“বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মত্যাগেই আজকের বাংলাদেশ”

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:55 PM, 13 November 2020

বঙ্গবন্ধু পরিবার বাংলাদেশ এবং বাঙালী জাতির জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

তার প্রথম কন্যা সন্তান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বয়স যখন মাত্র ৫ মাস ১৪ দিন তখন তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ১ম ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে রাজনৈতিক কারনে কারাবরণ করেন।ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ছাড়া পান ১৫ মার্চ।পরে একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা যখন ১১ মাস ১৪ দিন বয়সের শিশু তখন বঙ্গবন্ধু ২য় বার কারাবরন করেন।ছাড়া পান ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারী।৩রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে কর্মবিরতি ঘোষণায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ১৯ মার্চ কর্মচারীদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে তাদের আন্দোলনে সমর্থন দেন।

২৯ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু সহ অনেক ছাত্রনেতাকে জরিমানা ও বহিস্কার সহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।১৭ এপ্রিলের মধ্যে জরিমানা পরিশোধ এবং আর আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করার শর্তে মুচলেকা দিয়ে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করার শর্ত দেওয়া হয় অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু মুচলেকা না দিয়ে ১৯ এপ্রিল এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ভিসির বাসভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করেন।পুলিশের অনুরোধ সত্ত্বেও কর্মসূচি প্রত্যাহার না করায় তাকে ১৯ এপ্রিল শেখ হাসিনার বয়স যখন ১ বছর ৬ মাস ২২ দিন তখন তাকে ৩য় বারের মত আটক করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিস্কার করা হয়।ফলে আইন বিষয়ে মাস্টার্স আর করা হয় নি।বঙ্গবন্ধু ২৭ জুন জেল থেকে ছাড়া পান।

এর মধ্যে ২৩ জুন আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠিত হলে জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের ১ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু ছাত্রলীগের আহবায়ক নঈমউদ্দীন আহমদ সহ অনেক ছাত্রনেতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের চাপে গোপনে মুচলেকা দিয়ে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করান।

এ কারনে ১৬ এপ্রিল নঈমউদ্দীন আহমদকে ছাত্রলীগের আহবায়কের পদ থেকে বহিস্কার করে শামসুল হককে ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।কিন্তু এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী খুররম খান পন্নী’র বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া এবং ২৩ জুন আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে শামসুল হকের পরিবর্তে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব পান দবিরুল ইসলাম।দবিরুল ইসলাম তখন হেবিয়াস কপার্স মামলার আসামী এবং এই মামলায় তাকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হত।কিছুদিন পর দবিরুল ইসলাম এই মামলায় গ্রেফতার হলে ফরিদপুরের মোল্লা জালাল উদ্দীনকে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে ৫ ই সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে জেলে থাকা অবস্থায়
ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন দবিরুল ইসলাম। সেক্রেটারি হন খালেক নেওয়াজ খান।সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে খাদ্য দূর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ২৭ দিন কারাগারে ছিলেন যখন তার দ্বিতীয় সন্তান শেখ কামালের বয়স মাত্র ১ মাসেরও কম।পরে ছাড়া পেয়ে আবার ২৫ অক্টোবর শেখ কামালের ২ মাস ২১ দিন বয়সে গ্রেফতার হয়ে ৬৩ দিন জেলে থেকে ২৭ ডিসেম্বর ছাড়া পান।চলমান খাদ্য দূর্ভিক্ষের মধ্যেই ১৯৫০ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সংবাদে এর প্রতিবাদে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে মাওলানা ভাসানী সহ বঙ্গবন্ধু ৫০ সালের ১ জানুয়ারী গ্রেফতার হন যখন শেখ কামালের বয়স মাত্র ৪ মাস ২৭ দিন।

