মেহেরপুরে কবি নজরুল স্কুলে শহীদের চিহ্ন হারিয়ে যাচ্ছে, জ্বল জ্বল করছে রাজাকারের চিহ্ন

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:02 AM, 31 March 2022

মেহেরপুর শহরের কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিল স্কুলমাঠের এক কোনে সমাহিত আছেন মুক্তিযুদ্ধে অকুত ভয় সৈনিক শহীদ হামিদ।  সেই কবরের চিহ্নটি বিলীনের পথে। কবরটি দেখলে মনে হবে পুরাতন ইট শুড়কির স্তুফ। কবরটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কিংবা জেলা প্রশাসনের কেউ। শহরে  তার নামে একটি স্মৃতিফলক ছিল, মেহেরপুর পৌরসভা সেখানে মার্কেট নির্মাণ করেছে।

১৯৭১-এ মেহেরপুর তখন থমথমে পরিবেশ। মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি হানাদারদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শহরের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো ও গোপনে লিফলেট বিলি করা হচ্ছিল আবদুল হামিদের নেতৃত্বে। ৩ ডিসেম্বর দুপুরে বাবা-মাসহ ভাই-বোনদের নিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন হামিদ। সে সময় স্থানীয় শরীফ বিহারির নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি হানাদার সেনা শহরের হাইস্কুল পাড়ায় হামিদের বাড়িতে হানা দেয়। বাবা-মায়ের সামনেই হামিদকে তুলে পিছমোড়া করে বেঁধে ট্রাকে করে নিয়ে যায় সরকারি কলেজের সেনাক্যাম্পে। অমানুষিক নির্যাতনের পর ওইদিনই হত্যা করে।  স্বজনেরা লাশের সন্ধান পেয়ে কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিল প্রাঙ্গণের এক কোণে সমাহিত করেন। অদম্য সাহসী, নাট্যাভিনেতা, সংস্কৃতিসেবী শহীদ আবদুল হামিদের জন্ম ১৯৫৪ সালে মেহেরপুর শহরের গভর্নমেন্ট হাইস্কুলসংলগ্ন সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বাবা মরহুম আবদুর রশীদ ছিলেন ব্যবসায়ী, মা মরহুম হাদিসা বেগম ছিলেন গৃহিণী।

স্বাধীনতা পরবর্তী স্থানীয় তরুণ যুবকরা মেহেরপুর শহরের কাঁসারি বাজার মোড়ে শহীদ হামিদের নামে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করেছিলেন। ২০০১ সালে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান মোতাছিম বিল­াহ মতু কাঁসারিপাড়া মোড়ে মার্কেট নির্মানের সময় স্মৃতিফলকটি গুঁড়িয়ে দেন। তবে পৌরসভার পক্ষে মলি­কপাড়া মোড় থেকে কাঁসারিবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কটি শহীদ আবদুল হামিদের নামে নামকরণ করেন। ওই সড়কের নামেই হামিদকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।

শহীদ এই মুক্তিযোদ্ধা হামিদের ভাই আবদুস সালাম বলেন ‘আমার ভাইয়ের কবর রাষ্ট্রের সম্পদ। রাস্ট্র কীভাবে রাখবে সেটা রাষ্ট্রই ভালো জানেন’।

মেহেরপুর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ ও ইতিহাসবিদ আব্দুল আল আমিন বলেন. ভাবতেই অবাক লাগে স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পর ঐ বিদ্যালয়ে পিচ কমিটির সভাপতি সাফদার আলির ছবি জ্বল জ্বল করছে আর একজন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি চিহ্ন মুছে যাচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মালেক বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে । দ্রুত এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মাহবুবুল হক মন্টু বলেন- ঘুরে ফিরে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা হয়, স্বাধীনতা বিরোধীদের ওই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়, অথচ একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হয় না এটা জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জার। উন্নয়নের জোয়ারে একটি কবর সংরক্ষণ করা হয় না ভাবতেই কষ্ট হয়।

কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলের প্রধান শিক্ষক সানজিদা ইসলাম লাবনী বলেন-  ওটাযে কোন মুক্তি যোদ্ধার কবর আমার জানাই ছিলোনা। পরে আমি জেনেছি কিন্তু আমাদের বাজেট না থাকায় কবরটি মেরামত করতে পারিনি।

 

আপনার মতামত লিখুন :