গাংনী আওয়ামীলীগের বিভেদ, অনৈক্যের রাজনীতি আর কত দিন?

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  02:37 PM, 20 April 2022

রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে। থাকবে প্রতিদ্বন্দিতাও। তবে সেটা হবে অবশ্যই আদর্শের। প্রতিযোগীতা বা প্রতিদ্বন্দিতা হতে হবে দলের গঠনতন্ত্র মানা না মানার। প্রতিযোগিতা হবে জনকল্যাণমূলক ও জনসেবামূলক কর্মকান্ডের। প্রতিযোগিতা হবে দল ও আদর্শের প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্যের। রাজনীতির ভিত্তি হতে হবে সাম্য ও মানবিক মূল্যবোধ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দলের গঠনতন্ত্র এমনকি মানবিক মূল্যবোধ উপেক্ষিত হয়ে যখন কেবলমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি কিংবা নেতা, জনপ্রতিনিধি হওয়া মূখ্য হয়ে যায় তখন রাজনীতিতে বিভেদ এবং দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। বর্তমান গাংনীর আওয়ামীলীগের রাজনীতি এর উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।

মেহেরপুরের গাংনী ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির ঘাঁটি। ১৯৭৯ সালে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার আমলে আওয়ামীলীগের চরম দুঃসময়ে এবং ১৯৮৬ সালে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের সময়েও আওয়ামীলীগের প্রার্থী জিতেছিল গাংনীর মাটিতে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জনমতকে সম্পূর্ণরুপে উপেক্ষা করে থানা আওয়ামীলীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের পরিবর্তে আওয়ামীলীগ জনবিচ্ছিন্ন জেলা আওয়ামীলীগ নেতা হিসাব উদ্দিনকে মনোনয়ন দিলে প্রথম গাংনীর আওয়ামীলীগে বিভেদের রাজনীতি শুরু হয়। তবে সেই বিভেদ অতটা প্রকট ছিলনা। আওয়ামীলীগের ৮০% নেতাকর্মী এবং ৯৫% সাধারন সমর্থক সেই নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে তার বিপুল বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী সেদিন মকবুল হোসেনের পক্ষে থাকায় নৌকার প্রার্থী হিসাব উদ্দীনের শোচনীয়ভাবে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। নির্বাচনের পরে নৌকার প্রার্থী হিসাব উদ্দীন গাংনী থেকে একপ্রকার বিতাড়িত হন। ফলে ঐ নির্বাচনের পর ক্ষণস্থায়ী বিভেদের রাজনীতির সমাপ্তি ঘটেছিল। মকবুল হোসেন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেও নেতাকর্মীরা সেদিন তাকেই বেছে নিয়েছিল।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ড আগের ভুল সিদ্ধান্তকে শুধরে নিয়ে গণমানুষের নেতা মকবুল হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে মকবুল হোসেন এমপি থাকাকালীন রাস্তাঘাট নির্মাণ সহ প্রত্যাশিত অবকাঠামো উন্নয়ন করতে না পারা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চক্রান্তে সেই নির্বাচনে গাংনীর আওয়ামীলীগ পরিবার ঐক্যবদ্ধ থাকলেও মকবুল হোসেনের মত শক্তিশালী প্রার্থী পরাজিত হন। নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়লে দলকে সংগঠিত করতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির রাষ্ট্র ক্ষমতার মেয়াদে ২০০৪ সালের সেই সম্মেলনে দলের বাঘা বাঘা নেতাদের হারিয়ে কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা সাহিদুজ্জামান খোকন এবং এম এ খালেক।

নতুন কমিটির নেতৃত্বে গাংনীতে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলে। বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও রাজপথ ছিল আওয়ামীলীগের দখলে। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদের নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এম এ খালেক মনোনয়ন পেলে। মকবু্ল হোসেন দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তার সমর্থক কর্মিরা খালেকের নির্বাচনী প্রচারণায় পদে পদে বাধা দেয়। নির্বাচনী প্রচারণার মাইক ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু গাংনীর আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে মকবুল ও খালেক দুটি পৃথক বলয়ের সৃষ্টি হয় এবং স্থায়ী বিভেদের সৃষ্টি হয়।

