২০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি মুজিবনগরের রসিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়
মামলা জটিলতাই ২০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বিদ্যালয়। ফলে বিদ্যালয়টি হয়েছে মাদক সেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। চুরি হয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া একটি গ্রাম। সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। গ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে চুয়াডাঙ্গার নাটুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভৈরব নদী পার হয়ে ৪ কিলোমিটার পর মুজিবনগরের বাগোয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩ কিলোমিটার দূরে টেংরামারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দূর হলেও সেগুলোতেই রশিকপুর গ্রামের বাচ্চারা পড়াশোনা করে। ২০০৩ তিন সালে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এর আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিবনগরের রসিকপুর গ্রামে ০৩ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করে দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন। বিদ্যালয়টির নাম দেয়া হয় রশিদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই বছর দেশে ৫৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে একই প্রজেক্টের আওতায় নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৫৩টি বিদ্যালয় চালু হয়। কিন্তু রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।ফলে বিদ্যালয়টি হয়েছে মাদক সেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মাদক সেবিরা নিরাপদে মদ, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজাসেবীদের দখলে প্রায় কোটি টাকার একাডেমিক ভবনটি। মামলা জটিলতায় স্কুলটি চালু না হওয়ায় মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ভবনটির কক্ষগুলো। চুরি হয়েছে দামি আসবাবপত্র, খসে পড়ছে ইট, দরজা ও জানালার গ্রিলগুলো। বিদ্যালয়টির জন্য রশিকপুর গ্রামের সুলতান শেখ তার স্ত্রী আম্মাতন নেছা ৩ বিঘা ৫ কাঠা, আমির শেখ ১০ কাঠা এবং রতন শেখ ১০ কাঠা জমি দান করেন।
রশিকপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, ম্যানেজিং কমিটি ও জমিদারার সাথে মামলার ঝামেলার কারণে বিদ্যালয়টি কি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। বিদ্যালয়টি চালু না হওয়ার কারণে গ্রামের গ্রামের ছেলে মেয়েরা দূরদূরান্ত গিয়ে লেখাপড়া করে। গ্রামের সবুজ হোসেন জানান, বিদ্যালয়টি চালু হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে এসে স্কুলে লেখাপড়া করতে পারবে। স্কুলের আশেপাশে বাজারের সৃষ্টি হবে এতে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। শিক্ষিত যুবক তরিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি চালু হলে আমাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো। গ্রামের মানুষের শিক্ষার হারবার তো। বিদ্যালয় চালু হলে শিক্ষার মান উন্নতি হয়ে গ্রামের সুনাম বয়ে আনতো।
স্কুল ছাত্র আশরাফুল জানান, আমার বাড়ির রশিকপুর কিন্তু আমি লেখাপড়া করি পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গার নাটদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রত্যেকদিন যাতায়াত বাবদ আমার ৫০ টাকা খরচ হয়। যদি গ্রামের স্কুল টি চালু হতো তাহলে পায়ে হেঁটে স্কুল করতে পারতাম অন্যদিকে বাবার অনেক খরচ বেঁচে যেত। বাগোযান মাধ্যমিক বিদ্যালয় দ্বাদশ শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্র জানান, সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় রাস্তা পার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। বিদ্যালয়টি চালু থাকত তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। বিদ্যালয়টি চালুর কথা জানান একই এলাকার স্কুল ছাত্র রুবেল সৈকত, সাইফুল, মিলন, টুটুল সহ আরো অনেকে।
জমির মালিক আম্মাতুন্নেসা জানান, আমার স্বামী দেনমোহর বাবদ আমাকে তিন বিঘা জমি দিয়েছিলেন। গ্রামের গণগানো ব্যক্তির আশায় গিয়েছিলেন এই তিন বিঘা জমির উপর বিদ্যালয় তৈরি করে পাশে মাঠে আমাকে পাঁচ বিঘা জমি কিনে দেবেন। বিদ্যালয় নির্মাণ হয়ে গেল, শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তুতি ও চলছে। গ্রামের মন্ডল মাতব্বররা আমার স্বামীর নাম বাদ দিয়ে অন্যজনকে ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে রাখেন। সেই সাথে শিক্ষক নিয়োগের নামে মোট অংকে টাকা নিতে থাকেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। জমির পরিবর্তে জমি চাইতে গেলে আমাকে অপমান অপদস্থ করলে আমি বাধ্য হয়ে ২০০৪ সালে মেহেরপুর জেলা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করি।২০১১ সালের ৯ মে মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।
মেহেরপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্বাস আলী জানান, দীর্ঘদিন মামলা জটিলতায় বিদ্যালয়টি থাকার কারণে “ইন” নম্বর বসানো সম্ভব হয়নি। তবে একাধিকবার উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসক এ নিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে তদন্ত করেছেন।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস জানান,শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে বিদ্যালয়ের সব কাগজপত্র ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই বিদ্যালয়টি চালু করা হবে।
তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস, আর জেলা প্রশাসক মোঃ শামিম হাসান বলছে বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই।