মেহেরপুরে জন্ম নিবন্ধন জটিলতায় আটকে গেছে জাহানারার বয়স্কভাতা

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:22 AM, 14 October 2020

মেহেরপুরের স্টেডিয়ামপাড়ার শহীদ জাভেদ ওসমান সড়কের বাসিন্দা জাহানারার আটকে গেছে বয়স্কভাতা। এই বয়সে মাথার সব চুল পেকে গেছে সেই কবে। চোখে মুখে বয়সের ছাপও স্পষ্ট। স্বামীও মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। তার ছেলে-মেয়েরাও দেখেছেন নাতি-পুতির মুখ।

কয়েক দিন আগে ভাতা তুলতে গিয়ে তিনি জানাতে পারেন জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) তার বয়স কম, তাই কেড়ে নেওয়া হয়েছে তার বয়স্কভাতা কার্ড।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাহানারার স্বামী সেলিম শেখ মারা গেছেন ১৯৯৫ সালে। তিনি এক মেয়ে ও ২ ছেলের মা। ছেলে ও মেয়ের নাতি-পুতিও হয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবি তার বর্তমান বয়স ৭৫ বছর বা তারও বেশি। ২০০৬ সালে পৌরসভা থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ করার সময় তার জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ২১ মে ১৯৭২ সাল। সে অনুযায়ী জাতীয় পরিচয় পত্রে (নং-৮২৪৫০৩০১৪৬) তার বর্তমান বয়স মাত্র ৪৮ বছর। কিন্তু এনআইডি কার্ড হিসেবে তার বয়স তার মেয়ের চেয়েও কম। তার মেয়ে সেলিনা খাতুনের জাতীয় পরিচয় পত্রে (নং- ৯১৪৫০৬২১২২) জন্ম তারিখ- ১১ এপ্রিল ১৯৭২ সাল। হিসেব মতে মেয়ের চেয়ে মায়ের বয়স ১ মাস ১০ দিন কম।

বৃদ্ধা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘আমি লেখাপড়া জানিনা। মেহেরপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাবলুর সময় আমাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমি প্রতি তিন মাসে এক হাজার পাঁচশত টাকা করে পেয়ে আসছিলাম। কিন্তু বয়স কম এমন কারণ দেখিয়ে কয়েক দিন আগে মেহেরপুর সমাজ সেবা অফিস আমার বয়স্ক ভাতার বইটি কেড়ে নিয়েছে। আমার ছেলেমেয়েরাও অভাবী। তারা আমার খরচও দেয় না।

ভাতা না পেলে এ বয়সে আমি কি খেয়ে বাঁচবো? বয়স্কভাতা অথবা বিধবাভাতা পেয়ে যেন আমি বাকি জীবনটা কাটাতে পারি-এই ব‌্যবস্থা করে দেন।’
মেহেরপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তে ২০০৫-২০০৬ জন্ম নিবন্ধন শুরু হয়।

ওই সময়ের আগে জন্ম নেওয়া কয়জনের জন্ম তারিখ সঠিকভাবে খাতায় লিপিবদ্ধ ছিল না। কমপক্ষে এসএসসি পাশ নারী-পুরুষের জন্ম তারিখ সার্টিফিকেট অনুযায়ী দেওয়া গেছে। আর সেই সময় অশিক্ষিত ও বয়স্ক লোকজনের জন্য জন্ম তারিখ নির্ধারণ করা তো আদৌও সম্ভব ছিল না। তাই জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বয়সটা ছিল অনুমান নির্ভর। যার ফল এখন অনেককে ভোগ করতে হচ্ছে। তবে বয়সের ভারে নুইয়ে পরা এমন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বয়স্কভাতার কার্ড কেড়ে নিয়ে ভাতা বঞ্চিত করা নিতান্তই অমানবিক ব্যাপার।’

মেহেরপুর সমাজ সেবা অফিসার সোহেল মাহমুদ জানান, সম্প্রতি সরকার বয়স্কভাতা প্রাপ্তদের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য নামের তালিকা ডাটাবেজের মাধ্যমে কম্পিউটারাইজড করার নির্দেশ দেয়। সেমতে সুবিধাভোগীদের নাম এন্টি করতে কম্পিউটারে ডাটা বেজে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) নম্বর দিলে সকল তথ্য বের হয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে বয়স কম থাকায় অনেকের নাম কম্পিউটার ডাটাবেজে এন্ট্রি হচ্ছে না। এ কারণে এর মধ্যে এ অফিসে ৮৭ জনের বয়স্ক ভাতার বই ফেরত নিয়ে রাখা হয়েছে।

জেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. আব্দুল কাদের জানান, উপজেলা ও শহর সমাজ সেবা অফিসগুলোতে বয়স্কভাতার সুবিধাভোগীদের ডাটা এন্ট্রি চলছে। এখানে অনেকরে নাম ডাটাতে এন্ট্রি নিচ্ছে নাভ বাদ পড়ে যাচ্ছে। পুনঃবিবেচনার জন্য বাদপড়াদের নামের তালিকা করে আবারও সরকারের কাছে পাঠানো হবে।

আপনার মতামত লিখুন :