গাংনীর ঐতিহাসিক নিদর্শন গোসাইডুবি মসজিদ

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  02:51 PM, 08 April 2022

দেয়ালে গঁজিয়ে ওঠা বটগাছের শেকড় বাকড়ে গ্রাস করেছে গোটা মসজিদ। দেয়ালের আস্তরণ আর ইট খসে পড়েছে। কিন্তু পরিত্যক্ত দেয়ালে তৎকালীণ কারুকার্য খচিত নকশা তৈলহীন মাটির প্রদ্বীপের মতো জলছে। মসজিদটির চিহ্ন বিলুপ্ত প্রায়। এখন আর কেউ উপাসনার জন্য সেখানে যায় না।

গোসাইডুবি মসজিদটির অবস্থান মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার করমদি গ্রামে।

জ্বীন, ভূতের বসবাস ভেবে একা সাহস করে কেউ সেখানে যেতে না পারায় সেটির সংস্কার কাজও হয়নি। ফলে মসজিদটি এখন ধ্বংসের পথে। মসজিদের অবশিষ্টাংশ বুকে আগলে রেখেছে বিশাল আকৃতির এক বটবৃক্ষ।

মসজিদটির পুরাতন অবয়ব ধরে সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।

জানা যায়, ১৮৬৪ সালে উপজেলার করমদি গ্রামের হাজি দশরাত বিশ্বাস মসজিদটি নির্মাণ করেন। পায়ে হেঁটে হজ্ব করার পর ধর্মীয় উপাসনার জন্য মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এরপর মসজিদটির আশপাশে গড়ে ওঠে বসতি। তার মৃত্যুর পর মসজিদটি দেখভাল করার কেউ ছিল না। অন্যদিকে জ্বীন, পরীর আছর হতে পারে এমন গুজবে এবং হনুমানের অত্যাচারে ওখানকার বসতিরা অন্য স্থানে চলে যান। ওই এলাকায় জনবসতি না থাকায় নির্মাণের পর থেকেই মসজিদটি সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।

মসজিদটির দেয়ালে গজিয়ে উঠেছে একটি বটগাছ। গাছটি বিশাল আকৃতি ধারণ করেছে। বটের শেকড় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মসজিদটি অস্তিত্ব বিলীন করে ফেলে। বিশাল আকৃতির বটবৃক্ষের শেকড়ের ফাঁক দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে মসজিদের কিছু অংশ। তার আশপাশে পড়ে আছে পাহাড়ি দৃশ্যের মাটির ভিটা। বংশ পরম্পরায় হাজি দশারতের মৃত্যুর পর তার ছেলে কফিল উদ্দীন বিশ্বাস ওই এলাকা দেখাশোনা করতেন। কফিল উদ্দীন বিশ্বাসের মৃত্যুর পর ছেলে আব্দুৃল জলিলের নামেই মসজিদ এলাকাটি আব্দুল জলিলের বটতলা নামে পরিচিত।

এলাকাবাসী জানান, গোসাইডুবি মাঠের ভেতরে মসজিদটি তৈরি করায় তার নাম দেয়া হয় গোসাইডুবি মসজিদ। সন্ধ্যার পর আর ওই গাছের নিকট দিয়ে কেউ মাঠে যায় না।

মসজিদটির কাছে গিয়ে দেখা যায়, চুন, সুরকীর গাথুনী ও আস্তরণ খসে পড়লেও এর গায়ে যে কারুকার্য খচিত নকশা ছিল তা বিলীন হয়ে যায়নি। মসজিদটি এখন আর সংস্কার করাও পথ নেই। কয়েক বছর পর কাগজে কলমে গোসাইডুবি মসজিদ থাকলেও এর অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

স্থানীয় প্রবীণদের থেকে জানা যায়, মেহেরপুর জেলার এটিই প্রথম মসজিদ নামে পরিচিত।

করমদি গ্রামের আবু জাফর বলেন, আমরা গল্পে শুনেছি, জেলার এটি প্রথম মসজিদ নামে খ্যাত। যেহেতু এর অস্তিত্ব এখনো বিলীন হয়ে যায়নি তাই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।

করমদি জামে মসজিদের ঈমাম মো. খাদিমুল ইসলাম বলেন, কয়েকশ বছরের পুরাতন জরাজীর্ণ এই মসজিদটি সংস্কারের জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। মসজিদটি পুনঃসংস্কার করা হলে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচলিত ভুত-প্রেতের যে কুসংস্কার আছে তাও দূর হবে। মানুষ শুন্য এলাকায় আবারও মানুষ চলাচলে সাহস পাবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য তোহিদুল ইসলাম বলেন, ভিন্ন জেলার মানুষ গোসাইডুবির মসজিদ দেখতে আসেন। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে অনেক ভয় রয়েছে। ওই এলাকায় একা কেউ যেতে পারেনা। মসজিদটি জেলার ঐহিসাকি মসজিদ হিসেবে সরকারি উদ্যোগে সংস্কার করা হলে পুরাতন মসজিদটি যেমন সৌন্দর্য ফিরে পাবে, তেমনই এলাকার মানুষের মধ্যকার আতংক আর ভয়ের অবসান হবে।

তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস বলেন, মসজিদটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী উদ্যোগ নিলে আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা করবো। তবে চেষ্টা বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হলে বিভিন্ন দপ্তরের নজরে আসবে। তাহলে সরকারি ভাবেও এটি হয়তো সংস্কার কিংবা সংরক্ষণের ব্যবস্থা হতে পারে। তাছাড়া জ্বীন-ভুতের ভয়ে এলাকার মানুষ ওইদিকে আর যায় না তাই সংস্কারের উদ্যোগ নেইনি।

উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তদারক কর্মকর্তা (সুপারভাইজার) মনিরুর ইসলাম বলেন, ২০০৫ সালের দিকে মেহেরপুর জেলার একমাত্র ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে সংস্কারের জন্য গোসাইডুবি মসজিদটি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। আস্তে আস্তে হয়তো এক সময়কার এই মসজিদ খাতা-কলম ও মেহেরপুরের ইতিহাসে থাকবে কিন্তু বাস্তবে তার অস্তিত্বের দেখা মিলবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানম বলেন, জেলার ইতিহাসে গোসাইডুবি মসজিদের নাম উল্লেখ রয়েছে। মসজিদের অনেক কাঠামো এখনও টিকে রয়েছে বলে স্থানীয়দের মুখে শুনেছি। মসজিদটি আমার উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। আমি সংস্কারের চেষ্টা করবো।

আপনার মতামত লিখুন :