ফলশ্রুতিতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামীলীগের জয়জয়কার হলেও গাংনীতে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মকবুল হোসেন খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। মকবুল হোসেন গ্রুপের পক্ষ থেকে এই পরাজয়ের জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন এবং সাধারন সম্পাদক এম এ খালেক কে দায়ী করা হয়। তবে ঐ নির্বাচনে খোকন কিংবা খালেক কেউই প্রার্থী হননি কিংবা প্রকাশ্যে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ করেন নি। খোকন এবং খালেকের পক্ষ থেকে সে সময় দাবি করা হয় তারা দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া আওয়ামীলীগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দলের প্রার্থী এ্যাডভোকেট শফিকুল আলমের বিজয় ছিনিয়ে আনার মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের পরাজয়ের গ্লানি থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে যাওয়ায় সরকারের মেয়াদ শেষে
শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয় এম এ খালেককে। সে নির্বাচনে মকবুল হোসেন আবারো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন এবং দল মনোনিত প্রার্থী এম এ খালেককে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মত এমপি নির্বাচিত হন। ফলশ্রুতিতে খালেক-মকবুল বিভেদ চূড়ান্ত আকার ধারন করে। মকবুল হোসেন দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হয়ে রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণে আগের মেয়াদের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে বেশকিছু দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করেন। নির্মাণ করেন অসংখ্য রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট। তবে খালেক-খোকনকে কোণঠাসা করার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। এতে করে ইমেজ সংকটে পড়েন তিনি। দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর সাথে দূরত্ব তৈরি হয় এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই নেতার। বারবার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া মকবুল হোসেন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। মনোনয়ন বঞ্চিত হন ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়া এম এ খালেক ও।

মকবুল-খালেক দ্বন্দ্বের কারনে তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির শাহিদুজ্জামান খোকনকে প্রথমবারের মত দেওয়া হয় নৌকার মনোনয়ন। খালেক-মকবুল এক হয়ে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নৌকার মাঝি থাকেন সাহিদুজ্জামান খোকন। দলের কঠোর অবস্থানের কারনে খালেক, মকবুল কেউই বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন নি সেবার। সাংগঠনিক দক্ষতায় ও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে সবাইকে দৃশ্যমান ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হন খোকন। নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মত এই আসনে নৌকার মাঝি হিসেবে বিজয় ছিনিয়ে আনেন সাহিদুজ্জামান খোকন। এমপি নির্বাচিত হয়ে বহু সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষের নজর কেড়েছেন তিনি। গাংনীর উন্নয়নে সংসদে তার কণ্ঠ থাকে সবসময় উচ্চকিত। তবে নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত মকবুল হোসেন গ্রুপের নেতাকর্মীরা এমপি সাহিদুজ্জামান খোকনকে স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং সংসদ সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ খালেক ব্যালেন্স করে চলেন উভয় গ্রুপের সাথে। কখনো মকবুল আবার কখনো খোকন গ্রুপকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে নিজের অবস্থান ঠিক রাখেন এই নেতা।

সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল গাংনী উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে এমপি খোকনের বিরুদ্ধে সভাপতি প্রার্থী হন এক ডজন। কিন্তু সম্মেলনে ২২ জন কাউন্সিলরের ২২ জনই সভাপতি পদে শাহিদুজ্জামান খোকনের প্রতি তাদের জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন। ১৮ বছর পরে  বহুল আকাঙ্খিত জাঁকজমকপূর্ণ এই সম্মেলনে শাহিদুজ্জামান খোকন পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদে দলের সভাপতি মনোনীত হন কাউন্সিলে। হতাশ হন খোকন বিরোধীরা। সাংবাদিক সম্মেলন করে নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি সাধারন সম্পাদকের মেয়াদ এক সপ্তাহ না পেরোতেই কমিটি বাতিলের দাবি সহ সভাপতি সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। দলের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির বেশিরভাগ নেতাকর্মীর মতে তাদের এসব দাবি মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং কল্পনাপ্রসূত। তাদের মতে নেতৃত্বে আসতে না পারার কারনেই তাদের এসব ভিত্তিহীন এবং মস্তিষ্কপ্রসূত বায়বীয় অপপ্রচার।