শেখ হাসিনার বয়স ও তখন মাত্র ২ বছর ৩ মাস ৪ দিন।জেলে থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রুপ নিলে বঙ্গবন্ধু জেলে বসেই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বার্তা পাঠান এবং ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা রাজপথে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।পুলিশের গুলিতে সালাম,বরকত,রফিক,শফিক,জব্বার সহ অনেকে শহীদ হন।বঙ্গবন্ধু জেলে বসে ১৪ ফেব্রুয়ারী থেকে বাংলা ভাষার দাবিতে অনশন শুরু করেন এবং টানা ১৩ দিন অনশন করে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লে ২৬ ফেব্রুয়ারী তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক শামসুল হক তখনও জেলে।ফলে জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন।দায়িত্ব পেয়েই বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে দিন রাত পরিশ্রম করতে লাগলেন।শামসুল হক সাহেব জেলে প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতন এবং সদ্য বিবাহিতা সুন্দরী স্ত্রী ও সদ্য প্রসুত শিশু সন্তানের দুশ্চিন্তায় এবং পরবর্তীতে তাকে ত্যাগ করে তার সুন্দরী স্ত্রীর বিদেশ চলে যাওয়ার খবরে মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েন যে ১৯৫৩ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় তিনি পুরোপুরি একজন মানষিক রোগী হয়ে যান।

এ অবস্থায় তিনি কিছুদিন রাজনীতিতে থাকলেও মানসিক বিকৃতির কারনে পরে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন।তাই ১৯৫৩ সালের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।শেরে বাংলা,মাওলানা ভাসানী এবং সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।

১৯৫৪ সালের ১০ মার্চের নির্বাচনে ২৩৭ আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ টি আসনে বিজয়ী হয়।আওয়ামীলীগ ১৪৩ আসন পেয়ে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।মুসলিম লীগ মাত্র ৯ টি আসনে জয় পায়।ফজলুল কাদের চৌধুরি স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে পরে মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন।কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামীলীগের সাথে আলোচনা না করে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ৩ এপ্রিল ৪ সদস্যের আংশিক মন্ত্রীসভা গঠন করেন।ফলে যুক্তফ্রন্টের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

পরে ১৫ মে পূর্ন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।বঙ্গবন্ধু ১৫ মে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।আদমজীতে বাঙালী-অবাঙালী দাঙ্গার জেরে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা ২৯ মে ভেঙে দেন।বঙ্গবন্ধু ৩০ মে করাচি থেকে ঢাকায় ফিরে গ্রেফতার হন যখন তার দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালের বয়স মাত্র ১মাস ৩ দিন।

১৯৫৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি ছাড়া পান।৫৫ সালে তিনি পুনরায় আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনাকে ধারন করে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ নামকরন করা হয়।আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠায় যার ভূমিকা অগ্রগণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব কিন্তু মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার বিরোধী ছিলেন।

খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে ২৬ জন সদস্য মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার বিপক্ষে এবং মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ ৩১ জন মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার পক্ষে থাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত গৃহীত হয়।

১৯৫৫ সালে বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।কিন্তু একই সাথে মন্ত্রী ও দলের সাধারন সম্পাদক হওয়ায় সাংগঠনিক সম্পাদক ওলি আহাদের নেতৃত্বে দলের কয়েকজন সদস্য এর বিরোধীতা করে দলে বিরোধ সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালান।মূলত ওলি আহাদের দলের সাধারন সম্পাদক হতে চাওয়ার আকাঙ্খা থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাত।বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু এ কারনে দল ও দেশের স্বার্থে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে শুধু দলের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেন।

কারন বঙ্গবন্ধু জানতেন বাঙালীর স্বাধীকার আদায়ের দাবি বাস্তবায়নে একটি শক্তিশালী সংগঠনের কোন বিকল্প নেই।আর সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্যই তিনি মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দলের সাধারন সম্পাদকের পদ ধরে রাখলেন।

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা মার্শাল ল জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেন এবং সেনা প্রধান মেজর জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করলেন।অল্প কয়েকদিন পরে জেনারেল আইয়ুব খান রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জাকে হটিয়ে ২৭ অক্টোবর নিজে রাষ্ট্রপতি হন।

