মেহেরপুরের আমঝুপি বিএডিসি খামারে সেলফি তোলার ভীড়!

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:01 PM, 21 February 2022

সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে আর কিছুটা সূর্যের মতো দেখতে সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ গোটা বিশ্বের ফুল প্রিয় মানুষ। শুধু ফুল হিসাবে নয়, তেলের অন্যতম উৎস সূর্যমুখী।
সেই ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় মেহেরপুরেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকেছেন এই ফুল চাষে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। একই সময়ে গতবছর চাষ করা হয়েছিল ৩ হেক্টর জমিতে। গাংনী উপজেলায় প্রদর্শণী হিসাবে ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। তবে মুজিবনগর উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়নি বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।

মেহেরপুর সদর উপজেলার ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন কারী খামার বিএডিসি আমঝুপি এবং গাংনী উপজেলার সাহারবাটী এলাকায় সূর্যমুখী চাষ নজরে পড়ার মতো। গতবারের তুলনায় এবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ কম হলেও যারা চাষ করেছেন, সূর্যমুখী চাষে সাফল্যের আশা জাগাচ্ছে সেসব কৃষকদের মনে। এবছর বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটীতে বারি সূর্যমুখী-৩ চাষ হয়েছে। অনুকুল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় ভাল ফলনের প্রত্যাশা করছে চাষি। বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করে ৩০-৩৫ হাজার টাকা ঘরে তুলতে পারবে বলে আশা করছে কৃষক।

গাংনীর সাহারবাটি গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে বানিজ্যিক ভিত্তিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এছাড়াও ছড়িয়ে ছিটিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। বীজ বপণের মাত্র ৩ মাসের মধ্যে বীজ ও তেল পাওয়া সম্ভব। দূযোর্গ সহনীয় হওয়ায় বারি ৩ জাতের সূর্যমুখী ফুল চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। মোশাররফ হোসেনের জমির সূর্যমূখী ফুলগুলো এখন ফলে রুপান্তরিত হচ্ছে। সূর্যমুখীর তেল পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ হওয়ায় এ অঞ্চলে এ তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া সূর্যমুখী তেলবীজ থেকে তেল নিস্কাসন করে নেবার পর এর থেকে খৈল তৈরী হয়। যা পশুর উৎকৃষ্ট খাবার হওয়ায় এরও ব্যাপক চাহীদা রয়েছে। গাছগুলোও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। মেহেরপুর সদর উপজেলার ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনকারী খামার বিএডিসি আমঝুপি এলাকায় প্রতিদিন শতশত দর্শনার্থীদের ভীড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ এলাকার বিস্তীর্ন মাঠ জুড়ে ফুটে আছে সূর্যমুখী। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার।
যেখানে শতশত ফুলপ্রেমী প্রতিদিন জড়ো হন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য দেখতে। যতদূর চোখ যায়, সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী।
এখানে সকাল থেকে সন্ধা অবধি মানুষের সমাগম লক্ষ্য করা গেছে।
দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে দর্শনার্থীরা মুঠোফোনে বন্দী করছেন প্রিয় মূহুর্তগুলো। সেলফি, গ্রুপ ছবিতো আছেই। আর সেই নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন সামাজিক মাধ্যমে।

গাংনী উপজেলা শহরের রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক পুষ্টিবিদ তরিকুল ইসলাম জানান, অন্যান্য তেলের তুলনায় সূর্যমুখী তেল পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। কোলেস্টেরল এর মাত্রা সামান্য, ভিটামিন এ,ডি ও ই রয়েছে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এ তেল যদি রাখা যায় তবে ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি পাবেন।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, সূর্যমুখীর তেল কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ প্রতিরোধ করে। স্বল্প সময়ে উৎপাদন হয়। লাভও বেশি। তাই এ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :