী।

সূত্রঃ কালবেলা।

আপনার মতামত লিখুন :