মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী একটি মিষ্টির কাহিনী

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:14 AM, 08 June 2021

বাসুদেব সাহার সাবিত্রী,১৮৬১ সাল ব্রিটিশরা তখন ক্ষমতায়।বর্তমান বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার বাসিন্দা বাসুদেব সাহা স্থানীয় জমিদার এবং ব্রিটিশ সাহেবদের মন জয় করতে আবিষ্কার করলেন সাবিত্রী এবং রসকদম্ব নামে অদ্ভুত স্বাদের দুটি মিষ্টি।

অবিভক্ত ভারতের নদীয়া জেলার পাঁচ মহকুমার মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক নগরী ছিল এই মেহেরপুর। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো নদীয়া জেলায় ভিন্নধর্মী ও ব্যতিক্রমী এ মিষ্টির পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। এ মিষ্টির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এতে অন্যান্য মিষ্টির মতো রস নেই।এই মিষ্টি ৭ দিন রেখেও খাওয়া যায় তবে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এগুলো প্রায় ছয় মাস সংরক্ষণ করা যায়। তবে এই মিষ্টির বিশেষত্ব হলো এগুলো যত পুরনো হয়, তত স্বাদ বৃদ্ধি পায়।ফলে অনেক ক্রেতাই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে খেতে পছন্দ করে।

বাসুদেব সাহার বর্তমান বংশধর বিকাশ কুমার সাহা জানান, জমিদার সুরেন কুমার বোসের বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে তার ঠাকুরদা প্রথম দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই ব্রিটিশ সাহেব এবং জমিদার বংশের মানুষসহ অমাত্যবর্গ এ মিষ্টির গুণগ্রাহী হন। বাসুদেব সাহার কাছ থেকে তার ছেলে রবীন্দ্রনাথ সাহা এ মিষ্টি তৈরির কৌশল শেখেন। তার কাছ থেকে শেখেন তার দুই সন্তান বিকাশ কুমার সাহা ও অনন্ত কুমার সাহা। এখন তারা দুজন ‘বাসুদেব গ্র্যান্ড সন্স’ নামে এ মিষ্টির ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

মূলত দুধ আর চিনি এ মিষ্টির প্রধান উপকরণ। প্রথমে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় দুধ জ্বাল দিতে হয়। দুধ ঘন হয়ে এলে নির্দিষ্ট সময়ে দিতে হয় পরিমাণমতো চিনি। এর পর তা জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে ছাঁচে মিষ্টি তৈরি হয়। এক কেজি দুধ থেকে সর্বোচ্চ ১০টি।

মিষ্টির গুণগত মান ধরে রাখতে তারা কোনো কর্মচারী রাখেননি।। নিজেরাই পরিবার পরিজন নিয়ে সীমিত পরিসরে সাবিত্রী ও রসকদম্ব তৈরি করছেন।

সাবিত্রী ও রসকদম্ব স্থানীয়দের মন জয় করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স সহ মধ্যপ্রাচ্যসহ বহু দেশে সুনাম কুড়িয়েছে।দৈনিক এক মণেরও বেশি মিষ্টি তৈরি করতে হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে সব মিষ্টি শেষ হয়ে যায়। তবে মান ধরে রাখতে তারা বায়না পেলেও অতিরিক্ত মিষ্টি তৈরি করেন না।

আপনার মতামত লিখুন :