মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসন ছিটকে গেলেন খোকন : স্বতন্ত্র প্রার্থীর হিড়িক
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ডাঃ আবু সালেহ মোঃ নাজমুল হক সাগর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বর্তমান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকনের জায়গা দখল করেছেন। অন্যদিকে এ আসনটিতে দলীয় প্রধানের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের দ্বার খুলে দেওয়ার ঘোষণায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হিড়িক পড়েছে।
রোববার বিকেলে অনেকটাই আকস্মিকভাবে নতুন মুখ হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় জায়গা করে নেন ডাঃ সাগর। তিনি মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক। তার পিতা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক ছিলেন গাংনীর প্রথম এমপি। ডাঃ আবু সালেহ মোঃ নাজমুল হক সাগর তখন কর্মরত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে। পরে তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ২০২২ সাল থেকে গাংনীর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরবর্তীতে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর তিনি স্বাস্থ্য জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান।
তথ্যমতে, মেহেরপুর-২ আসনে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন মুখ হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন। ২০২২ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি আবারও সভাপতি নির্বাচিত হন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসেন মোখলেছুর রহমান মুকুল। সাহিদুজ্জামান খোকন, মোখলেছুর রহমান মুকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক,সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. একেএম শফিকুল আলম, ডাঃ নাজমুল হক সাগরসহ ১৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় দলীয় মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। তবে চমকের মাধ্যমে মনোনয়ন পেলেন ডাঃ নাজমুল হক সাগর।
মনোনয়নের নামের তালিকা প্রকাশের পর নৌকার পক্ষে মিষ্টি বিতরণ আর আনন্দ মিছিল করেন ডাঃ নাজমুল হক সাগরের কর্মী সমর্থকরা। তেমনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার আশায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের কর্মী সমর্থকরাও মিষ্টি বিলিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনসহ আরও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘনিষ্টজনদের কাছ থেকে। ইতিমধ্যে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম জুয়েল ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল ইসলাম রিন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সাবেক এমপি মকবুল হোসেনসহ আরও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলবেন বলে আলোচনা হচ্ছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর ইতিহাসঃ
গাংনী উপজেলা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইতিহাসে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় শুরু হয় ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে নৌকার টিকিট পান বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাব উদ্দীন। তবে মেনে নেননি নেতাকর্মীরা। তাদের চাপেই মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন মকবুল হোসেন। বিএনপি প্রার্থী আব্দুল গণিকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন মকবুল হোসেন। এ নির্বাচনে মকবুল হোসেন (টেলিভিশন) পেয়েছিলেন ৪৫ হাজার ৮২০ ভোট, আব্দুল গণি (ধানের শীষ) ৩৩ হাজার ৮৬১ ভোট এবং হিসাব উদ্দীন (নৌকা) ১ হাজার ৭৭১ ভোট। জয়লাভের পর শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দিয়েছিলেন মকবুল হোসেন।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। এ নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন নৌকা প্রতীক পেলেও বিএনপি প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণির কাছে পরাজিত হয়। জয়-পরাজয়ের ব্যবধা ছিল প্রায় ২০ হাজার ভোটের।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মকবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয় তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেককে। তবে তীব্র আন্দোলনের পর এমএ খালেকের বদলে মকবুল হোসেনকে নৌকার টিকিট দেয় আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে মকবুল হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেনের কাছে ২ হাজার ৪৮৯ ভোটে পরাজিত হন।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিহীন নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এমএ খালেক। তবে এবার মনোনয়ন বদল হয়নি। শেষ পর্যন্ত মকবুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমএ খালেকের নৌকার বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে মাঠে নামেন। নির্বাচনে মকবুল হোসেন জয়লাভ করেন ১০ হাজার ২৮১ ভোটে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে আবারও ছিটকে পড়েন মকবুল হোসেন। এ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও পরবর্তীতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এ নির্বাচেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন জয়লাভ করেন।
নেতাকর্মীরা বলছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনকে দলের কোন পদ পদবীতে রাখা হয়নি। তাছাড়া তার বয়সও বেড়েছে। জীবনের শেষ নির্বাচন হিসেবেই তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তার কয়েকজন কর্মী সমর্থক। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই বলে দলীয় প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে থেকে আরও কয়েকজন হতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এক্ষেত্রে মনোনয়ন পত্র উত্তোলন, জমাদান ও প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে এবারের ভোটের প্রতিদ্বন্দীতার হিসাব-নিকাশের জন্য।