তাদের দাবি শাহিদুজ্জামান খোকন ১৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করছেন। দলের সভাপতি হওয়ার ১৫ বছরের মধ্যে কোনদিন শুনিনি তিনি স্বাধীনতাবিরোধীর সন্তান। তিনি দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরে হঠাৎ রাজাকারের সন্তান হয়ে গেলেন। গাংনীর বেশিরভাগ পদধারী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী দাবি করেন এমপি খোকন যখন ২০০৪ সালের কাউন্সিলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। তখন তিনি এ ধরনের দাবি করেন নি। এমনকি কেউ কেউ দাবি করেন ঐ সম্মেলনে মকবুল হোসেন সাহিদুজ্জামান খোকনকেই সমর্থন দেন। যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন তখন কেন প্রতিবাদ করেন নি, তখন কেন তাকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছিলেন? কাজেই ১৮ বছর পরে এসে তাদের এসব দাবি কেবল অযৌক্তিক ই নয় হাস্যকর ও বটে।

দুই পক্ষের বক্তব্য এবং পাল্টা বক্তব্য ও কর্মসূচির কারনে এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন এবং তার বিরোধী পক্ষ অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে। এই অবস্থা দল ও সরকারের জন্য চরম বিব্রতকর। সম্প্রতি কথা কাটাকাটির জেরে যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন কর্তৃক গুলি ছোঁড়ার মত ঘটনা ও ঘটেছে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এসব ঘটনায়। উপজেলা আওয়ামীলীগের পুনরায় নির্বাচিত সভাপতি সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন এবং নবনির্বাচিত সাধারন সম্পাদক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মখলেছুর রহমান মুকুল যেমন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের পরীক্ষায় বারবার উত্তীর্ণ তেমনি তাদের বিরোধী পক্ষে অবস্থান নেওয়া মকবুল হোসেন বলয়ের বর্তমান পৌর মেয়র আহমেদ আলী, ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন, মজিরুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন এবং মোশাররফ হোসেন ও দলের দুঃসময়ে দল ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রত্যেকে এই দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সুতরাং দলের স্বার্থে সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরী।

দল করলে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত কিংবা নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সবারই মনে রাখা উচিত আওয়ামীলীগে দেশরত্ন শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়। আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা  মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, ৬০’র দশকের তুখোড় নেত্রী আমেনা বেগম, ডক্টর কামাল হোসেন, মোস্তফা মহসীন মন্টু, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডাকসুর সাবেক জনপ্রিয় ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ৯০ ও ৯৬ এর গণআন্দোলনের অন্যতম রুপকার হাবীবুর রহমান হাবীব সহ অসংখ্য নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামীলীগ থেকে, নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েছেন। যেসব নেতা মনে করেন একমাত্র তারাই আওয়ামীলীগ করতে পারবেন, অন্য কেউ নয় তারা দলের জন্য শক্তি নন বরং অভিশাপস্বরুপ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী সকল ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক মানুষকে এই দল করার অধিকার দলের প্রস্তাবনা ও গঠনতন্ত্রে দেওয়া হয়েছে। সাহিদুজ্জামান খোকন এবং  মখলেছুর রহমান মুকুল ৯৬ কিংবা ২০০৯ সালের পরে আওয়ামীলীগে আসেন নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস না করলে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী আওয়ামীলীগের চরম দুঃসময়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামীলীগের রাজনীতি কোন স্বার্থে করেছেন? নিশ্চয়ই কোন কিছু পাওয়ার স্বার্থে নয়। সুতরাং ব্যক্তিস্বার্থে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি না করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে সকল বিভেদ, গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব ভুলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হোন।

আগামি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও অপরাজনীতি রুখে দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জনগণের সমর্থনে টানা চতুর্থবারের মত ক্ষমতায় আনতে এর কোন বিকল্প নেই। বিকল্প ভাবলে আওয়ামীলীগ করার অধিকার থাকবেনা। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় কথাটা মাথায় রাখুন সবসময়। অন্যথায় ভাসানী, তর্কবাগীশ, আমেনা, কামাল, মন্টু, মনসুর, হাবীবদের পরিণতি ভোগ করতে হবে। কারো জন্যই এই পরিণতি কাম্য নয়। বরং বিভেদহীন ঐক্যবদ্ধ গাংনীর আওয়ামীলীগ পরিবারই আমাদের কাম্য। কিন্তু আদৌ কি আসবে সেই দিন?

লেখক- মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা, গাংনীর সন্তান।

আপনার মতামত লিখুন :