মেয়েদের কপালে টিপ পরা প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  06:33 PM, 04 April 2022

নিজেকে সাজাঁতে বেশিরভাগ সময়ই মেয়েরা বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। সাঁজার এই উপকরণগুলোর মধ্যে টিপ অন্যতম। কপালে টিপ না পরলে হয়তো সাজাঁটা পূর্ণতা পায় না।

কিন্তু কপালে টিপ পরার ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলছে? পবিত্র ইসলাম ধর্মে মেয়েদের কপালে টিপ পরাকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ অতীতকালে সমাজে যারা অনৈতিক কার্যকলাপ করত তারা কপালে টিপ পরিধান করত।

এছাড়াও এর পেছনে একটি কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। মুসলিম জাহানের পিতা হযরত ঈবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ ৮ মাইল পরিমাণ জায়গা আগুন জ্বালালো (নাউযুবিল্লাহ) তখন একটা নতুন সমস্যা দেখা দিল নমরুদ বাহিনির জালানো আগুন নিয়ে। আগুনের উত্তাপ এতই বেশি ছিল যে তার কাছে পৌছানো যাচ্ছিল না। তাই একটা চরক বানানো হল যার মাধ্যমে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে দূর থেকে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়।

কিন্তু রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না। তখন শয়তান এসে নমরুদকে কুবুদ্ধি দিয়েছিল যে, সমাজে যারা অনৈতিক কার্যকলাপ করে এমন কয়েকজন মেয়ে এনে চরকের সামনে বসিয়ে দিতে, কারণ এ অবস্থায় রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা থাকতে পারবেন না। তাই করা হলো এবং ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চলে গেলেন, আর ঠিক তখনি তারা মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে আগুনে নিক্ষেপ করতে সক্ষম হলো।

কিন্তু আগুন আল্লাহ্ পাক উনার হুকুমে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে জালানোর বদলে ফুলের বাগান হয়ে গেলো, পরবর্তিতে ঐ মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হল যে পতিতা মেয়েদের কারণে রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চরক ছেড়ে দূরে সরে গিয়েছিলেন, এবং তাদের মাথায় তীলক পরানো হল। যেটা এখন আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত যা মেয়েরা নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে ব্যবহার করে যা সম্পূর্ণ হারাম।

অতএব যারা বলে যে, মহিলাদের সৌন্দর্য সব জায়গায় এবং এই দোহাই দিয়ে টিপ কে নিজেদের জন্য বৈধ মনে করেন, তারা যুগযুগ ধরে নিজেদের কোন পরিচয় বহন করছেন তা একবার ভেবে দেখবেন? অশ্লীল পরিচয় বোঝানোর জন্য যে টিপ ব্যবহার করা হত, তা আজ আমাদের উপমহাদেশে ফ্যাশন। অতএব যারা বলে— মহিলাদের সৌন্দর্য সব জায়গায় এবং এই দোহাই দিয়ে টিপকে নিজেদের জন্য বৈধ মনে করেন, তারা যুগযুগ ধরে নিজেদের কোন পরিচয় বহন করছেন তা একবার ভেবে দেখবেন? পতিতার পরিচয় বোঝানোর জন্য যে টিপ ব্যবহার করা হত, তা আজ আমাদের উপমহাদেশে ফ্যাশন! ওহে! মুসলিম নারীরা, এই সত্য কথাটা জানার পর ও কি আপনি আপনাদের কপালে টিপ পড়বেন?? এছাড়া কপালে টিপ দেয়া বিধর্মীয় সাংস্কৃতিক রীতিতে পরিণত হওয়ায় তা বিধর্মীয় সাথে সম্পৃক্ত হিসাবেই গন্য হয়। আর বিধর্মীয় সংস্কৃতি সম্পৃক্ত কোন বিষয় কোন মুসলমানের জন্য গ্রহন করা জায়েয হতে পারে না । কারো কাছে তা ভাল লাগলে মনে করতে হবে এ ব্যাপারে তার রুচিবোধ নষ্ট হয়ে গেছে ।

তাই স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য ও কপালে টিপ দেয়া যাবে না । কোনো স্বামী এমনটা চাইলে তাকে বুঝিয়ে এ অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে হবে । তথ্যসূত্র : তাফসীরে মা-রেফুল কুরআন, হযরত ইবরাহিম (আঃ) মূলগ্রন্থ, তাবারী, তারীখ, ১খ, ১২৩-১২৪; ছালাবী, আদি গ্রন্থ, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠাঃ ৮১, আদি ইসলামী ইতিহাস, ইবনে কাসীর গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান

 

 

কপালে টিপ পরা ও সাজ সজ্জা করা

আবূসামীহা

আল্লাহ, সুবহানাহু ওয়া-তা‘আলা সুন্দর ও তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। তিনি সৌন্দর্যোপকরণগুলো তাঁর বান্দাহদের জন্য হালাল করেছেন। তিনি বলেছেন [তাঁর কালামের তরজমা]ঃ আপনি বলুন, “কে হারাম করল আল্লাহর দেয়া সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্যবস্তুসমূহকেও?” আপনি বলুনঃ “এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে।” [কুর’আন, ৭:৩২]। তবে এই সৌন্দর্যোপকরণ আল্লাহর দেয়া ও নবীর [ﷺ] দেখানো নির্দিষ্ট সীমার ভেতরে থেকেই ব্যবহার করতে হবে।

কিছু মুসলিমদের কাছে নিজেদের কামনা-বাসনার অনুসরণ তাদের নবীর [ﷺ] শিক্ষার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। এদের মধ্যে অজ্ঞতা আছে, সাথে আছে একগুঁয়েমী। অজ্ঞতা থাকা খারাপ কিছু না। সবাই একই সময়ে সব কিছু জানবে তা সম্ভব না। তাই মুসলিম জানার চেষ্টা করবে অজ্ঞতা দূর করার জন্য। কিন্তু নিজের অজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে নিজের খেয়াল-খূশী বা বাসনার অনুসরণ করা বিশ্বাসীর বৈশিষ্ট না। এজন্য আল্লাহ সাবধান করেছেনঃ “আপনি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছেন যে তার কামনা-বাসনাকে/খেয়াল-খূশীকে [হাওয়া/desire] ইলাহ [উপাস্য] হিসেবে গ্রহণ করেছে?” [কুর’আন, ৪৫: ২৩] আমাদের দীন কারো ভাল-লাগা বা না-লাগা অথবা খেয়াল-খূশীর উপর নির্ভর করে না। দীনের ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহর [ﷺ] সুন্নাহ।

কপালে টিপ পরা সনাতনী হিন্দু ধর্মীয় একটা সংস্কৃতি। কিন্তু শহুরে শিক্ষিত ও কিছুটা ধর্মহীন বাঙালী মুসলিম মহিলাদের মধ্যে ইংরেজ শাসনামলের শেষদিকে এসে এই সংস্কৃতি বাসা বাধতে থাকে। আর এখনতো এটা বাংলাদেশি মুসলিম মহিলাদের বেশিরভাগের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। ইসলামপন্থীদের একদলের মধ্যেও এই পরধর্মীয় সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার জন্য বাতিক চেপেছে। তারা নিজেদের অজ্ঞতার কারণে জানার আগ্রহ না দেখিয়ে বরং অজ্ঞতাপ্রসূত বিষয়টাকে বৈধ হিসেবে গ্রহণ করে নিতে চাইছে।

বেশ কিছুদিন আগে একজন ভাই ফেইসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন এই বিষয়ে। সেখানে আমি কয়েকটা মন্তব্যের জবাব দিয়েছিলাম। সেগুলোকেই এখানে একসাথে পোস্ট হিসেবে পেশ করছি।

মূল পোস্টকারীর কথাঃ

টিপ নাকি পড়া যাবে না, এটা নাকি এককালে দেহপসারিনীদের প্রতীক। এদিকে লিপস্টিকও দেয়া যাবে না। পশ্চিমে নাকি একসময় এটাও দেহপসারিনীদের প্রতীক।

তাহলে তো নামাজও পড়া যাবে না। নামাজ ফার্সি শব্দ। এটার উতপত্তি পারস্যে। পারস্যের অধিবাসীরা আগে অগ্নিপূজক ছিল। অগ্নিপূজাকে তারা নামাজ নামে ডাকত। ইসলামের আগমনের পর সালাত হয়ে গেল নামাজ। এখন নামাজ পড়া কি যাবে?

আমার মন্তব্যঃ

কপালে টিপ দেয়া বা বিন্দি লাগানো নিঃসন্দেহে নাজায়েজ, কারণ এই কাজ অমুসলিমদের একটা ধর্মীয় আচার৷ ঠোঁটপালিস লাগানো প্রসাধনীর অংশ, যা স্বাভাবিকভাবে জায়েয৷ কিন্তু এটা দিয়ে গায়র-মাহরাম পুরুষের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা হারাম৷ নামায বলতে পারসিকরা ইবাদত বুঝাত, যেটা আমাদের সমাজে সালাত অর্থেই ব্যবহৃত হয়৷ তাই এতে কোন সমস্যা নেই৷ কিন্তু সালাত ব্যবহার করা উত্তম৷

কপালে টিপ দেয়া মহিলাদেরকে আমার সনাতনী হিন্দু ছাড়া আর কিছু মনে হয় না৷

একজন মন্তব্যকারীর আমাকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্যঃ

অমুসলিমদের ধর্মীয় সাদৃশ্য গ্রহন করতে ইসলাম আমাদের নিষেধ করে। তবে টিপ লিপস্টিক অথবা যেকোন প্রসাধনী কেবল জীবনসঙ্গীর সাথে শেয়ার করলেও নাজায়েজ হবে কেন??

 

আমার জবাবঃ

লিপস্টিক প্রাসাধনী – তাই এটা হারাম নয় বলে আমি আগের মন্তব্যেই উল্লেখ করেছি, যদি গায়র-মাহরামের সামনে না হয়। টিপ হারাম, কারণ ওটা প্রসাধনী নয়, ওটা ধর্মীয় আচার থেকে উদ্ভূত ট্র্যাডিশন। ধর্মীয় আচার আর সাধারণ সৌন্দর্য বর্ধক প্রসাধনী ভিন্ন বিষয়।

সেই ভাইয়ের পাল্টা মন্তব্যের একটা অংশঃ

স্বামী স্ত্রীর একান্ত বিনোদনে টিপ নিয়ে এতটা ধর্মীয় সিরিয়াসের পক্ষে আমি নই।বরং লিপস্টিক যে আরও ভয়াবহ হতে পারে সেটাই ভাবছি–

ঠোটের লিপস্টিক মৃত্যুর কারন!!! মেয়েরা সাজবে কিন্তু লিপস্টিক মাখবে না তা কি হয়? কিন্তু এই শখের লিপস্টিকই হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ।

 

আমার জবাবঃ

আপনি লিখেছেন, “স্বামী স্ত্রীর একান্ত বিনোদনে টিপ নিয়ে এতটা ধর্মীয় সিরিয়াসের পক্ষে আমি নই।”

কারো কোন কিছুর পক্ষে থাকা না থাকা নিয়ে দীন হয় না। দীনের কিছু মূলনীতি আছে। সে মূলনীতির আওতায় কোন কিছু নিষিদ্ধ হলে তা নিষিদ্ধ। রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করল, সে তাদের দলভূক্ত; আর যে কোন ক্বওমকে ভালবাসে তাদের সাথেই তার হাশর হবে।”

কপালে টিপ পড়া সনাতনী হিন্দুধর্মের একটা আচার। এটা হিন্দুরা (ভারতবাসীরা) সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যই পরত না। দুই ভ্রুর মাঝখানে যেই জায়গা তাঁকে হিন্দুরা মনে করত জ্ঞানের গোপন আসন। তাই এটাকে নিজের মেধা পুজার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত ভারতবাসী সেই বৈদিক যুগ থেকেই। এছাড়াও এটাকে শিবের ৩য় নেত্র হিসেবে দেখা হয় এবং ধ্যানকালীন সময়ে বন্ধ চোখের কারণে মনযোগ দেয়া হয় এই ভ্রুমধ্য স্থান থেকে, যেখানে টিপ লাগানো হয়।

এখন এই ধর্মীয় আচারকে অনুকরণ করতে যদি আপনার কোন সমস্যা না হয় তাহলে আমার কিছু করার নাই।

আপনি আরো লিখেছেনঃ “লিপস্টিক যে আরও ভয়াবহ হতে পারে সেটাই ভাবছি।”

