পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে মেহেরপুরের কৃষকরা

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  06:47 AM, 17 July 2022

পানির অভাবে পাট পচানো/জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাসের শুরুতেও জেলায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। কিছু সময় হালকা কিংবা মাঝারি বৃষ্টিপাত হলেও তা শুধুমাত্র ফসলের সেচ কাজের উপযোগী, পাট পচানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। আর সে কারণেই জেলার অধিকাংশ খাল-বিল, ডোবা এবং জলাশয়ে তেমন কোনো পানি নেই। যেটুকু পানি রয়েছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। আষাঢ় ও শ্রাবণে জেলার খাল-বিলে পানিতে ভরপুর থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ খাল-বিলই শুকনা, কোথাও হাটু কিংবা কোমর পানি থাকলেও জার্মানি কিংবা শেওলাতে পরিপূর্ণ।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অধিক জমিতে পাটের চাষ করেছেন কৃষকরা। পাটের ফলনও আশানুরূপ হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা। কিন্তু আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে তারা।
চাষিদের অনেকেই বৃষ্টিপাতের আশায় পাট কেটে জমির পাশে, কেউবা রাস্তার পাশে অথবা খাল-বিল বা ডোবার পাশে স্তুপ করে রেখে দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার খাল-বিল বা জলাশয় এর অল্প পানিতেই পাট পচানোর চেষ্টা করছেন। তবে অধিকাংশ চাষিকেই ডোবা কিংবা জলাশয়ে পাট জাগ দিয়ে পচানোর জন্য শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি দিতে দেখা গেছে।

জেলার গোভীপুর গ্রামের নাসিরুদ্দিন জানান, ২ বিঘা জমিতে পাট রয়েছে। ভৈরব নদীতে জাগ দিতে দেবেনা। অন্য কোথাও পানির কোন ব্যবস্থা নেই। পাট নিয়ে মহা মুশকিলে রয়েছি।
কালীগাংনী গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, এলাকায় পাট পচনের কোন জায়গায় নেই। খালও শুকনা। এমতবস্থায় কি যে করি।
মাইলমারী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারও কিছু জমিতে পাটের আবাদ করেছি কিন্তু যেখানে পচানো হয় সে জায়গাতে পানি না থাকায় অন্য আবাদের জন্য চাষ করা হয়েছে।
মাইলমারী গ্রামের অপর এক চাষি নাজমুল জানান, ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। ৩ বিঘা জমির পাট কেটে মাছ চাষের পুকুরে জাগ দেওয়া হয়েছে এবং মেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করছি। বাকি জমির পাট বৃষ্টি হলেই কাটাবো।
মালশাদহ গ্রামের আসাদুজ্জামান জানান, ৩ বিঘা জমির পাট কেটে জমির পাশে স্তুপ করে রেখে দিয়েছি কিন্তু আশেপাশের খাল-বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকায় পচান দিতে পারছিনা। লক্ষ্ণীনারায়ণপুর গ্রামের সুমন জানান, অন্যান্যবার পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকায় পাটক্ষেতের পাশে রাস্তার ধারেই পাট পচন দেওয়া হয়। কিন্তু এবছরে বৃষ্টিপাত না থাকায় ধলার মাঠে আবাদকৃত প্রায় সকল কৃষকই পাট নিয়ে বিপদে রয়েছে।
কাষ্টদহ গ্রামের আব্দুল্লাহ বলেন, ১৬ কাঠা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি না থাকায় এখনও পাট কাটতে পারিনি।
কল্যাণপুর গ্রামের সোহানুর রহমান জানান, পাট পচানোর জন্য পানির খুব সমস্যা, এখনো বুঝে উঠতে পারছিনা কোথায় জাগ দেওয়া যায়। একারণেই পাট কাটার অপেক্ষায় রয়েছি।
মাইলমারী গ্রামের আশাদুল ইসলাম জানান, কোথাও পানি না থাকায় পাট কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। বৃষ্টি হলে পুকুরে জাগ দেবো।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, যেহেতু বৃষ্টিপাত নেই। অনেকেই শ্যালো ইঞ্জিন কিংবা মটরের পানিতে পাট জাগ দিচ্ছেন। সে হিসেবে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়া হলে অল্প জায়গায় বেশি পাট জাগ দেওয়া সম্ভব। এতে করে পাটের গুনগত মাণও ভালো হবে এবং চাষিরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাবে বলে আশা করা যায়।

আপনার মতামত লিখুন :