গাংনীতে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণ অভিভাবকহীন

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:12 AM, 16 February 2023

ঠিকাদারের প্রতিনিধিদের ইচ্ছেমাফিক নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে গাংনী উপজেলা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের নির্মান কাজ এগিয়ে চলেছে। নানা অভিযোগে স্থানীয় এমপি কাজ বন্ধ করে দিলেও অদৃশ্য ক্ষমতায় তা আবারও শুরু হয়েছে। অপরদিকে কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা বিষয়টি অবগত থাকলেও মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন। ফলে নির্মান সম্পন্ন হওয়ার আগেই ধ্বসে পড়ার ঝুকি দেখা দিয়েছে। এসব তথ্য জানিয়ে এলাকার কয়েকজন জানিয়েছেন, এ নির্মান কাজটি হচ্ছে অভিভাবকহীনভাবে।
ঘটনাস্থলে জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে খুঁজে পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করতে গেলেও বিপাকে পড়ছেন। ঠিকাদারের লোকজন সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন যা বলার প্রকৌশলীদেরকে বলেন। অথচ কাজের কাছে প্রকৌশলীরা অদৃশ্য। ফলে অভিভাবকহীন এ কাজ কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বিষ্মিত এলাকার মানুষ।
তবে গাংনী উপজেলা প্রশাসন থেকে উর্দ্ধতন কতর্ৃপক্ষের কাছে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
জানা গেছে, সারা দেশের ন্যায় স্থানীয় যুবসমাজকে খেলামুখি করতে ও জনগনের দাবীর মুখে সরকার গাংনীর সাহারবাটি ফুলবল মাঠে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়। উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় মোট পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যায়ে এ নির্মাণ কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএস অ্যান্ড এমটি জয়েন্ট ভেন্সার (জেভি)। যা বাস্তবায়নে রয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আর এর স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। কাজ শুরুর প্রথম থেকেই নিম্নমানের রড পাথর ও বালু ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনে যান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। তিনি কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পান। এসময় তিনি কাজ বন্ধ রাখাসহ নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন। কয়েকদিন পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবারো কাজ শুরু করেন ওই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে।
জানা গেছে, স্টেডিয়ামে নির্মান হচ্ছে গ্যালারী ও প্যাভিলিয়ন। নির্মান কাজের বেজ ঢালাই থেকে পিলার পর্যন্ত যে রড ব্যবহার করা হয়েছে তা ঢাকার স্থানীয় রড হিসেবে পরিচিত। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে লোকাল রড ব্যবহার করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় অনেক প্রকৌশলী। তবে এ রড বুয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে দাবি করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল একজন।
এদিকে ঢালাই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ময়লা মিশ্রিত বালু। ২.৫ এফএম বালু ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও লোকাল বালু ব্যবহারেই দেদারসে ঢালাই দেওয়া হয়েছে বেজ। এছাড়াও বালু ওয়াশ করার নির্দেশনাও উপেক্ষিত।
এদিকে ঢালাই কাজে ব্যবহৃত পাথরের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নির্মান কাজের পাশে জড়ো করা পাথরের বেশিরভাগ নিম্নমানের অভিযোগ উঠলে তা দিয়ে ঢালাই বন্ধ করা হয়। নিম্নমান স্বীকার করে দ্রুত পাথর সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা। তবে এখনও পর্যন্ত সেই পাথর নির্মান কাজের পাশেই পড়ে রয়েছে। এমপির নির্দেশনায় বদল করা পাথরের সাথে নিম্নমানের পাথর দিয়ে ঢালাই চলছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অপরদিকে ঢালাইয়ে বালু, সিমেন্ট ও পাথরের অনুপাত ঠিক রাখা হচ্ছে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন নির্দিষ্ট অনুপাতের বাইরে নিজেদের ইচ্ছেমাফিক ঢালাই কাজ সম্পন্ন করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারের লোকজন প্রকৌশলীদের দোহাই দিয়ে কাজ করেই যাচ্ছন। কিন্তু কোন প্রকৌশলীকে কাজের পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কার কাছে আর কোথায় অভিযোগ জানালে নিম্নমানের কাজ থেকে রেহাই মিলবে তা ভেবে প্রতিকার পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবেই গাংনীবাসীর প্রাণের দাবি একটি স্টেডিয়াম হচ্ছে। কিন্তু অভিভাবকহীন এ কাজে সরকার সম্পর্কেই মানুষ বিরুপ মন্তব্য করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনী খাতুন বলেন, অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের কাছে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত এর সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

 

আপনার মতামত লিখুন :