নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতির বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ রকম অনেক নোবেল বিজয়ী আছেন, যারা কারাগারে বন্দি আছেন।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহু নোবেল বিজয়ী আছেন, যাদের পরবর্তীতে কারাগারেও যেতে হয়েছে। একজন নোবেলজয়ীর বিষয়ে আপনারা এত উদ্বেগে আছেন। তার অপরাধটা আপনারা দেখেন না। তিনি যে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে ব্যবসা করেছেন সেটি উনি করতে পারেন কিনা সেটি বিবেচনা করবেন না?
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আইন না মানলে তো মামলা হবেই। বিচার বিভাগ তো স্বাধীন। আপনারা (বিবৃতিদাতা) নিজেদের পক্ষে গেলে সাধুবাদ জানান। কিন্তু নিজেদের পছন্দের মানুষ অন্যায় করলে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে বিবৃতি দেন। নোবেলজয়ী যার জন্য আজ বিদেশিরা বিবৃতি দেন তিনি একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজ দেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। আমরা সেটি করেছি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখেন না। ১৪ বছর আগে বাংলাদেশ কোথায় ছিল, এখন কোথায় আছে? আপনারা আমাদের নির্বাচন নিয়ে এত উপদেশ দেন। খালেদা জিয়ার সময়কার ঢাকা-১০ আসন ও মাগুরার উপনির্বাচন নিয়ে তো কোনো বিবৃতি দিলেন না। তখন আপনাদের উদ্বেগ কোথায় ছিল? আপনারা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেন। জিয়াউর রহমান হ্যাঁ-না ভোট করেছিলেন। তখন কোথায় ছিল আপনাদের উদ্বেগ।
এর আগে গত ২২ আগস্ট রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত ১৫তম ঐতিহাসিক ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা যোগদান করে।
করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব এবং পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী বিধিনিষেধের পর এটিই ছিল প্রথম সশরীরে উপস্থিতির ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সম্মেলনে যোগ দেন।
২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন। পরে তিনি আফ্রিকার দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ দূত সম্মেলনে’ যোগ দেন। তিনি হিলটন স্যান্ডটন হোটেলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজে যোগ দেন।
২৪ আগস্ট তিনি ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগের (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ এবং ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ দেন।
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে গত বৃহস্পতিবার স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে শেখ হাসিনা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা ডা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইমা সুল্লুহু ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের মধ্যেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে রোববার (২৭ আগস্ট) সকালে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ রাব্বী আহমেদ খালিদ
মোবাইলঃ ০১৭১৯-৩৯৩৩৪৪
ই-মেইল: rabbi.meherpur1@gmail.com