গাংনীতে মিনি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লিনিক, অনিরাপদ গর্ভপাত

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  06:30 AM, 04 March 2021

চিকিৎসক হিসেবে কোনও ডিগ্রি নেই। নেই সরকারি কোন অনুমোদন। মাত্র ২ বছর প্যারামেডিক কোর্স করেই প্রায় ১০ বছর ধরে নিজ বাড়িতে গর্ভপাতের মতো অবৈধ কাজ করেন মিনিয়ারা। অপ্রত্যাশিত প্রেগনেন্সি হলেও গাংনীর মিনি আপা একটি আস্থার নাম। গাংনী উপজেলাপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঠিক নাকের ডগায় চৌগাছা পাড়ায় এই ব্যবসা কীভাবে চালাতেন মিনিয়ারা ওরফে মিনি আপা। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। এছাড়াও গাংনী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেকেই এই রোগী সরবরাহের কাজে আছে বলে জানা গেছে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিছনে চৌগাছা পাড়াতে স্বামী-স্ত্রী শিপলু-মিনির বাড়িতে চলছে এভাবেই ভ্রুণ হত্যার কাজ। মাত্র ২ বছরের প্যারামেডিক কোর্স করেই কোন রকম নিয়মনীতি না মেনে বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, মিনির স্বামী শিপলু ইসমলামী এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় কর্মরত। পাশাপাশি রোগী সরবরাহের কাজও করে। নিজের বাড়িতে খুলে বসেছে অবৈধ ব্যবসা। বাইরে থেকে অবশ্য বোঝার উপায় নেই। বাড়ির সামনে সাদামাটা গলি, আছে অন্যসব স্বাভাবিক বসবাস করার মত বাড়ি। টিনের গেট ও টিনের ছাদ আধাপাকা এই বাড়িতে রয়েছে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম। সেখানেই চলে অবৈধ গর্ভপাতের কাজ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, আমরা জানতামই না, মিনির ঘরের ভেতরে নার্সিংহোমের মতো এত এলাহি ব্যবস্থা রয়েছে! মাঝে মধ্যে দেখতাম কেউ কেউ আসা যাওয়া করে।

বিষয়টি শিকার করে মিনিয়ারা ও তার স্বামী শিপলু জানান, মাসে ৪-৫ টা রোগী হয়। প্রায় ৩ বছর যাবত করছি এই কাজ। যারা সমাজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে করে তারাই আসে আমাদের কাছে। কোন রকম প্রশিক্ষন বা সরকারি অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইরে শিপলু বলেন, আমার স্ত্রী প্যারামেডিকে ২ বছর কোর্স করেছে, তাছাড়া আর কোন প্রশিক্ষন বা সরকারি অনুমোদন নেই।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, ৫-১০ হাজার টাকা আবার রোগীর অবস্থা বুঝে এর চাইতেও বেশি টাকায় তারা এই কাজ করছে। অতিজঘণ্য কাজ উল্লেখ করে তারা বলেন, নবজাতক মানে মানুষ। এই ভাবে ভ্রুন নষ্ট করা মানুষ হত্যার সমান। যদিও রোগীর সম্মতিতেই হয় বাচ্চা নষ্ট করার কাজ। তারপরও অবৈধভাবে অনিরাপদ উপায়ে করা কতটুকু স্বাস্থ্য সম্মত এমন প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই।

এ বিষয়ে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনীয়া আক্তার জানান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া গর্ভপাত করানো ঠিক না। অসাবধানতা বসত অনেক সময় পরবর্তিতে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা হারাতে পারে রোগী। গর্ভপাতের সময় রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এতে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যু হতে পারে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. রিয়াজুল আলম জানান, এটা আমাদের অগোচরে হচ্ছে। এটার কোন অনুমোদন নেই। আমরা অতি শিঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহন করবো। গাংনীর থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, এই ধরনের ঘটনা গাংনী ঘটছে এটা আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।

 

আপনার মতামত লিখুন :