মেহেরপুরে কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:31 PM, 30 November 2022

শীতের উপাদেয় খাবার কুমড়া বড়ি। আর এ কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে মেহেরপুরে গ্রামীণ জনপদের বাড়ি বাড়ি। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মাসকলাই ও কুমড়োর বড়ি তৈরিতে নারীদের ব্যস্ততা দেখা মেলে। মাসকলাই ভিজিয়ে রাখার পর সেটি দিয়ে ডালের আটা ও পাকা চাল কুমড়ো মিশিয়ে এ সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়। গ্রামীণ এলাকার ৮০ ভাগ মহিলা পালা করে বড়ি দেয়ার কাজটি করে থাকেন। বছর পাঁচেক আগেও শীল পাটায় বেটে বড়ি তৈরীর কাজটি করা হলেও এখন মেশিনের মাধ্যমে কাজটি সেরে ফেলা হচ্ছে। এতে অবশ্য বড়ি দেয়ার কাজটি বেশ সহজ হয়েছে। তবুও পাটায় বেটে বড়ি তৈরীর প্রচলন রয়েছে গ্রামা লে।

গাংনীর শিমুলতলা গ্রামের জরিনা বেগম জানান, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিকুচি করে রাখতে হবে। তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পরে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হবে। এবার ডালের সঙ্গে কুমড়া মেশাতে হবে। খুব ভালো করে হাত দিয়ে মিশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়। তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে। বড়ি তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।

মুজিবনগরের দারিয়াপুর গ্রামের গৃহবধু মালেকা বেগম জানান, শীতের সময় মূলত বড়ি তৈরি করা হয়। এ অ লের নারীরা এই বড়ি তৈরি করতে কয়েক মাস পূর্বে থেকে চাহিদা মতো চাল কুমড়ো পাকানোর ব্যবস্থা করে থাকেন। এরপর মাসকলাই দিয়ে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু খাবারের অংশ বিশেষ কুমড়ো বড়ি। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন। মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়াও অন্য ডালেও তৈরি হয় এ বড়ি। কুমড়োর বড়ি তৈরিতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। রাত জেগে শীলপাটায় কেজি কেজি ডাল বাটা সহজ কাজ নয়। রোদে মচমচে করে শুকালেই এর ভালো স্বাদ পাওয়া যায়। নিজেরা খাওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়। তবুও মুখরোচক খাবার আর আত্মীয়তার জন্য এটি করতে হয়। এখানেও একটা বাড়তি আনন্দ রয়েছে।

হেমায়েতপুর বাজারের ব্যবসায়ি আনারুল জানান, মুদি ব্যবসায় পাশাপাশি শীত এলেই কুমড়োর বড়ি বিক্রি করেন তিনি। অনেকেই চাল কুমড়োর আবাদ করেন শীতকালে বড়ি তৈরীর জন্য। গেল বছর একডজন বড়ি ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা। বড়ি তৈরীর উপকরণ ও শ্রমমূল্য বৃদ্ধির কারণে বড়ির দামও বেড়ে গেছে।

গাংনী মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রমজান আলী জানান, গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যর মধ্যে কুমড়োর বড়ি অন্যতম। শীতকালে কুমড়োর বড়ি তৈরী না করলেই যেন নয়। এটি যেমন মুখরোচক তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। নারীরা পালা করে অনেক সময় বড়ি তৈরী করে থাকে। এতে প্রতিবেশিদের মধ্যে যেমন সম্পর্ক দৃঢ় হয় তেমনি বড়ি উপহার দিয়েও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট থাকে।

আপনার মতামত লিখুন :