মেহেরপুরে পপুলার মেডিসিন কর্ণারে অবৈধ ওষুধের রমরমা ব্যবসা

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:59 PM, 23 March 2021

মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে মেহেরপুর জেলায় কিছুটা কোণঠাসা রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা।ফলে মাদকসেবীরা দ্বিগুণ টাকা দিয়েও পাচ্ছে না কোন মাদকদ্রব্য। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মেহেরপুর শহরের কতিপয় অসাধু ফার্মেসি মালিক ও ঔষধ ব্যবসায়ী পেন্ট্রাডল, টাপেন্টা, সিন্টাডল, ওমরফোন, লেপেনট্রা সহ বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ অবাধে বিক্রি করে যাচ্ছে।আইন অনুযায়ী রেজিঃ চিকিৎসকের পরামর্শ বা অনুমতি পত্র ছাড়া কোন ঔষধ বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও এসব ওষুধ ব্যবসায়ীরা কোন নিয়ম নীতি বা আইনের তোয়াক্কা করছে না। মাদকসেবীদের কাছে ইয়াবার পরিবর্তে এসব ট্যাপেন্টা, সিন্টাডল অবাধে বিক্রি করে যাচ্ছে ফার্মেসিগুলোতে। গাঁজা হেরোইন ইয়াবা ফেনসিডিল সহ সর্বশেষ ওমরফোন পেন্টাডল টাপেন্টা ট্যাবলেট এখন মাদক হিসেবে মেহেরপুরের মাদকসেবীদের কাছে বেশ পরিচিত।আর এসব ওষুধ দিয়ে চলছে মাদক সেবীদের মাদক সেবনের কাজ।সরকার এসব ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করলেও শহরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে এসব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাদকসেবী জানায় মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকায় পপুলার মেডিসিন কর্নারের স্বত্বাধিকারী একরামুল হক রনি দীর্ঘদিন ধরেই এসব ওষুধ বিক্রি করছেন।এসব ব্যথানাশক ওষুধের মূল্য ১৫ থেকে ২৫ টাকার ভিতরে হলেও ফার্মেসি থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় কিনে থাকেন মাদকসেবীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কৌশল অবলম্বন করে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় পরিচিত মাদক সেবীদের কাছে এসব ঔষুধ বিক্রি করে একরামুল হক রনি। অপরিচিত কেউ এসব ওষুধ কিনতে গেলে প্রথমে না দিলেও পরে আরও বেশি দামে দিতে রাজি হন তিনি। অনুসন্ধান চলাকালীন সময়ে সাংবাদিকের সোর্স এর কাছেও একটি সিন্টাডল ঔষধ ২২০ টাকায় বিক্রি করেন রনি।দীর্ঘদিন ধরে এসব ওষুধ বিক্রি করে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পপুলার মেডিসিন কর্নার এর আশেপাশের কয়েকজন ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি প্রতিটি সিন্টাডল ঔষধ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের সময় সাংবাদিক ছদ্মবেশে এই ব্যথানাশক ট্যাবলেট কিনতে গেলে পপুলার মেডিসিন কর্নার এর স্বত্বাধিকারী একরামুল হক রনির সাথে প্রতি পিস সিন্টাডল ট্যাবলেট ২২০ টাকায় দরদাম হয় কিন্তু পরে টের পেয়ে গেলে তিনি সাংবাদিকের কাছে ওষুধ বিক্রি করতে অস্বীকার করেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ ওষুধের ব্যবসা করে তিনি অনেক অর্থ কামিয়েছেন।মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মোখলেছুর রহমান জানায়, “এসব ব্যথানাশক ঔষধ মারাত্মক ব্যাথার প্রতিরোধক হিসেবে খুবই ভালে কাজ করে হার্ট অ্যাটাক ও যক্ষার মতো মারাত্মক ব্যাধির ব্যাথা নিমিষে ভুলিয়ে দেয়।মেহেরপুর তাহের ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার এসএম আরাফাত আকাশ বলেন, “হার্ট অ্যাটাক ক্যান্সারসহ মারাত্মক ব্যথার প্রতিশোধক হিসেবে এসব ওষুধ খুব ভালো কাজ করে, কিন্তু এসব ওষুধ অতিরিক্ত সেবন করলে এগুলোর প্রতি এডিক্টেড হয়ে পড়বে এবং ঐ সমস্ত অ্যাডিক্টেড ব্যাক্তিরা ভয়াবহ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি এসব ঔষধ অতিরিক্ত সেবন করে খুনের মতো অপরাধও করে ফেলতে পারে সেবনকারী।সিন্টাডল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে পপুলার মেডিসিন কর্নার এর স্বত্বাধিকারী একরামুল হক রনি প্রথমে ঔষধ বিক্রির ব্যাপারে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চান। এবং তিনি বলেন সরকার এসব ঔষধ বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করলেও আমাদের ক্রয় কৃত ঔষধ কোম্পানি ফেরত না নেওয়াই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেছি, এক সপ্তাহ আগে আমাদের এসব ঔষধ ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন আর বিক্রি করি না।মেহেরপুর তাহের ক্লিনিক এর মেডিকেল অফিসার এসএম আরাফাত আকাশ মেহেরপুর নিউজকে জানান, হার্ট অ্যাটাক ক্যান্সারসহ মারাত্মক ব্যথা প্রতিষেধক হিসেবে এসব ঔষধ খুব ভালো কাজ করে কিন্তু এসব ঔষধ অতিরিক্ত সেবন করলে এগুলো প্রতি এডিক্টেড হয়ে পড়বে।মেহেরপুর জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান মেহেরপুর নিউজকে জানান, টাপেন্টা সিনটা পেন্টাডল লোপেন্টা সহ বিভিন্ন ব্যথানাশক ঔষধ ইয়াবা ও হেরোইন এর মত সেবন করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, এসব ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ফেনসিডিল গাঁজা ইয়াবা ও হেরোইন এর চেয়েও তীব্র এবং ভয়ঙ্কর দাম কম ও সহজলভ্য হাওয়াই এর প্রভাব বাড়ছে মাদকের উপাদান। এভাবে বাড়লে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ্ দারা খান মেহেরপুর নিউজকে বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স রয়েছি, প্রতিনিয়ত পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, গতবছর ৮ই জুলাই মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন তফসিলভুক্ত করা হয়েছে ব্যথানাশক ট্যাপেন্টা জাতীয় ঔষধ মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা একে খ শ্রেণীর মাদকদ্রব্য হিসাবে ঘোষণা করেছে সরকার। এসিআই এর লোপেন্টা স্কয়ারের পেন্টাডল অপসোনিনের টাপেন্টাডল এসকেএফ এর ট্যাপেন্টা যেগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ ‘খ’ ৬৫ ধারা মোতাবেক আইনে মামলা দায়ের করা যাবে বলে প্রজ্ঞাপন করা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :