অবহেলায় রোগী মৃত‌্যুর ঘটনায় সালাম ক্লি‌নি‌কের না‌মে আদাল‌তের মামলা‌

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:05 AM, 31 January 2023

মেহেরপুরে চিকিৎসকের অদায়িত্বশীলতার কারণে অপারেশন টেবিলে প্রসুতির মৃত্যু ঘটনার অভিযোগ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(গ) ধারায় আমলযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে এক স্বপ্রণোদিত আদেশে অভিযুক্ত ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত সহ অন্যন্যা ক্লিনিকের মানদন্ড যাঁচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) মেহেরপুর আমলী আদালতের বিচারক প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট এসএম শরীয়ত উল্লাহ এই আদেশ দেন।আদালত ২২ জানুয়ারী শহরের দারুস সালাম ক্লিনিকের অপরাশেন টেবিলে প্রসুতি সুমাইয়া খাতুনের মৃত্যু ঘটনা তদন্ত সহ জেলার সকল ক্লিনিকগুলোর বৈধ্যতা যাঁচাই ও কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষমতা ও সঠিকতা আছে কিনা তা তদন্ত করে ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) কে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে ১৯৮২ চিকিৎসক অনুশীলন এবং প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরোটরী রেগুলেশন অধ্যাদেশ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এবং বিধি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখতে বলেছেন।

আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন যে- প্রায়ই মেহেরপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসায় অবহেলা এবং বিধি বর্হিভূত ভাবে ক্লিনিক পরিচালনার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এর সাথে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত। একজন অসুস্থ মানুষ চিকিৎসক ও ক্লিনিকের উপর আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করে নিজের শরীরের উপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার প্রদান করেন। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসকের অবহেলা একজন রোগীর সাথে প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের শামিল। যা দন্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়া উক্ত অবহেলা একজন ব্যাক্তির জীবনকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। যা দন্ডবিধির ৩০৪ (ক), ৩৩৬, ৩৩৭ ও ৩৩৮ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অধিকন্ত ১৯৮২ চিকিৎসক অনুশীলন এবং প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরোটরী রেগুলেশন অধ্যাদেশ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ অনুযায়ী নির্ধারণ মানদন্ড অনুসরণ না করলে সেটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গন্য করেছেন। সেহেতু সিভিল সার্জন মেহেরপুর কে মেহেরপুর সদর থানাধীন সকল বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগষ্টিক সেন্টারের তালিকা ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। সেগুলো উপরোক্ত আইনের ব্যাতয় ঘটিয়ে পরিচালিত হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।

অভিযোগ ২২ জানুয়ারী রবিবার রাত্রে মেহেরপুর সরকারী কলেজের সামনে দারুস সালাম ক্লিনিকে অপারেশন টেবিলে সুমাইয়া নামের এক প্রসুতির মৃত্যু হয়। সুমাইয়ার বাড়ি মুজিবনগর উপজেলার ঢোলমারী গ্রামে। তার স্বামীর নাম মিলন হোসেন। পরিবারের অভিযোগ- ক্লিনিক মালিক চিকিৎসক আব্দুস সালাম নিজেই অপারেশন করতে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটে। অপারেশনের সময় কোন এনেসথেসিস্ট চিকিৎসক না থাকায় প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন সংবাদ আদালতের নজরে এলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ জারী করেন।

আদেশে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্টানটির লাইসেন্স আছে কিনা, যথাযত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্লিনিকটি অনুমোদিত হয়ে থাকলে সেটার নবায়নকৃত কিনা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস সহ সংশ্লিষ্ট সকল কতৃপক্ষের ছাড়পত্র এবং অনুমোদন আছে কিনা, ক্লিনিকটিতে সার্বক্ষনিক ডাক্তার আছে কিনা, অপারেশন পরিচালনাকারী ডাক্তারের সার্জারী ডিগ্রী ছিল কিনা, অপারেশনের সময়ে এনেন্থেসিয়োলজিষ্ট হিসাবে কোন উপযুক্ত ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন কিনা, প্রি এনেস্থেসেয়িক চেকআপ সহ অপারেশনের জন্য নিদিষ্ট মানদন্ড অনুসরণ করা হয়েছিল কিনা, সহায়ক নার্সদের উপযুক্ত ডিগ্রী ছিল কিনা এছাড়া চিকিৎসক অনুশীলন এবং প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরোটরী রেগুলেশন অধ্যাদেশ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ অনুযায়ী নির্ধারণ মানদন্ড অনুসরণ করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ মতামত সহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :