কুষ্টিয়ায় নৌকায় ভোট দেওয়ায় সন্ত্রাসী হামলা, গুরুতর আহত দুই

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  03:07 PM, 06 April 2022

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেকয়া ইউনিয়নে একের পর এক সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, চুরি, ধর্ষণ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেই চলছে।

সোমবার ৪ মার্চ বেড়কালোয়া গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল আলম তারাবীর নামাজ পড়ে বাড়ি প্রবেশ করে । রাত ১১ টার দিকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ একাধিক মামলার আসামী একই এলাকার ইয়ারুল ও জিয়ার এর নেতৃত্বে প্রায় ১০০ জন বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে না পেরে ঘরের পাকা দেওয়াল ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে আশরাফুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি ভাবে কোপাতে থাকলে তার স্ত্রী সীমা খাতুন ঠেকাতে গেলে তাকেও কোপ দিয়ে গুরুতর ভাবে জখম করা হয়। নজরুল ব্যাপারী (৬৫)’র পুত্র আশরাফুল ব্যাপারী (৩৫) এবং পুত্রবধূ সিমা খাতুন (৩০) কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাদের অপরাধ ছিলো গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করা।

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার করিডোরে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে আশরাফুল ব্যাপারী এবং সিমা খাতুন । কর্তব্যরত চিকিৎসা তাদের কে একাধিক এক্সরে কারার জন্য জানিয়েছেন । আশরাফুল আলমের হাতে ও পায়ে ব্যান্ডেজ সহ সারা শরীর রক্তাক্ত এবং পিছে ১০ এর অধিক ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষতের চিহৃ রয়েছে । সিমা খাতুনের মাথায় ব্যান্ডেজ এবং সারা শরীর রক্তাক্ত । স্বজনরা ধারণা করছেন সিমা খাতুনের মাথা ফেটে গেছে । যার ফলে তার সারা শরীর রক্তে ভরে গেছে । এছাড়াও আশরাফুল ব্যাপারী ও সিমা খাতুনকে বেধড়ক মারপিটের কারণে তারা ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন ।

স্থানীয় ও আহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার ৪ মার্চ দিবাগত রাত ১১ টার দিকে একই এলাকার কেদু শেখের পুত্র ইয়ারুল ও জিয়ারুলের নেতৃত্বে শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্যাডার প্রথমে আশরাফুল আলমের মেয়ের রুমে প্রবেশ করে তাকে না পেয়ে অন্য ঘরের দরজা ভেঙ্গে আশরাফুল ব্যাপারী’র ঘরে প্রবেশ করে । আশরাফুল কোন কিছু বোঝার আগেই তাকে দেশীয় অন্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি ভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ।

আশরাফুলের স্ত্রী সিমা খাতুন স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে ইয়ারুল ও জিয়ারুল সহ তাদের ক্যাডার বাহিনীর লোকজন তাকেও বেধড়ক মারধর করে এবং তার মাথায় আঘাত হানে । এছাড়াও মারধরের সময় ঐ সস্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালিজ করে এবং জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

আশরাফুলের পরিবারের সদ্যদের ভাষ্য মতে, ঘটনাস্থলেই আশরাফুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । প্রায় ঘন্টা খানেক তান্ডব চালিয়ে ঐ সন্ত্রাসী বাহিনী আশরাফুলদের ঘরের লুটপাট করেন বলেও তারা জানান ।

আহত সীমা খাতুন জানান, প্রথমে প্রায় শতাধিক লোক ঘরের দরজার ভাঙ্গার চেষ্ট করে ব্যার্থ হয়ে, মেয়েদের ঘরে ঢুকে ওয়াল ভেঙ্গে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে । ইয়ারুল এমন ভাবে আমার মাথার উপরে আঘাত করছে যে আমি ছুটে গিয়ে ওয়ালের উপর পড়ে যায় । ইয়ারুল সহ চার/পাঁচ জন আমার স্বামীকে কুপাইছে । তাদের পায়ে ধরলেও তারা আমাদের ছাড়েনি ।

একই এলাকার দুলাল শেখের পুত্র জাহাঙ্গীর জানান, ইয়ারুল ও জিয়ারুল (জিয়ার) সকাল থেকে বিভিন্ন ভাবে আমাদের হুমকি দিচ্ছে । বাড়ীর মহিলাদের বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছে । তা না হলে তোদের অবস্থাও আশরাফুলের মত হবে বলে তারা হুমকি দিয়ে গেছে । রাতে ঘটনার সময় বাড়ীতে লুটপাট করেছে বলেও জাহাঙ্গীর জানান ।

আহত আশরাফুল জানান, আমাকে তো মেরেই ফেলে দিয়েছিলো । ইয়ারুল ও জিয়ারুলের কাছে বন্দুক ছিলো । আমাকে হকি স্টিক, হাসুয়া ও হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করেছে । গুণে শেষ করা যাবে না আমাকে কতজন মেরেছে ।

এই বিষয়ে জানতে ইয়ারুলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করার কারণে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ।

এই বিষয়ে কয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, হামলাকারীরা একাধিক মামলার আসামী। তারা বিএপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত এবং এলাকার চিহিৃত সন্ত্রাসী । বর্তমান চেয়াম্যানের ছত্রছায়ায় তারা এসকল অপকর্ম করে যাচ্ছে । আমি অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার সহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি ।

এই বিষয়ে কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আলী হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার সম্পাদককে বলেন এই ব্যাপারে চেয়ারম্যান কিছু জানে না ।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) তদন্ত আকিবুল ইসলাম জানান, খরব পাওয়া মাত্রই আমারা ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছি এবং রাতেই আহতদের চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে । এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দেই নাই । অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।

আপনার মতামত লিখুন :