দাম ও ফলনে খুশি মেহেরপুরের ভূট্টা চাষিরা,কৃষি বিভাগ বলছে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  05:23 PM, 10 April 2023

কৃষি নির্ভর মেহেরপুরে চলতি মৌসুমে ভুট্টার ফলন ও দামে বেজায় খুশি জেলার চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলন ও খরচের বিপরীতে দ্বিগুন মুনাফা পাওয়ায় কৃষকদের কাছে বতর্মানে এ ফসলটি একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে যায়গা করে নিয়েছে। তাছাড়া গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারনেও গো-খাদ্যের চাহিদা পুরনের জন্য কৃষকদের পছন্দের চাষ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ভুট্রা চাষ। এ পণ্যটির বাজার দর ভালো পাওয়ায় অতিত সময়ের ভুট্টা চাষের কষ্টের স্মৃতি ভুলে গিয়ে খুশিতে রয়েছেন জেলার ভুট্টা চাষিরা। তাছাড়া ভুট্রা চাষ বছরের অধিকাংশ সময়ে আবাদ করা সম্ভব। তাই বতর্মান সময়েও অনেক চাষি ভুট্রা চাষ করছেন।
কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে এখন পযর্ন্ত ভুট্টা চাষ করে তেমন কোন ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি তাদের, যার ফলে খরচের বিপরীতে দ্বিগুন মুনাফার মুখ দেখছেন তারা। তাছাড়া বাজারে ভুট্রার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ভুটা চাষ তার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আর সেই সঙ্গে আবহওয়া অনুকূলে থাকাই ফলনের পাশাপাশি বাজার দর ভালো হওয়াই লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তাছাড়া বতর্মানে দেশে ভূট্রার ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে।
জেলার মাঠ ঘুরে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বতর্মানে জেলার বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে রয়েছে ছোট,বড় ও পরিপক্ব ভুট্রা ক্ষেতের সমাহার। আবার অনেক চাষি আগাম অন্য ফসল ঘরে তুলে বতর্মান সময়ে নতুন করে শুরু করছেন ভূট্টা চাষ। কেননা গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারনে গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে নতুন করে শুরু করেছেন ভুট্রা চাষ। আবার অনেক গম চাষি ভূট্রা ক্ষেত থেকে কেটে মাড়াই শেষে বাজারে বিক্রি খরচের বিপরীতে লাভবান হয়ে নতুন ফসল আবাদের পরিকল্পনা করছেন। আবার অনেকেই ফসল ঘরে তুলতে অপেক্ষায় রয়েছেন আর কিছুদিনের। বতর্মানে প্রকারভেদে প্রতি মণ ভুট্রা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে, ১ হাজার ৫০০ টাকা করে। এক বিঘা জমিতে মানভেদে ৬০ থেকে ৫০ মণ পযর্ন্ত ভুট্রার ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আর প্রতি বিঘা ভুট্রা চাষে খরচ হয়ে থাকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
জেলার গাংনী উপজেলার নিশিপুর গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, আমার ভুট্টা চাষে এক বিঘা জমিতে চাষ, বীজ, সেচ, সার ও কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয়ছে সাড়ে আট হাজার টাকা। আর বিঘায় ফলন হয়েছে ৫৮ মণ। প্রতি মণের বর্তমান বাজার মূল্য এক হাজার থেকে ১১শ টাকা। এবার আমার ভুট্টাতে বাম্পার ফলন হয়েছে।
একই উপজেলার সাহেব নগর গ্রামের কৃষক রাজা বলেন, আমি আগাম জাতের গম চাষ করেছিলাম। গম কেটে আজ থেকে বিশ আগে ভুট্রার বীজ বপন করেছি, বতর্মান বীজ থেকে গাছ বেরিয়ে বেশ বড় হয়ে গেছে। যেহেতু ভুট্রার চাষটা নামলা হয়েছে,সেক্ষেত্রে ফলন কিছুটা কম হবে। তারপরও সব ঠিকঠাক থাকলে আমার আসা বিঘা জমিতে ৪০ মণ ফলন পাবো।
একই উপজেলার দেবিপুর গ্রামের ছাগল ও গরু খামারি আবু সাঈদ বলেন, মাস তিনেক পর আসছে কোরবানির ঈদ। অথচ এখনি ঘাস,খুদ,ভুসি ও চেলটির দাম অনেক বেড়ে গেছে। যার ফলে আমাদের পশু পালনের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। তাই গরু, ছাগলের খাদ্য হিসেবে ভুট্রা ও এর গাছ স্লাইস পদ্ধতির মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখছি। গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে। সে জন্য একবার ভুট্রার আবাদ শেষ করেও পুনরায় নতুন করে আবার চাষ করছি।
বামন্দী বাজারের ভুট্রা ব্যাবসায়ী জিয়াউর রহমান বলেন, বতর্মান বাজারে ভুট্রার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি মণ ভুট্রা প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২”শ টাকা করে। অনেক চাষি আছে যারা ভালো দাম পাওয়ার আসায় কাচা ভুট্রা ক্ষেত থেকে মাড়াই করে আমাদের কাছে বিক্রি করতে আসছে। তাদের ভুট্রা গুলো আবার ৯”শ টাকা থেকে ৯”শ ৫০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। কেননা এগুলো শুকালে ওজন কমে যায়। সব দিক দিয়ে হিসেব করলে তুলনামূলক আড়তে এবছর ভুট্রার আমদানিও বেশি। আবার দামও বেশী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে চাষ হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর অধিক। তাছাড়া ভূট্টার বাজারে যথেষ্ট চাহিদা আছে। আবার বতর্মান বাজার মূল্য ও বেশ ভালো। আবহওয়া অনুকূলে থাকাই ফলন ব্যাপক হয়েছে।আশা করি আগামীতে ভূট্টা চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে।

আপনার মতামত লিখুন :