দুপুর হলেই অসংখ্য পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত হয়ে উঠে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বর

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:27 AM, 15 February 2022

পাখি অপূর্ব সৃষ্টির নাম। প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়াতে নানান জাতের পাখি আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। রূপ ছড়িয়ে দিয়েছেন পাখির ডানায় ডানায়। শুধু স্রষ্টার আনুগত্যে নয়, পাখির সৌন্দর্যের কারণেই পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা জন্মায়। প্রকৃতি ও পাখিকে তো ভালোবাসে সবাই। কিন্তু পাখির প্রতি ভালোবাসার প্রকাশের ধরণটা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। কেউ হয়তো বাসার খাঁচায় পাখি পুষতে ভালোবাসেন, আবার কেউ খাঁচার পাখিকে মুক্ত করে দিয়ে আনন্দ পান। অনেকে আবার ভালোবাসার মানুষটিকে আদর করে পাখি সম্বোধন করে।

তেমনি এক পাখি প্রেমিক হচ্ছে শেখ লালন। চুয়াডাঙ্গা পুরাতন হাসপাতালপাড়ার ইয়াছিন শেখের ছেলে শেখ লালন। লালন ছোটবেলা থেকেই পাখির প্রতি উৎসুখ ছিলেন। দুপুর হলেই অসংখ্য পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত হয়ে উঠে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরের পদসভা ভবনের সামনে শেখ লালন-এর চা’য়ের দোকানের পাশে। পেশায় চা বিক্রেতা হলেও পাখির প্রতি শেখ লালনের অগাধ ভালোবাসা রয়েছে। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন যোহরের আযান দিলেই পাখিগুলোকে খাবার খেতে দেন। খাবারের আশায় প্রতিদিন অসংখ্য পাখির আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠে পদসভা ভবনের প্রধান ফটক। লালন প্রতিদিন ভালোবাসা নিয়ে পাখিগুলোকে খাবার খাওয়ান। আর তা দেখতে পদসভা ভবনের সামনে ভিড় করেন আশপাশ থেকে আসা অনেক মানুষ। পাখিদের এমন দৃশ্যে মুগ্ধ হন পথচারীসহ আশেপাশের মানুষ। অনেকে ছবি তোলেন, কেউবা ভিডিও করেন, আবার কেউ কেউ সেলফিও তোলেন।

শেখ লালন-এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিগত ৯ বছর আগে যখন পদসভা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়, তখন থেকেই লালন পদসভা ভবনটি দেখা শোনার দায়িত্ব পাই। কোন এক দিন পদসভা ভবনের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন লালন। দেখলেন ক’একটি শালিক পাখি খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। এ সময় তাদেরকে তিনি চানাচুর খেতে দেন। পরদিনই খেয়াল করে দেখেন একই সময় আরও অনেকগুলো শালিক পাখি এসে জড়ো হয়েছে খাবারের আশায়। সেই থেকেই লালনের পাখিদের খাবার খাওয়ানো শুরু হয়।

এখন শেখ লালন পদসভা ভবনের প্রধান ফটকের পাশেই গড়ে তুলেছেন ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। বর্তমানে তিনি ওই চায়ের দোকানের টাকায় নিজের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসারের খরচ যোগান; একই সাথে গত ৯ বছর যাবৎ রোজ দুপুরে (যোহরের আযানের পরে) ক’এক হাজার শালিক পাখিকে খাবার খাওয়াচ্ছেন লালন। এভাবেই দিনের পর দিন পাখিগুলোর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে পাখি প্রেমিক লালনের। দিন দিন এ পাখির সংখ্যা বেড়ে ক’এক হাজারে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাখিগুলো আশ-পাশসহ দূর থেকেও উড়ে এসে আমার এখানে দুপুরের খাবার খাই। তাদের খাবারের পেছনে আমার মাসে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু এতগুলো পাখি যখন আমার চারপাশে কিচিরমিচির শব্দ করে ঘুরে বেড়ায় তখন একটা স্বর্গীয় অনুভূতি আশে নিজের মনের ভেতরে। লালন-এর মত একজন মধ্যবিত্তের জন্য মাসে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পাখির পেছনে খরচ করা বেশ কঠিন হলেও তিনি এটাকে ব্যাখ্যা করেন অন্যভাবে। তার ভাষ্য, ‘আসলে আমি কিছুই করছি না। সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। তিনি চাইলে আমি আরও বেশী করে তার সৃষ্টির সেবা করার সক্ষমতা লাভ করব।’

লালন যখন শহরের বাইরে যান তখন তার চুয়াডাঙ্গা ভিজে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে আলম বাদশা পাখিগুলোকে খাবার দেয়। ছেলেকে ভবিষ্যতেও এভাবেই পাখিগুলোকে খাবার খাওয়ানোর জন্যই বলেছেন লালন।

আপনার মতামত লিখুন :