সূচনা শুভ, কাশ্মীরে বিশ্বাসের ঘাটতি মিটবে কি

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:25 PM, 27 June 2021

 

palo-logo

By using this site, you agree to our Privacy Policy.

OK

 

 

কলাম

মতামত

সূচনা শুভ, কাশ্মীরে বিশ্বাসের ঘাটতি মিটবে কি

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২১, ১৯: ০০

অ+

অ-

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদি

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদি

রাজনীতিতে সম্ভাবনার দরজা সব সময়ই হাট করে খোলা। এ কারণেই বলা হয়, রাজনীতিতে যতিচিহ্ন নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কাশ্মীর উপত্যকার রাজনৈতিক নেতারা আরও একবার এর প্রমাণ দিলেন।

 

২৪ জুন অপরাহ্ণে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ছবি ওই যতিহীন ভারতীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মহিমার এক চমৎকার নিদর্শন। জম্মু-কাশ্মীরের দ্বিখণ্ডীকরণ ও সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ হওয়ার পর অগুনতি রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে রাজ্যের তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে বন্দী করা হয়েছিল। ২২১ থেকে ৪৩৬ দিন পর্যন্ত বন্দী থাকা সেই তিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি অনেক কিছুর সঙ্গে এটাও বুঝিয়ে দিল, রাজনীতির প্রবাহ সব সময় ভিন্ন। দুবছর আগের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে রাজ্যজুড়ে দেখা দিয়েছিল ক্রোধ ও ক্ষোভের ভিসুভিয়াস। সরকারের ‘দমন-পীড়ন’ নীতি আন্তর্জাতিক স্তরেও ঢেউ তুলেছিল। সরকার কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। ধীরে অথচ নিশ্চিতভাবে এগিয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও দুবছরের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম আহ্বানে কাশ্মীরি নেতাদের বৈঠকে বসা ও সাড়ে তিন ঘণ্টা সংলাপের পর অধিকাংশের ‘নিশ্চিত মনে’ ঘরে ফেরা প্রমাণ করে, কোনো অবস্থানই চিরন্তন নয়। এ–ও প্রতিপন্ন হলো, গণতন্ত্রে সংলাপই আসল।

 

palo-logo

By using this site, you agree to our Privacy Policy.

OK

 

 

কলাম

মতামত

সূচনা শুভ, কাশ্মীরে বিশ্বাসের ঘাটতি মিটবে কি

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২১, ১৯: ০০

অ+

অ-

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদি

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদি

রাজনীতিতে সম্ভাবনার দরজা সব সময়ই হাট করে খোলা। এ কারণেই বলা হয়, রাজনীতিতে যতিচিহ্ন নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কাশ্মীর উপত্যকার রাজনৈতিক নেতারা আরও একবার এর প্রমাণ দিলেন।

 

২৪ জুন অপরাহ্ণে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ছবি ওই যতিহীন ভারতীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মহিমার এক চমৎকার নিদর্শন। জম্মু-কাশ্মীরের দ্বিখণ্ডীকরণ ও সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ হওয়ার পর অগুনতি রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে রাজ্যের তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে বন্দী করা হয়েছিল। ২২১ থেকে ৪৩৬ দিন পর্যন্ত বন্দী থাকা সেই তিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি অনেক কিছুর সঙ্গে এটাও বুঝিয়ে দিল, রাজনীতির প্রবাহ সব সময় ভিন্ন। দুবছর আগের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে রাজ্যজুড়ে দেখা দিয়েছিল ক্রোধ ও ক্ষোভের ভিসুভিয়াস। সরকারের ‘দমন-পীড়ন’ নীতি আন্তর্জাতিক স্তরেও ঢেউ তুলেছিল। সরকার কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। ধীরে অথচ নিশ্চিতভাবে এগিয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও দুবছরের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম আহ্বানে কাশ্মীরি নেতাদের বৈঠকে বসা ও সাড়ে তিন ঘণ্টা সংলাপের পর অধিকাংশের ‘নিশ্চিত মনে’ ঘরে ফেরা প্রমাণ করে, কোনো অবস্থানই চিরন্তন নয়। এ–ও প্রতিপন্ন হলো, গণতন্ত্রে সংলাপই আসল।

 

 

প্রধানমন্ত্রীর আচরণও এ দেশের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য! ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পর মোদি বলেছিলেন, উপত্যকার রাজনীতিকে তিন পরিবারের (আবদুল্লাহ, সাঈদ ও গান্ধী) মুঠো থেকে মুক্ত করে সাধারণের হাতে তুলে দিতে চান। জোটবদ্ধ রাজনীতিকদের তীব্র শ্লেষে ‘গুপকর গ্যাং’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। বলেছিলেন, ওঁরাই ভিলেন। তারপরও তাঁদের বৈঠকে ডাকা বুঝিয়ে দেয়, আবদুল্লাহদের ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি), সাঈদদের পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) ও গান্ধীদের কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কাশ্মীরের রাজনীতি অসম্ভব। কাশ্মীরকে ‘সংঘাতের এলাকা’ থেকে ‘শান্তির অঞ্চল’ করতে গেলে এদের সাহচর্য ও সহযোগিতা দরকার। সে কাজ বিজেপি ও তার মদদে গড়ে তোলা আপনি পার্টির একার কম্ম নয়।

 

সেই নিরিখে সরকারের এই বোধোদয় ও প্রচেষ্টা দেরিতে হলেও প্রশংসনীয়। তবে লক্ষ্যপূরণে এখনো অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’র ছড়াছড়ি।

সেসব নিয়ে কথার আগে আলোচনার তাগিদ ও ‘টাইমিং’টা দেখা জরুরি। কাশ্মীরের এই নবপর্বের বয়স ঠিক তিন বছর। ২০১৮ সালের জুন থেকে রাজ্যে চলছে কেন্দ্রের শাসন। বৈশ্বিক দুনিয়ায় কাশ্মীর আলোচিত নানা কারণে। ট্রাম্প প্রশাসনে মোদি যতটা নিশ্চিত ছিলেন, বাইডেনের আমলের ছবি তার বিপরীত। কাশ্মীর নিয়ে চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে ভারতকে সতর্ক করছে। ভারত ও পাকিস্তানের গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক বোঝাপড়া বাড়াতে তারা সচেষ্ট। কেননা, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নির্বিঘ্ন করতে উপমহাদেশে শান্তি থাকা জরুরি। বাইডেন চান না, সেনা প্রত্যাহারের সময় আফগানিস্তান ফের উত্তপ্ত হোক এবং অশান্ত কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াক। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবে ভারত ও পাকিস্তানের ‘ব্যাক চ্যানেল ডিপ্লোমেসি’ চলছে। কাশ্মীর বৈঠকের ঘণ্টা কয়েক আগে তাজিকিস্তানে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের মঞ্চে হাজির ছিলেন পাকিস্তান-ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা। অন্যদের সঙ্গে তাঁরা সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ বিবৃতিতে সইও করেন। আজ রোববার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। টাইমিং বোঝাচ্ছে, কাশ্মীরি নেতাদের বৈঠকে ডাকার তাগিদটা কোথায়।

তাগিদ উল্টো দিকেও। তিন বছর ধরে রাজনীতিহীনতায় কাশ্মীরি নেতারাও হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। ৩৭০ খারিজের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আনা মামলাগুলোর শুনানি এখনো সুপ্রিম কোর্টে শুরুই হয়নি। দুবছর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ সব মামলা পাঠিয়ে দেন সাংবিধানিক বেঞ্চে। সেই থেকে তিনজন প্রধান বিচারপতি কাজের মেয়াদ শেষ করেছেন। শুনানি এগোয়নি। সিদ্ধান্ত রূপায়ণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালত স্থগিতাদেশও দেননি। মামলাগুলো কত দিন পড়ে থাকবে, কেউ জানে না। অথচ সরকার যা কিছু করণীয়, করেই চলেছে। বিনা বাধায়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান কাশ্মীরি নেতাদের প্রাসঙ্গিক থাকার সুযোগ এনে দিল। সুযোগটা হাতছাড়া করা তাঁরা বিবেচকের কাজ মনে করেননি।

 

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়েছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হবে না। বলেছেন ‘বিষয়টি বিচারাধীন’। অতএব আলোচনার অবকাশ নেই। এ–ও বুঝিয়েছেন, সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য নির্বাচন কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাস বা ‘ডিলিমিটেশন’ প্রক্রিয়া শেষ করা। তারপর বিধানসভার নির্বাচন। পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফেরাতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা–ও বলেছেন। ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিএম ও কংগ্রেস আবার চায় আগে পূর্ণাঙ্গ রাজ্য, তারপর ভোট। দেশের সর্বত্র ডিলিমিটেশনের কাজ শেষ করার কথা ২০২৬ সালে। তাঁরা চান কাশ্মীরেও তখনই হোক। আপাতত রেষারেষি এ নিয়েই।

আপনার মতামত লিখুন :