লকডাউনে একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছে গনপরিবহন শ্রমিকরা
গত ৫ ই এপ্রিল শুরু হওয়া এক সপ্তাহের লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিল ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন করে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেন সরকার। পরে আবারো বাড়িয়ে তা আগামী মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে চলতি মাসের ২৪ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু গণপরিবহন ছাড়া সবকিছুই খোলা রয়েছে।
এদিকে লকডাউনের শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন এতে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছে গণপরিবহনের শ্রমিকেরা পাচ্ছে না কোন আর্থিক সাহায্য বা ত্রাণ। এভাবে কতদিন চলবে তা কারোরই জানা নেই। নতুন করে লকডাউন ঘোষণায় কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গিয়েছে গণপরিবহনের শ্রমিকদের। কাজ না থাকায় অনিশ্চয়তায় ভিতরে জীবনযাপন করছেন তারা। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ঈদের আগে মোটর গাড়ির চাকা ঘুরতে পারে এমন প্রত্যাশায় দিন গুনছে হাজার শ্রমিক।
মেহেরপুর গণপরিবহনের একাধিক শ্রমিক বলেন, আমরা গণপরিবহনের শ্রমিকেরা কি অপরাধ করেছি সরকারের কাছে? যে আমাদের এত কষ্ট দিচ্ছে সরকার। দীর্ঘদিন গাড়ি পড়ে থাকায় গাড়িতে জং ধরে গিয়েছে, এগুলো কেউ দেখার নেই, যত অত্যাচার সব গণপরিবহনের শ্রমিকদের উপর। তিনারা আরো বলেন, সবকিছুই চলছে রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক, ট্রাক সহ সবরকম দোকানপাট খোলা রয়েছে বন্ধ শুধু গণপরিবহন। আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়েছি সামনে ঈদ, এখন রোজার মাস চলছে, ছেলেমেয়েদের মুখে একটু ভালো ইফতারও তুলে দিতে পারছিনা। পরিবহন শ্রমিকরা কি খেয়ে বাঁচবে?
মেহেরপুর রয়েল কাউন্টার এর কাউন্টার মাস্টার মহিদুল ইসলাম মহিদ বলেন, এক সপ্তাহ, এক সপ্তাহ করে এক মাস কেটে গেল, সবকিছুই খোলা রয়েছে শুধু গণপরিবহনই বন্ধ। আমরা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এমনকি শ্রমিক ইউনিয়ন থেকেও কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি, এভাবে চলতে থাকলে আমরা না খেয়ে মরে যাব। তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি একমাত্র গণপরিবহনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করে কারণ ৪০ জনের জায়গায় ২০ জন নিয়ে চলছিল গণপরিবহন।
মেহেরপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক শ্রমিক কল্যাণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ বলেন, সাধারণ শ্রমিকরা কি অবস্থায় আছে এটা বোঝার মত ক্ষমতা নেই স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের। গণপরিবহন শ্রমিকেরা প্রতিদিন ৩শ থেকে ৫শ টাকা ইনকাম করে এখন যদি একমাস বসে থাকে তাহলে তারা চলবে কিভাবে? সকলের বাসায় সন্তানাদি, বউ, মা-বাবা রয়েছে তাদের দুবেলা-দুমুঠো খেতে দেবে কিভাবে? এই লকডাউন সরকারের একটি অপরিকল্পিত লকডাউন, এটা কি শুধু পরিবহন শ্রমিকদের জন্য? সরকারি বেসরকারি ব্যাংক গুলো দেখেন সেখানে পা ফেলার জায়গা নাই প্রতিটা ব্যাংকে ৪শ থেকে ৫শ লোক জমায়েত করে প্রতিদিন। বাংলাদেশের ৬৪ হাজার গ্রাম বাংলায় যে হাট বসে সেই হাটগুলো দেখেন পা ফেলার জায়গা নাই। সরকার শ্রমিকদের উপরে অপরিকল্পিত ভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা রাস্তাঘাটে দেখেন কিভাবে মানুষ চলাফেরা করছে, শুধু শ্রমিকদের উপর এভাবে অত্যাচার করা বন্ধ করেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি ডিসি মহোদয়ের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই আপনি কোন শ্রমিককে সহযোগিতা করেছেন? কাওকে এক কেজি চাল দিয়েছেন? আশা করি আপনি বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
মেহেরপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, এখনো পর্যন্ত আমরা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের পক্ষে এভাবে আর বেশি দিন চলা সম্ভব হবে না। যদি সরকার গণপরিবহন চলতে না দেয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। লকডাউন শব্দটি শুনলে যেন আঁতকে ওঠে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষদের মধ্যে যেন নেমে এসেছে হাহাকার। এদিকে ফের লকডাউন এর কথা শুনে যেন একেবারেই অসহায় হয়ে উঠেছেন গণপরিবহনের শ্রমিকেরা।