স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার আঁখির মানবেতর জীবন
স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার আঁখি খাতুন (২৫)। দিনের পর দিন সহ্য করতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। বর্তমানে দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে আঁখি।
আঁখি গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের মৃত আসলাম আলীর মেয়ে। ২০১৭ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা শাহপুর গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে আয়নাল হকের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। কিন্ত তার বৈবাহিক জীবনটা সুখের হয়নি। আদরের পরিবর্তে পেয়েছে স্বামীর নিষ্ঠুর নির্যাতন।
আঁখি খাতুনের পরিবারের লোকজন বলছে, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবীতে আঁখিকে নির্যাতন করে আসছে। সেই সাথে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে দুই সন্তানের জন্ম দেয় আঁখি। বড় ছেলে তৌফিক (৫) ও ছোট ছেলে তাওহীদ (৬ মাস)। ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর আঁখি যখন ৫ মাসের গর্ভবতি তখন তার স্বামী আঁখিকে যৌতুকের দাবীতে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। দিনের পর দিন মাসের পর মাস স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেহেরপুর কোর্টে একটি মামলা করে। পরে তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাসের শর্তে আঁখি আবারো যায় স্বামীর বাড়ি। কিন্তু যৌতুক লোভী স্বামী আয়নাল কয়েক দিন বাদে আবারো নির্যাতন শুরু করে। ২০২২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী হত্যার উদ্দেশ্যে আবারো মারধর শুরু করে। আঁখির আত্ম চিৎকারে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। নির্যাতনের যথার্থ বিচার পেতে আঁখি আবারো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেহেরপুর কোর্টে মামলা করে।
এদিকে আয়নাল তার পরকীয়া প্রেমিকার সাথে দ্বিতীয় বিবাহ করে। আঁখির অভিযোগ এ ঘটনায় সহযোগীতা করেছে আয়নালের বড় ভাই আশাদুল হক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসমত আলী।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলায় আয়নাল হক গত ১১ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করলে আদালত আয়নালকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। দুই সন্তান নিয়ে আঁখি এখন তার মায়ের বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নারী ও যৌতুক লোভী আয়নাল ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে আঁখি ও তার পরিবারের লোকজন।
এ বিষয়ে আয়নালের বড় ভাই আশাদুল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আঁখি খাতুন একজন বদ মেজাজী মেয়ে। এক সন্তান হওয়ার পর তাদের মধ্যে তালাক হয়ে যায়। বাচ্চাটির কথা চিন্তা করে আবারে তারা সংসার পাতে। কয়েক মাস ভাল থাকার পরে আবারো সমস্যা শুরু হয়।
সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসমত আলী জানান, তাদের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন সংস্থায় ও কোর্টে অভিযোগ ও মামলা চলমান আছে। একাধিক সালিশ মিমাংসাও হয়েছে তবে এখনও কোন সমাধানে আসা সম্ভব হয়নি।