আপনি এক্ষেত্রে অনেক উদাহরণও দিয়েছেন। উদাহরণগুলোর সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই। এবং আমি এও জানি যে বর্তমান সময়ের রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত অধিকাংশ প্রসাধনী শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।

কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নারীর ঠোঁট রাঙানো হারাম নয়, যদি সে তা জাহিলী পদ্ধতিতে প্রদর্শন করে না বেড়ায়। এখন সে কি বিষাক্ত উপাদানে তৈরি রঙ দিয়ে রাঙাবে নাকি স্বাভাবিক প্রকৃতিজাত কিছু দিয়ে রাঙাবে সেটা তার ব্যাপার। যদি জেনেশুনে সে বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার করে তাহলে সে তার নিজের শরীরের ক্ষতি করল। কিন্তু অন্য ধর্মের আচারের অনুকরণ করে সে তার দীনেরই ক্ষতি করবে যা তার পরকালের জন্য ক্ষতিকর।

আমি এ ব্যাপারে আর কথা বাড়াতে চাই না। রসূলুল্লাহর [ﷺ] একটা হাদীসের ভাষা হচ্ছেঃ

“হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। এ দুয়ের মাঝে কিছু বিষয় হচ্ছে সন্দেহযুক্ত। যে এই সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থাকল সে মূলত তার দীন ও ইজ্জতের হিফাজত করল।” মা’আসসালামাহ!

আরেকজন আমার মন্তব্যের একটা অংশ “কপালে টিপ দেয়া মহিলাদেরকে আমার সনাতনী হিন্দু ছাড়া আর কিছু মনে হয় না” লক্ষ্য করে পাল্টা নিম্নোক্ত মন্তব্য করলেন,

হিন্দু শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে? হিন্দু আসলেই কোন ধর্ম?

হিন্দু হওয়া অনেক সহজ দেখছি। টিপ দিবে অমনিই সনাতনী হিন্দু। টিপ দেয়া নারীদের হিন্দুরা হিন্দু হিসেবে নিবে কি? আমরা যেভাবে কালেমা পড়লে কালেমাকে মুখে স্বীকৃতি অন্তরে বিশ্বাস কাজে বাস্তবায়ন করলে মুসলিম বলি। ?

 

আমার জবাবঃ

হিন্দু কোন ধর্মের নাম না। হিন্দু মানে ভারতবাসী। সেই অর্থে আমি, আপনি, ভারতীয়, পাকিস্তানী, নেপালী, শ্রীলংকান, বাংলাদেশি, সবাই হিন্দু। এজন্য আমি আমার মন্তব্যগুলোতে ক্লিয়ার করেই লিখেছি “সনাতনী হিন্দু।” সনাতনী হিন্দু হচ্ছে ঐ সমস্ত ভারতবাসী যারা বৈদিক ধর্মের অনুসারী। আর কপালে টিপ পরা “সনাতন হিন্দু ধর্ম” বা বৈদিক ধর্মের একটা আচার। তাই এটা বিশ্বাসীদের জন্য নিষিদ্ধ।

এখন কথা হচ্ছে, যে মুসলিম বা “অ-সনাতনী হিন্দু” মহিলা কপালে টিপ পরে সে কি হিন্দু হয়ে গেল? হিন্দুরা কি তাকে তাদের দলভূক্ত হিসেবে গ্রহণ করে নেবে?

এটা একটা অবান্তর প্রশ্ন এবং নিতান্তই বালখিল্য ধরণের। রসূলের (সঃ) হাদীস অনুযায়ী সে ঐ জাতির মধ্যে শারিরীকভাবে শামিল হয়ে যাবে বা তারা তাকে অটোম্যাটিকালী তাদের মধ্যে গ্রহণ করে নেবে এমন কথা বলা হয় নি। যা বলা হয়েছে তা হল, সে আত্মিকভাবে তাদের দলভূক্ত, সে তাদের দীনের অনুকরণ করছে।

আর তাই ক্বিয়ামতের দিন সে তাদের সাথেই উঠবে, যদি না সে তওবা করে। তার আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ব্যাপারটাই মূখ্য। আর তাই তা নিষিদ্ধ। যে মুসলিম মহিলার রসূলুল্লাহর (সঃ) নির্দেশের প্রতি ভালবাসা আছে এবং আখিরাতের ভয় আছে

সে অবশ্যই নিজের কামনা/বাসনা বা ব্যক্তিগত ভাল লাগা না-লাগার [প্রবৃত্তি] উপর নির্ভর করে চলবে না। যারা নিজেদের বাসনাকে খোদা বানিয়ে নিয়েছে সে তাদের দলভূক্ত হবে না।

আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?[২৫ঃ ৪৩]

আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ যথার্থ জ্ঞানের ভিত্তিতেই তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? [৪৫ঃ২৩]

তিনি তখন জানতে চাইলেনঃ

বৈদিক ধর্ম থেকে খুজলে এর কোন রেফারেন্স পাব?

 

আমার জবাবঃ

প্রচূর রেফারেন্স আছে। নীচের কথাগুলো উইকিতে পাওয়া যাবেঃ

১। বৈদিক যুগ থেকেই টিপ বা বিন্দি ব্যবহার করা হত নিজের বুদ্ধিবৃত্তির উপাসনার লক্ষ্যে। তাই এটা নারী এবং পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করত। আক্বল বা বুদ্ধিবৃত্তির উপাসনা এজন্য করা হত যাতে এটাকে ব্যবহার করে নিজেদের চিন্তা, কথা, কর্ম, অভ্যাস এবং সর্বোপরি নিজেদের চরিত্রকে খাঁটি করা যায়। একটা শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তি সাহায্য করে জীবনে মহৎ সিদ্ধান্ত নিতে, সাহসিকতার সাথে জীবনের চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করতে এবং উত্তম বিবেচনাকে উপলব্ধি করতে ও গ্রহণ করতে। এটা এই বিশ্বাসে করা হত যে এর ভিত্তিতে গড়ে উঠে একজন শক্তিশালী ব্যক্তি, শক্তিশালী পরিবার ও শক্তিশালী সমাজ।

২। টিপ আরো ব্যবহার করা হত এজন্য যে, দুই ভ্রু এর মাঝের এই স্থানটিতে ধ্যানের সময় একজন ব্যক্তি মনোনিবেশ করে, যাতে সে একাগ্রচিত্ত হতে পারে।

৩। স্বামী মুক্তানন্দ লিখেছেন, নিজের অন্তস্থিত গুরুর সম্মানার্থে মঙ্গল কুমকুম বা চন্দন তিলক ভ্রুমধ্যস্থানে লাগানো হয়। এটাই হচ্ছে গুরুর আসন। এখানে রয়েছে একটা চক্র [মানুষের শরীরে আধ্যাত্মিক শক্তির কেন্দ্র] যাকে বলা হয় অজনা চক্র বা নির্দেশনা কেন্দ্র। এখানেই আপনি সাধনা জগতে উর্ধ্বারোহণের স্তর সহস্রারে আরোহণের জন্য গুরুর নির্দেশনা লাভ করেন, যা আপনাকে আত্মোপলব্ধি দান করবে। ভ্রুমধ্যের যে শিখা দেখা যায় তা হচ্ছে ‘গুরু জ্যোতি’।

(From Finite to Infinite, by Swami Muktananda, SYDA Foundation, S. Fallsburg, NY, 1989, pp. 88–89)

৪। যোগসাধনার বিশ্বকোষীয় অভিধান [The encyclopedic dictionary of Yoga ] থেকে আমরা জানতে পারি যে অজনা চক্রকে তৃতীয় নেত্রও বলা হয়। এই কেন্দ্র পবিত্র অক্ষর ॐ [ওম] এর সাথে সংযুক্ত; আর এতে অধিষ্ঠিত আছে পরম শিব। (Encyclopedic dictionary of Yoga, by Georg Fuerstein, Paragon House Publ, NY, 1990, p. 15).

তিনি আরো লিখেছেনঃ

“ধর্মে ধর্মে অনেকগুলো মিল আছে? যেমন সত্য কথা বলা। এই ব্যপারে যদি শরীয়ার দৃষ্টিভঙ্গী বলতেন ভাল হত। গুরুজনকে সম্মান করা অন্য ধর্মেও আছে । তাইলে এটা কি মুসলিম রা বাদ দিবে?”

 

আমার জবাবঃ

ধর্মে ধর্মে মিল থাকা এক কথা, আর কোন ধর্মের বিশেষ আচারকে গ্রহণ করা আরেক কথা। “আচার” শব্দটা দিয়ে কী বুঝায় আশা করি তা বুঝেন, যদিও এর অনেক মানে আছে। একটা “ধর্মীয় আচার” [religious ritual] আর সাধারণ নৈতিক আচরণবিধি এক বিষয় নয়। সত্য কথা বলা একটা সাধারণ নৈতিক আচরণ যা দুনিয়ার সব জাতিগোষ্ঠি মূল্যায়ন করে। তবে ইসলামে এসে এটা আখিরাতের সফলতা/বিফলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ইসলাম এটাকে ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছে। আমি কুরআন হাদীস থেকে এ ক্ষেত্রে কোন উদ্ধৃতি এখানে দিচ্ছি না, কারণ এ বিষয়ে এত অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে যা ইসলামের একজন সাধরণ পাঠকেরও সহজে চোখে পড়ার কথা।

একইভাবে গুরুজনকে শ্রদ্ধা করা ও ছোটদেরকে স্নেহ করার বিষয়টাও সার্বজনীন একটা নৈতিক আচরণ বিধি দুনিয়ার সব জাতিই এটার মূল্যায়ন করে। কিন্তু এক্ষেত্রেও ইসলাম এটাকে ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছে। রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যারা ছোটদের দয়া-স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।”

তাই সাধারণ নৈতিক আচরণ বিধিতে বিভিন্ন ধর্মে সাধারণ শিক্ষার মিল থাকলেও ইসলামে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের (সঃ) নির্দেশের কারণে অন্যরকম শর’ঈ মর্যাদা লাভ করেছে, যার সাথে মানুষের আখিরাতের সফলতা/বিফলতা জড়িয়ে আছে। কারণ এখানে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের (সঃ) আনুগত্য ও অবাধ্যতার বিষয় জড়িত। মুসলিমরা এগুলো বাদ দিবে কীভাবে যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে যখন কোন একটা কাজ/আচার/পোষাক/ইত্যাদি কোন বিশেষ জাতি-গোষ্ঠির “ধর্মীয় আচার” এর অংশ হিসাবে চিহ্নিত হয় তখন তা থেকে বিরত থাকতে রসূলুল্লাহ (সঃ) সুস্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং এ ধরণের অনুকরণের আখিরাতে মন্দ পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করেছেন। আবূ-উমামা সুদাই ইবন আজলান আল-বাহিলী (রাঃ) এর বর্ণনা করা হাদীসটা আমি আগেই উল্লেখ করেছিঃ “যে কেউ কোন জাতির অনুকরণ করল সে তাদের অন্তর্ভূক্ত, আর যে কাউকে ভালবাসল তার হাশর তাদের সাথেই হবে।”

আমি আমার আগের মন্তব্যগুলোতে দেখিয়েছি যে কপালে টিপ পরা সনাতনী হিন্দু ধর্মের একটা আচার। আর রসূলুল্লাহর [ﷺ] এই হাদীসের আলোকে তা নিষিদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা খেয়াল রাখা দরকার এমন কি ইবাদতের ক্ষেত্রেও যেখানে আমাদের সাথে অন্যদের মিল হয়ে যায় সেখানেও রসূলুল্লাহ (সঃ) সতর্কতার নীতি অবলম্বন করতেন। আশুরার রোজা ইয়াহুদীদের সাথে মিল হয়ে যাচ্ছিল বলে রসূলুল্লাহ ৯ তারিখেও রোজা রাখার ইচ্ছা করেছিলেন।

যে মুসলিম মহিলার রসূলুল্লাহর (সঃ) নির্দেশের প্রতি ভালবাসা আছে এবং আখিরাতের ভয় আছেসে অবশ্যই নিজের কামনা/বাসনা বা ব্যক্তিগত ভাল লাগা না-লাগার [প্রবৃত্তি]উপর নির্ভর করে চলবে না। যারা নিজেদের বাসনাকে খোদা বানিয়ে নিয়েছে সে তাদের দলভূক্ত হবে না।

“আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?[২৫: ৪৩]

 

আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ যথার্থ জ্ঞানের ভিত্তিতেই তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? [৪৫: ২৩]

সূত্রঃ নয়া দিগন্ত

আপনার মতামত লিখুন :