১১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।১৪ মাস পর বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেলেও জেলগেট থেকে আবারো আটক হন।পরে টানা ৩ বছরেরও বেশি সময় জেলে থাকার পর ৭ ডিসেম্বর ১৯৬১ সালে মুক্তি পান।১১ অক্টোবর ১৯৫৮ তে যখন গ্রেফতার হন তখন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার বয়স মাত্র ১ বছর ২৯ দিন।জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু জেনারেল আইয়ুবের কঠোর সমালোচনা করতে থাকেন।কিন্তু প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু গোপন রাজনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখেন।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ছাত্রনেতা কাজী আরেফ আহমেদ,সিরাজুল আলম খান এবং আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র সংস্থা(নিউক্লিয়াস) গঠিত হয়।কিছুদিন পর ১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু পুনরায় গ্রেফতার হন।২ জুন আন্দোলনের মুখে মার্শাল ল উইথড্র করার পর ১৮ জুন বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান।মুক্তি পেয়েই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে National Democratic Front(NDF) গঠনে ভূমিকা রাখেন।

১৯৬২ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী সাহেব অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য ১৯৬৩ সালের ১৯ মার্চ লেবাননের রাজধানী বৈরুত যান।সুস্থ হয়ে লন্ডনে তার পুত্রের বাসায় ওঠেন এবং ৬ মাস পুত্রের বাসায় অবস্থান করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু লন্ডনে তার সাথে দেখা করতে যান।কিছুদিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে পুনরায় বৈরুত যান এবং সেখানকার হোটেল কন্টিনেন্টালে ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৩ সালে রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু ঘটে।

এই মৃত্যুতে জেনারেল আইয়ুব খানের হাত রয়েছে বলে অনেকের ধারনা।সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর NDF তার কার্যকারিতা হারায়।সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে আওয়ামীলীগকে পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত হয়।এই মিটিংয়ে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যথাক্রমে আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।সামরিক শাসক আইয়ুবের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনী জোট কঅপ (COP) Combined Opposition Party গঠিত হয়।

১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারীর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কঅপ প্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নাহ অনেক ভোটের ব্যবধানে জেনারেল আইয়ুবের কাছে হেরে যান।নির্বাচনের ১৪ দিন পূর্বে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা প্রস্তাব পেশ করলে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন বর্জন করে ঢাকায় ফিরে আসেন।

১৮ মার্চ আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মত আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ৬ দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য জেলায় জেলায় জনসভা করেন।

তিন মাসে বঙ্গবন্ধু ৩২ টি জনসভা করে ৮ বার গ্রেফতার হন।৮ মে নারায়নগঞ্জের শ্রমিক সমাবেশ শেষে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন।দীর্ঘ আন্দোলন শেষে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৬৯ এর ২২ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন জেনারেল আইয়ুব খান।

১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার বিয়ের সময়ও বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন।গণঅভ্যুত্থানে ২৫ মার্চ জেনারেল আইয়ুবের পতন ঘটে।সেনা প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন।

১৯৭০ এর ৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর দাবীর মুখে ইয়াহিয়া খান নির্বাচন দিতে বাধ্য হন।নির্বাচনে আওয়ামীলীলীগ জাতীয় পরিষদের ৩১০ আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানা শুরু করেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান।৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক বক্তব্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালীর উপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।২৫ মার্চ রাত ১২ টা ২০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে পাকিস্তানের কারাগারে রাখা হয়।

২৭ শে জুলাই শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মের সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন।দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৯ মাস কারাগারে বন্দী থাকার পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়।লন্ডন ও ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।কিন্তু স্বাধীন দেশে রাষ্ট্র পরিচালনার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত হন।বঙ্গবন্ধু পরিবারের রক্তের কাছে বাঙালী চিরজীবন ঋণী থাকবে।

লেখক-
মোঃ নজরুল ইসলাম
তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা
১৬ নং ওয়ার্ড,খুলনা মহানগর।

আপনার মতামত লিখুন :