শিশু আবির হত্যাকাণ্ড শুধু মুক্তিপণের জন্য না অন্য কিছু
(ফলোআপ)মুক্তিপণের দাবিতে শিশু আবির হোসেনকে (১২) শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গ্রামের মাঠে অপহরণ করার পর রাত সাড়ে বারোটার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মিনাপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় মিনাপাড়া গ্রামের নুহু মেম্বারের ছেলে হামিম হোসেন ও মিরাজ হোসেনের ছেলে মুজাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
নিহত আবির হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরিষাডাঙ্গা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আসাদুল ইসলামের ছেলে। মায়ের সাথে মিনাপাড়া গ্রামে নানা রেজাউল হকের বাড়িতে বসবাস করত আবির।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হামিম ও মুজাহিদের সাথে মোটরসাইকেলযোগে গ্রামের মাঠে ঘুরতে যায় আবির হোসেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের লোকজন চিন্তিত। এক পর্যায়ে হামিম ও মুজাহিদ গ্রামের মানুষকে জানায় আবিরকে মাঠের মধ্যে অজ্ঞাত একজন ধরে নিয়ে গেছে। স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা হেমায়েতপুর পুলিশ ক্যাম্পে অবগত করে।
হেমায়েতপুর ক্যাম্পের এএসআই দেলোয়ার হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মিনাপাড়া গ্রাম থেকে হামিম ও মুজাহিদকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাদের দুজনকে নিয়ে গ্রামের মানুষ সহ মিনাপাড়া মাঠের পাট ক্ষেতের মধ্যে আবিরের সন্ধান শুরু করা হয়। এর আগেই আবিরের মোবাইল নম্বর থেকে আবিরের পিতা ও মায়ের মোবাইলে কল করে অজ্ঞাত অপহরণকারীরা এক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
মুক্তিপণ দিতেও রাজি হন পরিবারের সদস্যরা। তবে কখন কিভাবে এক টাকা নেওয়া হবে সে বিষয়ে তারা স্পষ্ট কিছু জানায়নি। নিরুপায় আবিরের মা ও তার নানার পরিবারের সদস্যরা বিচলিত হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। আবিরের বাবার কাছ থেকে খবর পেয়ে মিনাপাড়া গ্রামের পৌঁছান আবিরের চাচা উজ্জল হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মুক্তি পণ চাওয়া আবিরের মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পান তারা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। টাকার বিনিময়ে হলেও বুকের সন্তানকে ফেরত পেতে আকুল মিনতি প্রকাশ করেন আবিরের মা রোজিনা খাতুন। কিন্তু অপহরণকারীদের তরফ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না।
এদিকে এসআই দেলোয়ার হোসেন অভিযুক্ত মুজাহিদ ও হামিমকে নিয়ে পুরো মাঠ তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে একটি পাট ক্ষেতের মধ্যে আবিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাটের ছাল, লতা-পাতা দিয়ে আবিরের হাত-পা বাঁধা ছিল। পাটের ছাল দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
এদিকে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজতে নেয়া মুজাহিদ ও হামিমকে অপহরণ চক্রের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। অপহরণ ও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ভুক্তভোগী পরিবারকে আশ্বাস দেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুজাহিদ ও হামিম বয়সে কিশোর হলেও তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় প্রভাবশালী মেম্বার নুহুর ছেলে হওয়ায় হামিমের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি এলাকার লোকজন। ফলে অনেক অপরাধ করেও তারা নিস্তার পেয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের নমনীয়তার কারণে এই দুই কিশোর বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
বছরখানেক আগে ওই মুজাহিদ হোসেন গ্রামের পার্শ্ববর্তী আলমডাঙ্গার হাটুভাঙ্গা গ্রামে মোটরসাইকেল চুরি করে। স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করার পর তার স্বীকারোক্তিতে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে। কিশোর বয়স তাই বিষয়টি অপরাধ হিসেবে না দেখে ভুল বলে বিবেচনা করে মুজাহিদকে গ্রামের লোকজন ক্ষমা করে দিয়েছিল। গতকালের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মুজাহিদের এই অপরাধের বিষয়টি উঠে আসে।
এদিকে মরদেহ উদ্ধারের পর অভিযুক্ত দুই কিশোরের পিতা মিরাজ ও নুর মেম্বার আত্মগোপন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রামের অনেকেই।