কুষ্টিয়ায় আরও ১৮ জনের মৃ’ত্যু !! শনাক্ত-১৭৬

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:28 AM, 10 July 2021

করোনা সংক্রমণের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায় প্রথম কুষ্টিয়া। জুন মাসে পুরোটাই কুষ্টিয়ায় করোনা দাপট ছিল। অস্বাভাবিক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে কুষ্টিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে করোনা সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। কুষ্টিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে টানা ২৮ দিন ধরে কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন চলমান থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি, বরং দিন দিন তা ভয়াবহ অবস্থার রূপ নিয়েছে। গত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনায় ১৫ জন ও উপসর্গে ৩ জন মারা গেছেন।

শনিবার (১০ জুলাই) সকালে সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.তাপস কুমার সরকার,এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এদের মৃত্যু হয়েছে।

জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ছয় দিনে প্রথমবার শনাক্তের সংখ্যা দুইশ’র নিচে নামলো। তবে আগের দিনের তুলনায় শনাক্তের হার দুই বেড়ে ২৯.৮৮ শতাংশ হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। শনাক্তদের মধ্যে সদরে ৯৭ জন আর ভেড়ামারায় ৩৭ জন রয়েছেন।

গত ৭ দিনে কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ৭৭৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এই ৭ দিনেই এখানে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩২৫ জনের মৃত্যু হলো। মোট শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৬১ জন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ এস এম মুসা কবির বলেন, জুলাই মাসজুড়ে করোনা শনাক্ত ও মৃতের হার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। তবে সচেতন হলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব। গ্রামের মানুষকে বেশি সচেতন হতে হবে। কেননা, ভর্তি রোগীর বেশির ভাগই গ্রাম থেকে আসছে। মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যেও গ্রামেরই বেশি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, জেলার সর্বত্র করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট জনিত কারণে এমনটা হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এখন করোনার প্রকোপ বেশি। গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা খুব কম। করোনার উপসর্গ নিয়ে দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসা এবং দীর্ঘদিন বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগার কারণে ৫০ বয়সোর্ধ্বদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনে হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৮-১০ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জুনে করোনার দাপট বাড়বে, এমন একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। তবে এতটা হবে, সেটা কল্পনার বাইরে ছিল। মানুষকে সচেতন করা ছাড়া আর করোনা মোকাবিলার কোনো পথ নেই।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি করা হচ্ছে। সবার কাছ থেকে লকডাউন কার্যকর করতে সহযোগিতা পাচ্ছি।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহের জন্য কুষ্টিয়ায় চলমান লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বিধি নিষেধ বা লকডাউন চলবে। এ সময় ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া বাকি সব ধরনের দোকান, শপিংমল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :