গাংনী সাব-রেজিস্ট্রার : স্রোতের বিপরীতে একজন

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  04:16 PM, 27 January 2021

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করেন সাব-রেজিস্ট্রার মো. মাহফুজ রানা। ৩৭ তম বিসিএস থেকে আসা এই কর্মকর্তা প্রথমেই নজর দেন শুদ্ধাচার ও জনসেবা বৃদ্ধিতে।

একসময় অফিসটিতে সপ্তাহে ২ দিন রেজিস্ট্রি হওয়ার সংস্কৃতি বদলে দেন তিনি। এখন ৫ দিনই রেজিস্ট্রি সেবা পাচ্ছে মেহেরপুরের বৃহত্তম উপজেলা গাংনীর আপামর জনসাধারণ। অতিমারী করোনার ছোবল সামলাতে তিনি ভিড় কমাতে চালু করেন ডিজিটাল কিউ ম্যানেজমেন্ট। এতে করে সেবাগ্রহীতা ও মুসাবিদাকারক সেরেস্তায় বসেই দূর থেকে ইলেকট্রিক টোকেন ডিসপ্লে বোর্ডে দেখতে পান চলমান সিরিয়াল। কেউ বাদ পড়লে তাকে ডাকা হচ্ছে হ্যান্ডমাইকে। এতে ভীড় ও হয়রানি কমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়; জোরদার হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। কার্যালয়ের সামনে বসানো হয়েছে পাকা হাত ধোয়ার বেসিন।

শুধু তাই নয়, সেবাগ্রহীতাদের জন্য মাস্ক ও কর্মচারীদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান নিশ্চিত করতে তার সচেতন পদক্ষেপ চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে, কাজের বেগে এসেছে ক্ষিপ্রতা। কর্মচারীগণ ঠিক সময়ের পূর্বেই যার যার টেবিলে কাজে বসে যাওয়ার দৃশ্য এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার।

শুদ্ধাচার বলবৎ করতে কার্যালয় সম্মুখে বিলবোর্ডে সকল লেখকের ছবি, সনদ নম্বর, ইমেইল ও মোবাইল নম্বর শোভা পেতে দেখা যায়। সাথে আছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা, যোগাযোগ, নিবন্ধন প্রক্রিয়া, ফিসাদির তালিকা, নোটিশ ও টাউট দালালদের ব্যাপারে কড়া আইনি সতর্কবানী।

নান্দনিক বৈশিষ্ট্যে কার্যালয়টি একটি আদর্শ অবস্থানে উঠে এসেছে। কাজের পরিবেশ উন্নয়নে কার্যালয়ের সামনে বাগান করার উদ্যোগ এবারই প্রথম। পূর্বে অফিসটির উঠোন ছিলো বিরানভূমি; এখন তা বৃক্ষ ও পুষ্পরাজিতে শোভিত। বদলে দিয়েছেন আশির দশকে নির্মিত উপজেলা পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং এর ক্ষয়িষ্ণু দৃশ্যপট। জেলা গণপূর্তের কাছে যোগদান করেই ভবন সংস্কারের আবেদন করেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

একসময়ের ফ্যাকাশে, পলেস্তরা খসে পড়া ভবনে এখন লেগেছে সুন্দর রং, টাইলস, থাই গ্লাস ও সুরক্ষা গারদ। প্রয়োজনের তুলনায় স্থান স্বল্পতা দূর করতে উপজেলা পরিষদের কাছ থেকে ৪ টি রুম বরাদ্দ নিয়ে জায়গা করে দিয়েছেন নকল নবীশদের। আগে তারা বারান্দায় বসে কাজ করতো। সৌর বিদ্যুৎ ও রিচার্জিং লাইট বসিয়ে দেয়াতে বৃষ্টি বাদলা বা লোডশেডিংয়ে কলম থেমে থাকার দৃশ্য এখন শুধুই অতীত। নকলনবীশ, লেখক ও কর্মচারীরা পাচ্ছেন বিশুদ্ধ ফিল্টার পানি এবং পরিষ্কার শৌচাগার। মহিলাদের জন্য একটি কক্ষে নামাজের ব্যবস্থা করতেও নেয়া হচ্ছে পদক্ষেপ।

শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে কাগজপত্রের ব্যাপারে কোন ছাড় দিতে রাজি নন তিনি। এতে অনেকটাই বদলে গেছে দলিল লেখকদের মুসাবিদা চর্চা; দাতা গ্রহীতা ও সনাক্তকারীদের কাছ থেকে চাইছেন আসল কাগজপত্র। তার কার্যালয়ে এই প্রতিবেদক গিয়ে ২০২০ সালের রাজস্ব সংগ্রহের তথ্য জানতে চাওয়া হলে তিনি সবিস্তারে সবকিছু জানান।

করোনায় সারাদেশের মতো গাংনী রেজিস্ট্রি অফিস ৪ মাস বন্ধ থাকলেও মোট দলিল হয় ৯২৪৮ টি। রেজি ফিস আদায় হয় ৳ ১৭৩৬৩১৬৩ এবং স্ট্যাম্প শুল্ক ৳ ১৮৯৯৫৯৫৫। স্থানীয় সরকার কর ও উৎস কর আদায় হয় যথাক্রমে ৳ ৩২৩৫৪৯১০ ও ৳ ১১৮৯৩৭৮৫। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে এই পরিমান স্থানীয় সরকার কর জমা দিয়েছে গাংনী রেজিস্ট্রি অফিস।

তাকে এই কার্যালয় নিয়ে ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা আছে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, “মুজিব বর্ষ স্মারক একটি মুজিব ছায়াকুটির তৈরির ইচ্ছেটা অনেকদিনের।

কার্যালয় এর সামনে এই কুটিরের ছায়াতলে সেবাগ্রহীতা যেন দাঁড়াতে পারে, গণশুনানী করা যায় এবং ক্লান্তি দূর করতে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে এজন্যেই কুটিরটি নির্মাণ করতে চাচ্ছি। সাধ আছে সাধ্য নেই। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলেই এই কাজে হাত দেবো। যেহেতু মুজিব-বর্ষের সময় বাড়ানো হয়েছে, তাই এখনো সময় আছে। জনগণের কর্মচারী হিসেবে ও জাতির পিতার সম্মানে এটুকু করা শুধু স্বপ্ন নয়, আমার দায়িত্ব।”

আপনার মতামত লিখুন :