গাংনীর সহড়াতলা দোকান থেকে তুলে নিয়ে মাদক মামলা ॥ প্রতিবাদ করায় ইউপি সদস্য আসামি।।এলাকাবাসীর ক্ষোভ

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:58 PM, 26 February 2021

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী সহড়াতলা গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে লাল্টু নামের একজনকে তুলে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে মাদক দ্রব্য দিয়ে মামলা দেয়ার প্রতিবাদ করায় বজলুর রহমান হেবা নামের স্থানীয় ইউপি মেম্বরকে আসামী করা হয়েছে। নির্বাচিত জন-প্রতিনিধির নামে উদ্দেশ্যমুলক মামলা দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে গ্রামবাসীর মাঝে। স্থানীয়দের দাবী বিজিবি সদস্যরা নিরীহ লোকজনকে আটক করায় গ্রামবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে তেমনি অপরাধ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে বিজিবি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্রামবাসিরা যা বলছে তা সঠিক নয়।

সরেজমিনে গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সবার মাঝে বিরাজ করছে আতংক। কৃষি সমৃদ্ধ এ গ্রামটিতে কাজ কর্মে পড়েছে ভাটা। সীমান্ত সংলগ্ন মাঠে কেউ কাজে যেতে পারছে না হয়রানী ও গ্রেফতার আতংকে। গত ২১ ফেব্রুয়ারী সকালে সহড়াতলা গ্রামের আহম্মেদ আলী ওরফে খেদু মিয়ার চায়ের দোকানে বসে ছিলেন গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে লাল্টুসহ অনেকেই । এসময় লাল্টু নামের একজনকে ডেকে নিয়ে ক্যাম্পে যান বিজিবি সদস্যরা। কয়েক ঘন্টা পরে স্থানীয়দের মুখে ঘটনার সত্যতা জানতে বিজিবির সাথে যোগাযোগ করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। তার সাথে কথা হয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিষয়টি জানানো হবে। অথচ ঘন্টা তিনেক পরে লাল্টুকে মাদক দ্রব্য দিয়ে থানায় সোপর্দ করা হবে এমন কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীকে শান্ত করতে চেষ্টা ও বিজিবর সাথে যোগাযোগ করে ওই ইউপি সদস্য। ১৫ বোতল ভারতীয় মদ দিয়ে গাংনী থানায় সোপর্দ করে সহড়াতলা বিজিবি। লালটুর সাথে বসে চায়ের দোকানীসহ স্থানীয়রা ইউপি সদস্যকে জানান লাল্টু চায়ের জন্য আমাদের সাথে বসেছিলেন। তাকে বিজিবি’র সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে । এবিষয়ে খোঁজখবর নিতে ক্যাম্পে কয়েকবার যোগাযোগ করেন ইউপিসদস্য বজলুর রহমান। দোকান থেকে তুলে নিয়ে মাদক দিয়ে মামলা দেয়ার বিষয়ে এক প্রকার বাকবিতন্ড হয় তাদের মাঝে।
সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এ মামলার আসামি করা হয় সহড়াতলা গ্রামের বাসিন্দা ও তেঁতুবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বর বজলুর রহমান ওরফে হেবাকে।
একদিকে লাল্টুকে মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ অপরদিকে মেম্বরের নামে মিথ্যা মামলায় গ্রামের মানুষের মাঝে আতংক আর ক্ষোভ বিরাজ করছে।
লাল্টুকে যে দোকান থেকে বিজিবি সহড়তলা ক্যাম্প সদস্যরা আটক করেন সেই চায়ের দোকানী আহম্মেদ আলী খেদু জানান, সকালে গ্রামের লাল্টু, তারা মালিথা, শাহাদুল ইসলাম, আতাউল হক, আমির উদ্দীনসহ অনেকে বসে চা পান করছিলেন। ওই সময় ৫ জন বিজিবি সদস্য এসে লাল্টুকে ডেকে নিয়ে আসে। প্রথমে কি কারণে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা বলেনি বিজিবি। পরে ১৫ বোতল মদ দিয়ে তাকে চালান করা হচ্ছে মর্মে খবর পাওয়া যায়।
কৃষক মনিরুল জানান, যে সময় লাল্টুকে নিয়ে যায় বিজিবি সেসময় তার কাছে কিছু ছিল না। গ্রামের লোকজন ইউপি মেম্বারকে জানালে তিনি বিজিবি ক্যাম্পে যান এবং এর প্রতিবাদ করেন। এতে রাগান্বিত হয়ে ইউপি মেম্বর বজলুর রহমানকেও পলাতক আসামী হিসেবে দেখানো হয়।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি কায়েম উদ্দীন জানান, লাল্টু এক সময় মাদক পাচার করতো। বছর তিনেক আগে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে। ঘটনার দিন চায়ের দোকান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর মাদক দিয়ে চোরাচালানের নাটক সাজানো হয়। একই কথা জানালেন স্থানীয় গৃহবধু মুসলিমা, শরিফা ও বিউটিয়ারা খাতুন।
গ্রামের হেলাল ড্রাইভার জানান, নিরীহ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে মাদক দিয়ে চালান দেয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। গ্রামের লোকজন ও ইউপি মেম্বর বজলুর রহমান এর প্রতিবাদ করায় মেম্বরকে পলাতক আসামী দেখানো হয়েছে। এভাবে গ্রামের সরল সহজ মানুষকে ধরে যেভাবে হয়রানীমুলক মামলা দেয়া হচ্ছে তাতে গ্রামে বাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।
গাংনীর করমদী কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হারুনর রশীদ জানান, যেভাবে মানুষকে ধরে নিয়ে চোরাচালানী বানানো হচ্ছে তা শুধু দুঃখজনক ও আতংকের বিষয় নয়, এতে করে অপরাধ ও অপরাধির সংখ্যাও বেড়ে যাবার আশংকা রয়েছে।

গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, ৪৭ বিজিবি সহড়াতলা ক্যাম্পের নায়েক জামাল খানের দায়ের করা মামলায় দ’ুজনকে আসামী করা হয়েছে। ওই মামলায় লাল্টুকে ১৫ বোতল মদসহ থানায় সোপর্দ করে। একই মামলায় ইউপি মেম্বর বজলুর রহমানকে পলাতক দেখানো হয়। মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
৪৭ বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার শাহজাহান জানান, মাদকসহ লাল্টুকে আটক করা হয়। , গ্রামের লোকজন বিজিবি সম্পর্কে যে কথা বলছে তা সঠিক নয়।

 

আপনার মতামত লিখুন :