বউকে ‘বোন’ বানিয়ে বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  12:15 AM, 30 August 2020

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকরি পেতে জামালপুরের স্কুলশিক্ষক আশরাফুল আলম নিজের স্ত্রীকে জালিয়াতি করে ‘বোন’ বানিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জন্ম সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জাল করে তিনি তাঁর স্ত্রী ও খালাতো বোনকে সহোদর বোন বানিয়ে এই চাকরি বাগিয়ে নেন। পাঁচ বছর ধরে তাঁরা চাকরি করছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার রবিয়ারচর এলাকায়।

তাদের দুজনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। স্ত্রী ও খালাতো বোনকে সহোদর বোন বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবার সনদে চাকরি নেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে গোপন ছিল।
তবে সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে, এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ফলে আশরাফুল আলমসহ পরিবারের সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে গেছেন।

একই সঙ্গে আশরাফুল আলমেরও সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি হয়। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদও জাল বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৬ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে মো.আশরাফুল আলম, তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও খালাতো বোন শাপলা আক্তার একই সঙ্গে চাকরিতে যোগদান করেন। মুক্তিযোদ্ধা মো.সহিদুর রহমানের তিন সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাঁদের চাকরি হয়। কিন্তু নাসরিন আক্তার ও শাপলা আক্তার ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নয়। নাসরিন আক্তার ওই মুক্তিযোদ্ধার পুত্রবধূ ও শাপলা আক্তার ভাগ্নি। তিনি জন্ম সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে তাঁদের দুজনকে চাকরি নিয়ে দেন।
বর্তমানে আশরাফুল আলম উপজেলার মাদারেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, শাপলা আক্তার খেয়ারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নাসরিন আক্তার টুপকার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, আশরাফুল আলম উপজেলার বিভিন্ন লোককে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৮০/ ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্বগোপন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়েও অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। মো.আশরাফুল আলমের বাড়ি উপজেলার রবিয়ারচর গ্রামে । কিন্তু বাড়িতে তাঁর পরিবারের কেউ থাকে না।
প্রতিবেশীরা জানায়, আশরাফুল আলম পলাতক রয়েছেন। তার স্ত্রী নাসরিন আক্তারসহ অন্য সদস্যরা ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে শাপলা আক্তার থাকেন। যাকে আশরাফুল আলম সহোদর বোন বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়ে দিয়েছেন।
শাপলা আক্তার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সহিদুর রহমান আমার খালু। আশরাফুল আলম আমার খালাতো ভাই। আমার বাবার নাম বেলাল মিয়া ও মা মনোয়ারা বেগম। আমার বাবা একজন কৃষক ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধায় কোটায় তার চাকরি হয়েছে কিনা সেটা তিনি জানেন না। তবে প্রায় ১০ লাখ টাকায় তার খালাতো ভাই আশরাফুল আলম সহকারী শিক্ষক পদে চাকরিটি নিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে আশরাফুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ.স.ম. জামশেদ খোন্দকার বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি জানতে পারলাম। এটি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষাবিদ মো. আব্দুল হাই আলহাদী বলেন, এরকম দুর্নীতি যাতে না হয় সেক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ জন্মসনদ ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সম্পর্কিত প্রত্যয়নই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের একমাত্র দলিলপত্র নয়। একজন আবেদনকারীর সনদেও পিতা মাতার নাম উল্লেখ থাকে। তবে কি এসএসসি ও এইচএসসির সনদেও পিতার নাম পাল্টে দিয়েছে। যদি তা করে থাকে তবে সনদও জাল। আর তা না হলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যগণ মূল সনদ অবশ্যই দেখার কথা। সনদে পিতার নাম এক আর প্রত্যয়নে পিতার নাম আরেক এমনটা হলে নিয়োগ বোর্ডের চোখ এড়ানোর কথা নয়।
জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হয়েছে। জাল সনদের বিষয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সূত্রঃসময় টিভি

আপনার মতামত লিখুন :