“শেখ কামালের আত্মত্যাগ, যুগ যুগ ধরে আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে”
মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর প্রথম ব্যাচের স্পেশাল ট্রেনিংয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডেট অফিসারদের অন্যতম, মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর এডিসি, মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট শেখ কামাল শুধুমাত্র পিতার পরিচয়েই পরিচিত ছিলেন না। বরং সস্ত্রীক ছিলেন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম পথিকৃৎ। ছিলেন ছাত্রলীগের একজন কর্মি, জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্যতম সদস্য। ৬৬’র ৬ দফা আর ৬৯’র গণঅভ্যূত্থানেও ছিলেন রাজপথে সক্রিয়।
পিতা মুজিবের ভাষা আন্দোলন থেকে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মীর্জা ও জেনারেল আইয়ুব খানের মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলনে বার বার গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করায় পিতৃ স্নেহ বঞ্চিত অবুঝ শিশু কামালের আত্মত্যাগই বা কম কিসের? ১৯৪৯ সালের ৫ আগষ্ট জন্ম নেওয়া শেখ কামালের আত্মত্যাগের ইতিহাস তো শুরু তার জন্মের এক মাস না পেরোতেই। শেখ কামালের এক মাসেরও কম বয়সে ৪৯’র সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গ্রেফতার হয়ে টানা ২৭ দিন জেলবন্দী পিতা মুজিবের অবর্তমানে প্রথম পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হলেন সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শেখ কামাল। ৪৯’র ২৫ অক্টোবর দ্বিতীয় বার পিতা মুজিবের আদর, ভালবাসা থেকে বঞ্চিত শেখ কামালের আত্মত্যাগ আর একটু দীর্ঘ। ২ মাস ২১ দিন বয়সের শেখ কামালকে এবার পিতা ছাড়া থাকতে হল দীর্ঘ ৬৩ দিন। অতঃপর ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি শিশু কামালের বয়স যখন মাত্র ৪ মাস ২৭ দিন তখন তৃতীয়বারের মত পিতা মুজিব গ্রেফতার হয়ে জেলে থাকলেন টানা ২ বছরেরও বেশি সময়। জেলখানায় অমানবিক নির্যাতন আর টানা ১১ দিন অনশনের পর ভগ্ন শরীর নিয়ে পিতা মুজিব মুক্ত হলেন ৫২’র ২৭ শে ফেব্রুয়ারি।
৫৪ সালের ৩০ মে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা ভেঙে দেওয়ার পর পুনরায় বঙ্গবন্ধুকে করাচী থেকে ঢাকা ফেরার পর গ্রেফতার করা হল। ৫ বছরেরও কম বয়সী শেখ কামালকে চতুর্থবারের মত পিতার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হতে হল। দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস কারাভোগের পর যখন ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়ে বাড়ীতে আসলেন তখন শিশু কামালের কাছে পিতা মুজিব যেন নিতান্তই এক অচেনা মানুষ। শুধুই বড় আপা ‘হাসুর’ আব্বু!
১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মীর্জা কর্তৃক ‘মাশাল ল’ জারির পরে ১১ অক্টোবর যখন বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় গ্রেফতার করা হল, তখন প্রায় ৯ বছর বয়সী শেখ কামালের জন্য এটা ছিল বুঝতে শেখার পর প্রথম আঘাত।টানা ৩ বছরেরও বেশি সময় বঙ্গবন্ধুর এই জেলজীবন ছিল সম্ভবত বালক শেখ কামালের জন্য সবচেয়ে কষ্টের।এভাবে বাঙালীর ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীকার,স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম সবখানেই শেখ কামালের আত্মত্যাগ তাকে করেছে মহিমান্বিত।
৭২ তম জন্মবার্ষিকীতে বহুগুণে গুনান্বিত জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
মোঃ নজরুল ইসলাম, কলাম লেখক ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা।