মেহেরপুর ভৈরব নদে কচুরিপানার দাপট চলছেই খনন হলেও ১২ মাস পানি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ
মেহেরপুরে ভৈরব নদ ৫৯ কিলোমিটার খনন শেষ হলেও মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কচুরিপনার দাপটে শত কোটি টাকা খরচ করে ভৈরব নদ খনন করলেও প্রত্যাশিত ফল পাচ্ছে না মেহেরপুরবাসী।
নদের বুকে এখন চলছে কচুরীপানার রাজত্ব। কচুরীপানার কারণে পানি দুষন হয়ে গন্ধ ছড়িয়ে যেমন দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, তেমনি মৎস্য সম্পদ পড়েছে হুমকীর মুখে। সবমিলিয়ে নদটি খননের সুফল থেকে এখন ব িত হচ্ছেন মেহেরপুরের মানুষ। কচুরীপানায় অপসারণ ও নব্যতা বাড়াতে পারলে বছওে সংগ্রহ করা যাবে শত কোটি টাকার মাছ এমনটাই মনে করেন এখানকার সচেতন মানুষ।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের পহেলা জুলাই ৬৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রথম দফাই ২৯ কিলোমিটার নদ খনন করা হয়। খনন কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩০ জুন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ৩০ কিলোমিটার খনন কাজ শুর হয়। এই দফায় ব্যয় ধরা হয় ৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এছাড়াও ভৈরব নদকে ঘিরে দুই পাড়ে পর্যটনদের আকৃষ্ট করতে করা হয় ওয়াকওয়ে।
প্রথম দফায় এক কোটি তিন লাখ টাকা ব্যারে এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
ভৈরব নদ খনন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের ফলে প্রান ফিরে পেয়েছিল নদটি। উপকার পেতে শুর করে মেহেরপুরের তিন উপজেলার প্রায় শতখানেক গ্রামের মানুষজন। কিন্তু এ যাত্রায় বাধা সাজে কচুরিপানা ও নদীর নব্যতা না থাকা। তাই ভেসতে যেতে বসেছে সরকারের এই পরিকল্পনা।
তবে কচুরিপানা অপসারণ ও নদে ১২ মাস পানি রাখার জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভৈরব নদের নব্যতা বাড়াতে ও পানি ধরে রাখতে ভৈরব নদের তিনটা উই আর নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার রতনপুরে একটি গোপালনগরে একটি। রতনপুরে উই আর নির্মাণে ব্যায় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গোপালপুরে ব্যায় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এই উই আর নির্মাণ হলে ১২ মাস ভৈরব নদীর পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে।
মেহেরপুর শহরের ভৈরব পাড়ের বাসিন্দা নাহিদুর রহমান জানান, অবৈধ বাদ দিয়ে এক সময় ভৈরব নদীকে দখল করে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু পূর্ণ খনন ফলে সকল বাদ উচ্ছেদ করা গেলেও এখন রাজত্ব চলছে কচুরিপানার। কচুরিপানার কারণে একদিকে যেমন নদের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে তা পোঁচে নষ্ট হচ্ছে পানি। এতে করে মারা যাচ্ছে মাছ। তিনি কচুরিপানা অপসারণ সহ ভৈরব নদের নব্যতা বাড়াতে কাজ করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের চাষী
আনসার শেখ জানান, এক সময় ভৈরবের পানি দিয়েই চলতো আমাদের চাষাবাদ। কিন্তু নদীর নব্যতা নষ্ট হয়ে পানি শূন্য হয় পড়েছে নদীটি। বর্তমানে পূর্ণখনন করা হলেও পানি ধরে রাখাটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ নদীর নব্যতা নাই। অন্যদিকে অল্প পানি থাকলেও কচুরিপানার কারণে সেই পানি ব্যবহার করতে পারেনা চাষিরা।
মুজিবনগর উপজেলার রতনপুরের বাসিন্দা আব্দুল বারি ভৈরব নদে উই আর নির্মাণকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জানান, এটি নির্মাণ হলে ভৈরব নদে বারো মাস পানি থাকবে যার ফলে উপকৃত হবে এই অ লের চাষীরা
অপর বাসিন্দা হান্নান শেখ জানান, ভৈরব নদে পানি থাকলে একদিকে যেমন চাষিরা উপকৃত হবে। অন্যদিকে প্রচুর পরিমাণে দেশী প্রজাতির মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। যা দিয়ে এই অ লের মাছের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর গ্রামের আবু লায়েচ জানান, এক সময় নৌপথে বড় বড় জাহাজ আসতো মেহেরপুরে। এসকল জাহাজগুলো নামতো বন্দরে তখন থেকেই এই গ্রামের নামকরণ করা হয় বন্দর। যা আমরা বাপ দাদাদের মুখে শুনেছি। কিন্তু আমাদের জন্মের পরে আমরা আর তা দেখিনি। তিনি বলেন নৌপথে আবারো ভৈরব নদকে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করলে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবে। সাথে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে। ভৈরব নদকে ঘিরে এ সকল পরিকল্পনা করতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।
মেহেরপুরের প্রবীণ সাংবাদিক তুহিন অরণ্য জানান, মেহেরপুরের প্রধান পানির উৎস হচ্ছে ভৈরব নদ। ভৈরব নদকে ঘিরে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে সরকার ৫৯ কিলোমিটার পূর্ণ খননের মাধ্যমে ভৈরব নদকে নতুন করে জন্ম দিয়ছে। এখন এটিকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করলে একদিকে যেমন এই অ লের কৃষকদের উপকৃত হবে অন্যদিকে মৎস্য চাষের মাধ্যমে মেহেরপুরের মাছের ঘাটতি পূরণ করাও সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন সঠিক পরিকল্পনা থাকলে ভৈরব নদ থেকে বছরে শত কোটি টাকার দেশীয় মাছ উৎপাদন সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান জানান, ভৈরব নদকে ঘিরে মহা পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আর এর অংশ হিসেবে ৫৯ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। ১২ মাস পানি ধরে রাখার জন্য ভৈরব নদে তিনটি পৃথক স্থানে উই আর নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হবে। এটি নির্মাণ সম্ভব হলে ভৈরব নদে বারো মাস পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে। যার ফলে এই অ লের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা নানামুখী উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, ভৈরব নদের খনন কাজ শেষ হয়েছে উই আর নির্মাণ চলছে। কচুরিপানা অপসারণের জন্যও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতি মধ্যে কচুরিপানা অপসারণের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে অল্পদিনের মধ্যেই কচুরিপানা অপসারণ করা হবে। তবে তিনি বলেন, অ লের কচুরিপানা সৃষ্টির উপাদান রয়েছে তাই এটি অপসারণ করলেও আবারো সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিনি কচুরিপানা অপসারণ সরকারের পাশাপাশি মেহেরপুরের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ভৈরব নদে অল্প কচুরিপানা হলেই সেটি তুলে ফেলা সম্ভব হয় তাহলে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। নদীপাড়ের সকল বাসিন্দা চাষী মৎস্যজীবীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।