হুইল চেয়ারে বসে ক্লাস নিচ্ছেন আকলিমা
১৮ বছর আগে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাস উল্টে আহত হয়ে দুই পা হারান দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা আকলিমা খাতুন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও আর সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তবুও অচল পা নিয়ে জীবন সংগ্রামে লড়াই করে সফল হয়েছেন। তিনি এখন সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
জীবন সংগ্রামী আকলিমা মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার রাইপুর গ্রামের মৃত জােয়াদ আলীর কন্যা। তিনি রাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত।
জানা যায়, আকলিমা জন্মগত ভাবে প্রতিবন্ধী নন। ২০০৬ সালের ৬ মার্চ মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পায়ে আঘাত পান অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী আকলিমা খাতুন। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে তার চিকিৎসা করিয়েও পা দুটি আর সচল করা যায়নি। দুই পা অচল হলেও থেমে থাকেননি আকলিমা খাতুন। হুইল চেয়ারে বসে চালিয়েছেন লেখাপড়া, জীবন সংগ্রামে হয়েছেন সফল।
২০১০ সালে আকলিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি পান।
জীবনের এই গল্পটা এতােটা সহজ ছিলাে না আকলিমার। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে এতােদূর। জীবনের সেই দুঃসময়ে মা-বাবা ও ভাইয়েরা পাশে ছিলেন বলেই এতােদূর আসা সম্ভব হয়েছে।
অনেকেই বলেছিলেন অযথাই ওর পড়াশোনার পিছনে টাকা খরচ করে কী লাভ। প্রতিবন্ধীরা যে সমাজের বোঝা নয়। তাদেরকে একটু সুযোগ করে দিলে সমাজে তারাও যে ভালো ভূমিকা রাখবে সেটারই উদাহরণ আকলিমা। বাড়িতে হুইল চেয়ারে চলাচল করেন। আর স্কুলে আসার সময় ব্যাটারিচালিত হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন। স্কুলে হুইল চেয়ারে বসে ক্লাস নেন তিনি। এভাবেই চলছে তার জীবন।
আকলিমা মনে করেন প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত তার প্রতিবন্ধী, অক্ষম সন্তানকে বোঝা মনে না করে ভালো কিছু করার সুযোগ করে দেওয়ার।
একই কথা বললেন, রাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজিয়ারা খাতুনসহ, সহকারী শিক্ষিকারা।
আকলিমা ২০১৮ সালে নাটাের সদর উপজেলার দক্ষিণপুর মহররম আলীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী মহররম আলী বর্তমানে লিগ্যাল এইডে কর্মরত রয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী সংসার তাদের ভালাে ভাবেই চলছে।
আকলিমা খাতুনের মা মমতাজ খাতুন জােসনা বলেন, আমার মেয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। দুটি পা অচল হলেও লেখাপড়া বন্ধ করেনি। এখন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছে। সে তার সংসারের নিজের সব কাজ নিজেই করে, যেটি পারে না তখন আমি সাহায্য করি।
আকলিমার ছােট ভাই আলামিন হােসেন বলেন, বেশ কয়েকটি হাসপাতালে গিয়ে তার মতো দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়া অসংখ্য মানুষকে দেখে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় আমার বোন। ফলে আবার লেখাপড়া শুরু করে চাকরি করছে।
আকলিমার সহকর্মীরা জানান, আকলিমা ম্যাডাম ভালো ভাবে ক্লাস নেন। সময় মতো স্কুলে আসেন। তিনি খুব আন্তরিক মানুষ। কােনো ছাত্রছাত্রী স্কুলে না আসলে হুইল চেয়ারে করে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নেন।
আকলিমা শারীরিক ভাবে অসুস্থ হলেও আর পাঁচজনের মতোই নিজের কাজ নিজে করেন এবং প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করে থাকেন। তিনি কোনদিন দেরি করে স্কুলে আসেননি।
গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নানির উদ্দীন বলেন, আমি আকলিমার বিষয়টি জানি তিনি আমাদের গর্ব। তাকে দেখে সমাজের আরো যারা এরকম সমস্যায় রয়েছেন। তারা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি।