‘সংগ্রাম, সাহসিকতা ও সমৃদ্ধির প্রতীক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা’

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  06:11 AM, 12 October 2021

লেখকঃমোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা, খুলনা।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ৭৪ তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তান আন্দোলনের সাহসী ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর ঘর আলোকিত করে টুঙ্গিপাড়ার নিভৃতপল্লীতে জন্ম হয়েছিল শেখ হাসিনার। দাদার বাড়িতে জন্ম নেওয়া সেই ছোট্ট শিশু হাসু আজকের সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। জন্মের সময় বাবা শেখ মুজিবুর রহমান লেখাপড়ার কারনে ছিলেন কলকাতায়। রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বাঙালি মুসলমানদের অধিকার আদায়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, টেলিগ্রাম মারফত নিজের প্রথম কন্যা সন্তানের জন্মের খবর পেয়েও আসতে পারেন নি। এসেছিলেন প্রায় এক মাস পরে।
সদ্য স্বাধীন হওয়া পাকিস্তান রাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনার জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। বসতে শেখার আগেই শিশু শেখ হাসিনাকে ৫ মাস ১৪ দিন বয়সে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হতে হয়! ১৯৪৮ সালের ১১ ই মার্চ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হন শিশু শেখ হাসিনার পিতা। ৫ দিন জেল খাটার পর মুক্তি পান তিনি। এরপর কখনো ভাষার জন্য, কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য আবার কখনো বা পূর্ব বাংলায় দূর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বারবার পিতা মুজিবকে জেল খাটতে দেখেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তখন কেবলই এক অবুঝ শিশু। অতপর ‘৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৫২ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৭ মাস বয়সী শেখ হাসিনার জন্য টানা ২৬ মাস পিতা মুজিবের জেলজীবন ছিল এক মস্ত বড় ধাক্কা। কেবল পিতাকে চিনতে শেখা, বাবা বলে ডাকতে শেখা শেখ হাসিনার জীবন সংগ্রাম সেই যে শুরু, আজ অবধি শেষ হয় নি।
ইডেন কলেজের জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে কলেজ ছাত্রীসংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন তখনো পিতা মুজিব কারাগারে বন্দি। ১৯৬৭ সালে পিতা মুজিব জেলে অন্তরীণ অবস্থায় ১৭ ই নভেম্বর ডক্টর এম ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয় শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭১’র  ২৭ শে জুৃলাই হানাদার বাহিনীর  নিরাপত্তা প্রহরীর নজরদারীতে থাকা অবস্থায় পুত্র সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রসব! তখন ও পিতা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হিসেবে বন্দী। জীবন সংগ্রাম যেন কিছুতেই তার পিছু ছাড়ে না। ১৫ ই আগস্ট পিতামাতা সহ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ডের পর বিদেশে ৬ বছর অনেক  সংগ্রাম করে নির্বাসনের  জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে তাকে।
কথিত আগামির রাষ্ট্রনায়ক জীবন বাঁচাতে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে গিয়ে পলাতক জীবন বেছে নিয়েছে। আপন ছোট ভাইয়ের অকাল মৃত্যু,  গর্ভধারিণী মায়ের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়া কিংবা চরম অসুস্থতায় ও দেখতে আসার মত সৎ সাহস হয়  নি তার। সরকার চাইলেও তিনি দেশে আসেন নি। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা পিতামাতা সহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হারিয়েও সাহস হারান নি।অবৈধ সামরিক শাসক, খুনীদের পৃষ্ঠপোষক জেনারেল জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৭ ই মে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বীরের বেশে দেশের মাটিতে ফিরেছেন ৮১ সালের সম্মেলনে আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর। বঙ্গবন্ধুর রক্তের যোগ্য উত্তরসুরির সাথে অন্যদের পার্থক্য এখানেই।
সেদিন বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকারি বাধা মোকাবিলা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার সেদিন শেখ হাসিনাকে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করতে দেয় নি। রাস্তায় বসে শেখ হাসিনাকে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পড়তে হয়েছে। সেদিন থেকেই শেখ হাসিনার গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু। দীর্ঘ ১৫ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে প্রথম বারের মত রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হন বঙ্গবন্ধুর রক্তের যোগ্য উত্তরসুরি শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে মোসতাক-জিয়ার করা কালাকানুন ‘ইনডেমনিটি আইন’ বাতিল করে দেশ এবং জাতির ললাট থেকে কলঙ্ক মোচন করেন। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার বিচার। দেশে ফিরে আসে আইনের শাসন। ১৯৯৬ সালের ১২ ই ডিসেম্বর গঙ্গানদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে ভারতের সাথে ‘গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি’ সম্পাদন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
১৯৯৭ সালের ২ রা ডিসেম্বর ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছরের অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনেন। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরুপ  ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক “হুপে- বোয়ানি” শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালে শান্তি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পুরস্কার’ পান বঙ্গবন্ধু কন্যা।
খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। ১৯৯৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা তাকে ‘দ্যা সেরেস মেডেল’ প্রদান করে। ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতিপ্রাপ্তি শেখ হাসিনা সরকারের কুটনৈতিক সাফল্যের ফসল। তার সরকারের এসব অর্জন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরে যাওয়া বাংলাদেশে তার যোগ্য নেতৃত্বে আবার ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ২০০১ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতার মেয়াদ শেষে সাংবিধানিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নজির সৃষ্টি করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্থূল ভোট কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
খালেদা-নিজামীর নেতৃত্বে দেশ দূর্নীতি  আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। পাঁচ বার দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় মদদে ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় নারকীয় গ্রেনেড হামলা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সহ আওয়ামীলীগের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে আওয়ামীলীগকে চিরতরে নেতৃত্বশূন্য করা। রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। এ ধরণের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। খালেদা-নিজামীর জোট সরকার মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। জনমতকে উপেক্ষা করে ভূয়া ভোটার সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের নিয়োগকৃত বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটি যেনতেন নির্বাচন করে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতা বহাল রাখার দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকে তৎকালীন সরকার।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গড়ে ওঠে দূর্বার গণআন্দোলন। গণআন্দোলনে ভেস্তে যায় যেনতেনভাবে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা। ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত ১/১১ সরকার। শুরু হয় বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়। পুনরায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে কারামুক্ত করে ওয়ান ইলেভেন সরকারকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হয়। ইতিহাসের নজিরবিহীন নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পাবনার রুপপুরে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সহ অনেক মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ফোর লেন, ঢাকা-রংপুর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা-সিলেট সিক্স লেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সহ অসংখ্য মেগা প্রকল্পের কোনোটি সম্পন্ন হয়েছে আবার কোনোটি চলমান। শিক্ষা, যোগাযোগ, কৃষি সহ সকল ক্ষেত্রে  শেখ হাসিনার টানা তিনবারের রাষ্ট্রক্ষমতার মেয়াদে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালে ৩৬,১৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ করেছিল। পরবর্তীতে আর কোনো সরকার এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। শেখ হাসিনার সরকার দীর্ঘবছর পর একসাথে ২৬,১৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে। ২০১০ সাল থেকে ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন শিক্ষামাতা শেখ হাসিনা।
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সনদের ব্যবস্থা করেছেন ‘কওমি জননী’ শেখ হাসিনা। সারাদেশে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ নির্মাণ করে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
দেশের ৩৭ টি সরকারি মেডিকেল কলেজের ২০ টিই শেখ হাসিনা সরকারের টানা তিন মেয়াদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ১ টি সরকারি ও ৫ টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সবকয়টি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত! দেশের ১৭ টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ টিই শেখ হাসিনার টানা তিন মেয়াদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের সফল কুটনৈতিক তৎপরতায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতের কাছ থেকে বঙ্গোপসাগরের ১৯,৪৬৭ বর্গকি.মি এবং মায়ানমারের কাছ থেকে ১ লক্ষ ১১ হাজার বর্গকি.মি সমূদ্রসীমার অধিকার অর্জন করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য সমূদ্র সীমা বিজয় এক বিশাল অর্জন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ‘ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের সমস্যার সমাধান করে কুটনৈতিক সফলতার পরিচয় দেন বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার। এর ফলে ৬৮ বছরের পরিচয়হীন, রাষ্ট্রহীন ছিটমহলবাসী নাগরিকত্ব লাভ করেন।
শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তি রক্ষায় ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের ৬৬ তম অধিবেশনে আন্তর্জাতিক শান্তি মডেল উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রশংসিত হন। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ আজ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। মহাকাশে এখন আছে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। এসব অর্জনের সুফল ভোগ করছে দেশের ১৬ কোটি মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্ব দানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন।
মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা প্রায় ১০ লক্ষ অসহায় রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত হন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং মানবিকতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশীপ’ পদক পান।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সুদূরপ্রসারী কাজের জন্য পলিসি লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। পাশাপাশি একই বছরে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন তিনি। ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে তার সরকারের বিশেষ ভূমিকার জন্য শেখ হাসিনা ‘ট্রি অব পিস’ পদক পান। তথ্য-প্রযুক্তি সেবার সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য খাতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তিনি দু’বার সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি’  পুরস্কারে ভূষিত হন।
নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পদক প্রদান করে।
টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্কটল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, রাশিয়া, এবং ফ্রান্স সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান এবং বিভিন্ন সম্মাননা পদকে ভূষিত করেছে বিভিন্ন সময়ে। এই অর্জন বঙ্গবন্ধু কন্যার একার নয়, এই অর্জন ১৬ কোটি বাঙালির।
রাষ্ট্র পরিচালনায় শুধু নয়, বরং বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটের রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবিলা  এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শক্ত হাতে  প্রতিহত করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। নিজ দল ও সরকারের দূর্নীতিবাজ নেতা, এমপি, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি। ১৯৮১-২০২১ দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। বারবার তার উপর গ্রেনেড, গুলি, বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালির দীর্ঘ আকাঙ্খিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশ ও জনগণের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। যখন গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে লিখছি- ঠিক এক সপ্তাহ আগে জাতিসংঘ কর্তৃক ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ এ ভূষিত হয়েছেন তিনি। এভাবে বারবার তিনি যেমন সম্মানিত হয়েছেন তেমনি দেশকে বিভিন্ন অর্জনে করেছেন সমৃদ্ধ। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ ও জাতি এভাবে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করুক! আল্লাহ্ তাকে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু দান করুক!

আপনার মতামত লিখুন :