গাংনীতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণের অভিযোগ

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:55 PM, 06 February 2023

মেহেরপুরের গাংনীতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। পাথর, বালু ও রড খুবই নিম্নমানের। এছাড়াও সিমেন্ট বালু ও পাথর মিশ্রনেও অনিয়ম। কাজ শুরু হওয়ার পর পরই এসকল সামগ্রী পরিবর্তন করে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান। কয়েক দিন অতিবাহিত হতেই অদৃশ্য ইশারায় পূনরায় নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে সঠিকভাবে ও সমঝোতার মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।জানাগেছে, স্থানীয় যুব সমাজকে খেলামুখি করতে সারা দেশের ন্যায় উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের(২য় পর্যায়) নেন সরকার। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাস্তবায়িত প্রকল্পের মোট পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যায়ে এ নির্মাণ কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএস অ্যান্ড এমটি (জেভি)। উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম সাহারবাটি ফুলবল মাঠে তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়। এবং স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। কাজ শুরুর প্রথম থেকেই নিম্নমানের রড পাথর ও বালু ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনে যান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। তিনি কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পান। এসময় তিনি কাজ বন্ধ রাখাসহ নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন।
কয়েকদিন পরেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবারো কাজ শুরু করেন ওই নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে। সাদা পাথরের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কালো পাথর যা অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও যে সমস্ত সাদা পাথর স্তুপ করে রাখা হয়েছে তা মৃত বা অকেজো। ২.৫ এফএম বালু ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও লোকাল বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সাথে মিশ্রণটি সঠিক পরিমাপে হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন একাধিকবার অভিযোগ করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোন কর্ণপাত করছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লোকাল বালুর সাথে সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। বালি পাথর মাপের জন্য ফ্যারা ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও বাশের তৈরী ঝুড়ি ব্যবহার করায় পাথর বালু ও সিমেন্টের পরিমাপ আনুপাতিকহারে সঠিক হচ্ছে না। তাছাড়া রডের ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের। এর পরিমাপও সঠিক নয়। বালু ওয়াশ করার করা থাকলেও করা হচ্ছে না। ধুলা মিশ্রিত বালু ব্যবহার হচ্ছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কয়েকজন জানান, কাজ শুরুর প্রথম দিকে যে রড বালু ও পাথর আনা হয়েছিল তা নিম্নমানের হওয়ায় এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন নির্মাণকাজ দেখতে আসেন এবং অনিয়মের কথা বলে মালামাল সরিয়ে নেয়ার আদেশ দেন। এর মধ্যে ওই পাথর বাদ দিয়ে কালো পাথর দিয়ে কাজ শুরু করতে বলায় নতুন করে কালো পাথর আনা হয়েছে কিন্তু কালো পাথর ব্যবহারের নির্দেশনা নেই। তবে অযোগ্য বা মৃত পাথরগুলো সরানো হয়নি। তাছাড়াও যে রডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তা এমপি সাহের অনুমতি নিয়ে বিশেষভাবে কাজ চলছে। পরবর্তীতে নতুন করে রড আনা হবে।
শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের কনসালটেন্ট সাদ্দাম হোসেন বালু ওয়াশ করা হয়েছে বলে দাবী করে জানান, নিয়মানুযায়ি কাজ করা হচ্ছে তবে নিম্নমানের পাথর সরিয়ে নেয়া হবে। তাছাড়া সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের নির্দেশে কালো পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বালু পাথর ও সিমেন্টের আনুপাতিক হার সঠিক না হওয়ার ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনী খাতুন জানান, স্টেডিয়াম নির্মাণে কোন দুর্ণীতি সহ্য করা হবে না। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
বন্ধ কাজ পুনরায় শুরু করার ব্যাপারে সাহিদুজ্জামান খোকন এমপির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরুর কারণে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পাথর ও বালু পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানানোর পর কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। তবে যেহেতু রড গেঁথে তার কাজ শুরু করা হয়েছে সেটি পরিবর্তন সহজ নয় এবং পরে উন্নত মানের রড ব্যবহারের শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :