মেহেরপুরে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে পাতাকপি : কেনার লোক নাই

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  04:03 PM, 25 March 2021

মেহেরপুরে বাঁধাকপি (পাতাকপি) কেনার কোন ক্রেতা নাই। কয়েক‘শ বিঘা জমিতে কপি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। গবাদিপশুকেও কেউ খাওয়াতে চাচ্ছেনা। কপিচাষীরা জমি থেকে কপি কেটে অন্যকোথাও ফেলতে পারছেনা সাধারণ মানুষের বাধার মুখে। কারণ কপি ফেলে দিলে পচে সেখান থেকে গন্ধ ছড়াবে। বাধ্য হয়ে কপিচাষীরা জমিতেই লাঙ্গল দিয়ে কপি মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে।

সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের কপিচাষী হবিবর রহমানের কপির জমি দেখিয়ে বলেন- বাজারে কপিকেনার কোন ক্রেতা নাই। যদিবা মেলে জমি থেকে কপি সংগ্রহর টাকা ফিরে আসেনা। গবাদিপশু অতিরিক্ত পাতাকপি খেলে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। এই কারণে গবাদিপশু পালনকারীরাও পশুখাদ্য হিসেবে কপি নিচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে তিনি জমি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তারপরেও কেউ কপি না নেয়াতে জমিতেই কপি শুকাচ্ছে। জেলার প্রতিটি গ্রামের কপিচাষীরা এবার কপি চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। স্মরণকালে এমন বিপর্যয় দেখা যায়নি বলে কপিচাষীদের অভিযোগ।

হবিবর রহমান দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেন। বাজারে চাহিদা না থাকায় উন্মুক্ত করে দিয়েছেন জমির কপি। কেউ গবাদিপশুর খাবার হিসেবেও নিচ্ছেনা সেই কপি। ফলে জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে কপি। হবিবরের মতো মেহেরপুর জেলার কপিচাষীদের অনেকেই কপিচাষের জমি উন্মুক্ত করে দিয়েছে। জেলায় অন্তত দুকোটি টাকার কপি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার বন্দর গ্রামের শাহারুল বলেন, প্রতিবার ৩ বিঘা করে বাধাকপির চাস করি। খরচ-খরছা বাদ দিয়ে ভালোই লাভ হয়। কিন্তু এবার কপি নেওয়ার ব্যবসিক নেই। যার কারণে জমিতেই কপি পচে যাচ্ছে। ছাগল-গরুর জন্য কেউ নিচ্ছে না। কারন গরুতে খেলে পানিবাহিত রোগ হচ্ছে গরুর। যশোর, মাগুরা, খুলনা থেকে পার্টি এসে ৫ হাজার টাকায় ট্রাক লোড করে দিতে হচ্ছে। তারা এই কপি পুকুরে মাছ ও হাসের জন্য নিয়ে যাচ্ছে।

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় সবজির ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় বাজার থেকে অন্য জেলাগুলোতেও চাহিদা থাকলেও চাষীরা দাম পাচ্ছেনা। জেলায় কাঁচা পণ্য সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই।

দরের উজলপুর গ্রামের জুয়েল রানা জানান- দু’বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কপিচাষ করতে গিয়ে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। গ্রামের যারা কপিচাষ করেছিল তাদের দু‘একজন প্রথমদিকে কপিবিক্রি করে লাভবান হলেও সিংহভাগ চাষী লোকসান দিয়েছে। তার মতে কপি থেকে সংরক্ষণযোগ্য খাদ্য সামগ্রি উৎপাদন হলে বছর কপির যেমন চাহিদা বাড়বে, মানুষের পুষ্টি চাহিদা যোগাবে এবং চাষীরা কপিচাষে উৎসাহ পাবে। এজন্য শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কপি থেকে খাদ্যসামগ্রি উৎপাদনে সহজশর্তে ঋণ জোগাতে হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ বছর ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই।
জেলার কাঁচাবাজার কমিটির সভাপতি আবু হানিফ বলেন, চাহিদার তুলনায় সারাদেশে অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে কপির দাম কমে গেছে। জেলার কৃষকদের সরকারের কাছে দির্ঘদিনের দাবি সবজি সংরক্ষণাগারের। দাবিটি উপেক্ষিত বলেই চাষরিা লোকসানে পড়ছে।

মেহেরপুরের সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন স্বল্প সময়ের মধ্যেই জেলাতে একটি সবজি সংরক্ষণাগার তৈরির কথা শুনিয়েছেন বিভিন্ন সমাবেশে। সবজি সংরক্ষণাগার স্থাপিত হলে চাষিদের এতটা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরের কীটনাশকমুক্ত ১৪শ মেট্রিকটন পাতাকপি বিদেশে রপ্তানী হয়েছে। বিদেশের বাজার ধরতে পারলে আগামীতে আর চাষীদের লোকসান গুনতে হবেনা। তিনি আরও জানান- সারাদেশেই এবার কপি চাষ হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। দেশের চাহিদার তুলনায় বেশী উৎপাদনের কারণেই চাষীরা এবার লোকসানে পড়েছে চাষীরা।

আপনার মতামত লিখুন :