মেহেরপুরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিঃ নানা অনিয়মের অভিযোগ রোগীদের

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:36 PM, 25 May 2022

মেহেরপুরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। রোগীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন না পেয়ে বাইরে থেকে কিনছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৪ মে), দুপুর ২ টা পর্যন্ত ৪৬ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত ১ সপ্তাহে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৯৬ জন এবং হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ৩০৩ জন এবং প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন বলে জানান ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ নিপু আক্তার। এদিকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এতোই বেশিযে, ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় চিকিৎসা চলছে। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধিন রোগীকে দেখতে গেলে পা ফেলার যায়গা পর্যন্ত নেই।
মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে অসংখ্য রোগীকে বারান্দায় বিছানা পেতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।
হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ১০টি শয্যা বরাদ্দ থাকলেও সম্প্রতি সময়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সেটি করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ড হিসেবে পূর্বদিকের একটি ৩ তলা ডরমিটরি ব্যবহার করা হচ্ছে।
আক্রান্ত রোগীদের অনেকে ডায়রিয়ার জন্য মেহেরপুর পৌরসভার সাপ্লায়ের পানিকে দুষছেন।
হাসপাতাল সূত্রের হিসাব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয় ৪৮ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে কিংবা ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন ৫৩ জন। শুক্রবার ভর্তি হয় ৫৪ জন এবং ত্যাগ করেন ২৫ জন, শনিবার ভর্তি হয় ৮৯ জন এবং ত্যাগ করেন ৭৮ জন, রবিবার ভর্তি হয় ৯৪ জন এবং ত্যাগ করেন ৯২ জন, সোমবার ভর্তি ১০৮ জন এবং ত্যাগ ৯০ জন। সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে নতুন ভর্তি ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৬ জন এবং গত ১ সপ্তাহে ৩৯৬ জন ভর্তি হন এবং হাসপাতাল ত্যাগ করেন ৩০৩ জন বলেও ডায়রিয়া ওয়ার্ড ইনচার্জ জানান।
বর্তমান চিকিৎসাধীন রোগীদের বেশির ভাগই বৃদ্ধ এবং চল্লিশোর্ধ্ব বলে জানা যায়। তবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কারও প্রাণ হয়নি। রোগীর পানিশূন্যতা দূর করতে নতুন রোগীকে প্রয়োজন অনুযায়ী স্যালাইন দেওয়ার কথা জানালেও অসংখ্য রোগীদের অভিযোগ হাসপাতাল থেকে ৩-৪ টি স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। বাকি গুলো বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোন উদ্যোগ নেই। তাছাড়া ছাড়নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগে রয়েছে টাকা নেওয়ার নানা অভিযোগ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুজিবনগরের রামনগর গ্রামের জোনাকির মা সুফিয়া জানান, এ পর্যন্ত ৬ টি স্যালাইন দিয়েছে আমার মেয়েকে। তবে ৩ টি ওষুধের বোতল আমাকে কিনতে হয়েছে বাইরের ফার্মেসি থেকে। তিনি বলেন, ৭ দিন অতিবাহিত হলেও আমার মেয়ে সুস্থ্য হচ্ছেনা। এখন পায়খানার সাথে রক্তও দেখা যাচ্ছে।
সদর উপজেলার গোভীপুরের আব্দুল কাদের জানান, গত রবিবার ভর্তি হয়েছি। গতকাল থেকে আমাকে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য বলছেন ডাক্তার। আমি এখনও অসুস্থ্য, পাতলা পায়খানা চলমান।
মোট ৬ টি স্যালাইন দিয়েছে, কিনেছি ২ টি।
মেহেরপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড তাঁতীপাড়ার সান্তনা জানান, সোমবার ভর্তি হয়েছি। এপর্যন্ত ৪ টি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে এরমধ্যে ১টি কিনেছি।
গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, রবিবার সকালে এসেছি, যায়গা না পেয়ে বারান্দায় রয়েছি। সকালে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর হাসপাতাল ত্যাগ করে যাওয়া প্রতিজনের কাছ থেকে কর্মরত আয়ারা ১০০ টাকা করে আদায় করছেন দেখছি। টাকা না দিলে জোরপূর্বক আদায়ের চেষ্টা এবং খারাপ আচরণের কথাও তিনি জানান।
মেহেরপুর সদর উপজেলার দীঘিরপাড়া গ্রামের আসাদুজ্জামানের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন জানান, শুক্রবার আমার স্বামীকে ভর্তি করিয়েছি। এখন পর্যন্ত পাতলা পায়খানা চলমান। স্যালাইন ছাড়া আর কোন ওষুধ দেওয়া হয়নি। ওষুধও কিনতে হয়েছে।
তিনার স্বামী শক্তিহীন হয়ে পড়ায় বাইরে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না গোসলের জন্য। ওয়ার্ডের পাশে টয়লেট সংলগ্ন একটি ট্যাপ থাকলেও সেখানে ড্রাম ভর্তি নোংরা রেখেছেন নার্সরা। টয়লেটের ভিতরেও অপরিষ্কার। বাইরে এমনিতেই রোগী শুয়ে থাকার কারণে হাঁটাচলা অসুবিধা তার উপর ফেলে রাখা হয়েছে ডাবের খোলা।
শহরের বড়বাজার এলাকার খাঁ পাড়ার আনারুল ইসলামের স্ত্রী জানালেন, সোমবার সন্ধায় ভর্তির পর ৫ টি স্যালাইন দিযেছেন। তবে ১ টি কিনতে হয়েছে। ওষুধও কিনতে হয়েছে।
দিঘিরপাড়া গ্রামের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুর্বল শরীরে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পাওয়া আবুল বাসার জানান, সকালে ভর্তি হয়েছেন। এপর্যন্ত ৩ টি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
রবিবার মুজিবনগরের রামনগর গ্রামের রহিমা জানান, ২ দিন যাবত ভর্তি হয়েছি। কয়েকটি স্যালাইন দেওয়া হলেও ডাক্তারের দেখা মেলেনি।
তবে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ নিপু আক্তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, রোগীদের অভিযোগ সঠিক নয়। ওদের কথা বিশ্বাস করবেন না। পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন রয়েছে। সোমবারেও ৬ হাজার স্যালাইন এসেছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও মোখলেছুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বাইরে রয়েছেন বুধবার দেখা করার কথা জানান।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জমির মো. হাসিবুস সাত্তার জানান, পানি দুষণের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে পৌর মেয়রকে সাপ্লায়ের পানি পরীক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ ডায়রিয়ার অধিকাংশই পৌর এলাকার বাসিন্দা।
তবে নানা অভিযোগ আর অনিয়মের বিষয়টি অজানা। রাতে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

আপনার মতামত লিখুন :