মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচন ।। দলীয় মনোনয়ন পেলেন রিটন

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:21 AM, 14 May 2022

মেহেরপুর পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন পেলেন রিটন। দ্বিতীয়বারের মতো তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আজ শুক্রবার (১৩) মে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সভায় তাঁর মনোনয়ন চুড়ান্ত হয়। গণভবনে দলের স্থানীয় স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাহফুজুর রহমান রিটন মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও বর্তমান পৌর মেয়র। ২০১৭ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে (নৌকা) মেয়র নির্বাচিত হন মাহফুজুর রহমান রিটন। আগামি ১৫ জুন দেশের প্রাচীন এই পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেহেরপুর পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন অনেকে।
এ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই চেষ্টা করেছেন। স্থানীয়ভাবে প্রচারণার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পৌঁছেছেন অনেকে। সর্বশেষ দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন ১১ জন। এরা হলেন- বর্তমান মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সহধর্মীনি সৈয়দা মেনালিসা ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহিম শাহীন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক আরিফুল এনাম বকুল, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইমতিয়াজ বীন হারুন জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফুয়ান উদ্দীন আহম্মেদ রুপক, জেলা যুবলীগ নেতা সোয়েব রহমান, ব্যবসায়ী সমিতি নেতা আমিনুল ইসলাম খোকন, সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীনের সহধর্মিনী তহমিনা খাতুন ও তার ছেলে তানভির আহম্মেদ।

মেহেরপুর পৌরসভায় রিটনের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি রাজনৈতিক একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন অনেকে।

সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল। এ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন পৌর বিএনপি সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। আরও একজন হেডিওয়েট প্রার্থী ছিলেন মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু। তিঁনি দীর্ঘদিন ধরে মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নির্বাচনে ১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ১১ ও ১২ নম্বর কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছিল নির্বাচন অফিস। ১৩টি কেন্দ্রের ভোটের ফলাফলে ২০৯ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহফুজুর রহমান রিটন। পরবর্তীতে ৮ মে দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করে নির্বাচন অফিস। এ দুটি কেন্দ্রের ভোটের মাধ্যমে পুর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেন রির্টার্নিং অফিসার।
এই নির্বাচনে ১১ হাজার ৭১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী (নৌকা) মাহফুজুর রহমান রিটন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিএনপি প্রার্থী জাহাঙ্গীর বিশ্বাস (ধানের শীষ) ৮ হাজার ৪১৭ ভোট। বড় ব্যবসধানে জয়লাভ করেন মাহফুজুর রহমান রিটন।

এদিকে অপর প্রার্থী সাবেক পৌর মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ২ হাজার ৬৩২।
এর আগের নির্বাচন তফশীল ঘোষণা হওয়ার পরেই স্থগিত হয়। মেয়াদ পূর্ণ হলে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তফশীল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৩১ অক্টোবর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বর্তমান মেয়র রিটনসহ চার জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এদিন সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। আমদহ ইউনিয়নের সাথে সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতায় উচ্চাদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে তফশীল স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচনের দাবিতে মেহেরপুর শহরে উত্তাল বিক্ষোভ শুরু হয়। তৎকালীন মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু অপকৌশলে পৌরসভার চেয়ারে থাকার জন্য এ মামলা করায় বলে অভিযোগ করেছিলেন যুবলীগ নেতৃবৃন্দ। জেলা যুবলীগ আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন ও যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশানের নেতৃত্বে শহরে প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পৌসভার সামনে মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর কুশপুতুল দাহ করা হয়।
পরবর্তীতে সীমান্ত সংক্রান্ত মামলার জটিলতা কাটিয়ে ২০১৭ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে গঠিত পৌর পরিষদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয় এপ্রিল মাসে। যথা সময়ে নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন পৌরসভার বাসিন্দরা।
এদিকে পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে। তিনি বলেন, গেল ৫ বছর দায়িত্ব পালনে মেহেরপুর পৌরসভার উন্নয়নে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছি। মানুষের পাশে থেকে আবারও সেবা দিতে চায়। পৌরসভার ভোটাররা এবারও তাঁর সাথেই রয়েছেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন রিটন।
মেহেরপুর পৌরসভায় রিটন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করলেন জেলার সিনিয়র কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, এ মনোনয়ন অনেক মানুষকে আবারও দল করার সুযোগ করে দিয়েছে। গ্রুপিং ও কোন্দলের রাজনীতিতে অনেকেই দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। মাহফুজুর রহমান রিটন যদি বিজয় লাভ করে তাহলে মেহেরপুর শহরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :