স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেহেরপুর ভাবনা’র উদ্যোগে শিশুদের নিয়ে আনন্দের আহার
মেহেরপুর ভাবনা একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন, সংগঠনটি শিক্ষা ও সচেতনতা, স্বাস্থ্যসেবা এবং মানবিক সহায়তার মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ বাড়ানোর জন্য তরুণ এবং শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সামনে থাকে পথশিশুরা। তারা শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত থাকে। সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়, সব সময় ব্যাতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করে। সেই ধারাবাহিকতা এবার সংগঠনটি মেহেরপুরের অসহায় শিশুদের নিয়ে আয়োজন করে “আনন্দের আহার”।শনিবার সকালে মেহেরপুর জেলার সেভেন সি রেস্টুরেন্ট মেহেরপুর ভাবনা সংগঠনের উদ্যেগে এই আয়োজন করা হয়।
আনন্দের আহারে আসা শিশু রিফাত তার মনের ভাব প্রকাশ করে বলে সে ক্লাস টুতে পড়ে, তার বাবা একজন রিক্সাচালক, দিন আনে দিন খায়। তার বন্ধু নিলয় তার বাবার সাথে রেস্টুরেন্টে বসে চিকেন ও বার্গার খেয়েছিল সেই গল্প রিফাতকে শোনায়।
রিফাত তার বাবার কাছে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার আবাদার জানালে তার বাবা তাকে অভাবের কথা শোনায়। রিফাত রেস্টুরেন্টে খেয়ে না যেতে পারায় তার অনেক মন খারাপ হয়। তবে আজ সে রেস্টুরেন্টে পিৎজা, বার্গার চিকেন ও অনেকে মুখরোচক খাবার খেয়ে অনেক আনন্দিত।
সামর্থ্য না থাকায় যে সকল শিশু রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে পারে না। টিভিতে কিংবা সামর্থ্যবান বন্ধুর কাছে গল্প শুনেছে পিৎজা, বার্গার, চিকেনসহ মুখরোচক খাবারের। রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্যর কাছে হার মেনে মন খারাপ করে থাকে অনেক শিশু। এসকল শিশুদের কথা চিন্তা করে ভাবনা নামের সংগঠনটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর সুযোগ করে দেয়।
মেহেরপুর ভাবনা সংগঠনের কিছু নিতি মালা আছে যেমন: যেখানে পথশিশুরা বিনামূল্যে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। তবে শর্ত হলো, তাদের এখানে পড়াশোনা করতে হলে যে কোনো ভালো কাজ করতে হবে যেমন- মা-বাবা বা প্রতিবেশীকে সাহায্য করা, নিজের কাজ নিজে করা, নিজের স্বাস্থ্য সচেতন থাকা, বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করা। ছোট এই পথশিশুরা নিয়মিত তাদের ভালো কাজগুলো ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করে রাখে। কে কত বেশি ভালো কাজ করতে পারল সবার মাঝে থাকে এই প্রতিযোগিতা, যার মাধ্যমে তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা হয় সামাজিক মূল্যবোধের নিয়মিত চর্চার হাতেখড়ি।
এর পাশাপাশি তাদের বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণও সরবরাহ করা। লেখাপড়ার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের পূর্ণ মানসিক বিকাশ লাভ এবং প্রতিভা অন্বেষণ করার জন্য বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে তাদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পথশিশুদের নিয়ে প্রতিবছর ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ করা, মেহেদি উৎসব পালন করা হয়; যার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও ঈদের আনন্দের শামিল হতে পারে। পথশিশুদের জীবন মান উন্নয়ন তাদের অধিকার রক্ষা এবং সুশিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে মেহেরপুর ভাবনা সংগঠন স্বেচ্ছাসেবীরা বদ্ধপরিকর।
এ সময় সেখানে সংগঠনের সদস্য রাতুল বলেন আমরা মেহেরপুর ভাবনা সংগঠন পক্ষ থেকে আগামী শীতে অসহায় পথশিশুদের মাঝে কম্বল বিতরণ, পথশিশুদের নিয়ে আয়োজিত হয় পিঠা উৎসব করব। দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিশ্চিত ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করাই যার লক্ষ্য মেহেরপুর ভাবনা সংগঠনের।
আরো বলেন আজ আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশুদের ৩০ জন শিশুদের নিয়ে তাদেরকে একবেলা আহারের ব্যবস্থা করেছি। শুধু তাই নয়, এই সংগঠনটি বিভিন্ন সময় যেমন বন্যা দূর্গতদের সহযোগিতা, বছরের দুই ঈদে শিশুদেরকে নতুন পোশাক ও সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এসময় সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক সাদাত আসসামি, সদস্য, কোহেলী খাতুন, বাছেরা খাতুন, অনিকা, সিয়াম, নাজমুল, উদয়, রলিপ, তুষারসহ অন্যান্য সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।