মেহেরপুর পৌর মেয়র রিটন, যুবলীগ নেতা পেরেশানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  05:53 PM, 25 August 2024

মেহেরপুরে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে পৌর মেয়র জেলা যুবলীগের আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বারিকুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান হিরণসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আজ রবিবার( ২৫ আগস্ট) মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শারমিন নাহারের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন ইমন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি। যার মামলা নম্বর সিআর ৯০৫/২৪। দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৫৪/৩৮০/৩৮৩/৪২৭/৪৪৭/৫০৬(২)/১১৪/৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

মামলার বাদির পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মারুফ আহমেদ বিজন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক শারমিন নাহার সদর থানাকে এফআইআরের নির্দেশ দেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বোসপাড়ার যুবলীগ নেতা নাহিদ, শেখ পাড়ার রিয়েল, পেরেশানের ভাই সোহানুর রহমান বাদশা, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুবলীগ নেতা মাহাবুব খা, পেয়াদা পাড়ার লিখন, স্কুল পাড়ার ইয়ানুস, ভুমি অফিস পাড়ার তুফান, রাধাকান্তপুরের সাজিজুর রহমান সাজু, বড়বাজারের কাজল দত্ত, হোটেল বাজারের আব্দুল হাই, থানা রোডের মেজবাহ উদ্দিন, গড়পাড়ার সাংবাদিক মিজানুর রহমান অপু, ঘাটপাড়ার রিফাতুল, পেয়াদার পাড়ার মাহাবুব ডালিম, শারাফত আলী, ফৌজদারী পাড়ার হিরক, জাহাঙ্গীর, শেখ পাড়ার ফাহাদ, বাসস্ট্যাণ্ড পাড়ার সহিদুজ্জামান সুইট, মোনাখালীর আঙ্গুর, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ার রাফিউল ইসলাম, হোটেল বাজারের মিজানুর রহমান মিঠু, বিশ্বনাথপুরের আলমগীর সহ অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদি বলেন, আমি মেহেরপুর পৌরসভার সরকারী বালিকা বিদ্যালয় পাড়াতে আমি বসবাস করেন। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের একজন রাজনৈতিক কর্মী। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঘটনার তারিখে দেশের এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি মোবাইলের ফেসবুক থেকে “ইমন বিশ্বাস/যুবদল মেহেরপুর” উল্লেখে একটি রাজনৈতিক পোস্ট করি। যার শিরোনাম ছিল(দক্ষিণ এশিয়ার কুখ্যাত তিন নরঘাতক : মোদী, সুচি এবং হাসিনা। প্রথমজন : গুজরাটের কসাই হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন, দ্বিতীয়জন: আরাকানের ডাইনী হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন আর তৃতীয়জন নিজ দেশে ৫’শত লোককে গুম করে শাপলা চত্তরে আলেমদের হত্যা করে লাশ গুম করেন মাঝে মাঝে বিরোধীদের গুম করবার কারণে গুমকুমারী হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন।) মর্মে পোস্ট করলে আসামীরা আমাকে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করতে থাকে। আমাকে না পেয়ে, আসামীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ১ম ঘটনার সময়ে ১ম ঘটনাস্থলে আমার বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে বাড়ীতে ভাংচুর ও লুটপাট করে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করে এবং ঘরে রক্ষিত নগদ আনুমানিক দুই লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার টাকা চুরি করে নেয়। ৩ নং আসামী নাহিদ আমার স্ত্রীর পরনের কাপড়চোপর ধরে টানাটানি করে শ্লীলতাহানী করে ও তার শরীরে থাকা সোনার গহনা (গলার হার ৬ আনা, কানের দুল ৩ আনা, হাতের বালা ১ ভরি) জোর করে ছিনিয়ে নেয়। পরে আমার মাতা মমতাজ বেগম ঠেকাতে আসলে আসামীরা তাকে ব্যপক মারধর ও শ্রীলতাহানী করে এবং তার শরীরে থাকা সোনার গহনা (গলার হার ১২ আনা, কানের দুল ২ আনা, হাতের চুরি ৪ আনা) জোর করে ছিনিয়ে নেয় এবং আমার মাকে আসামীরা জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে আমার মার মাথার পিছনে মারাত্মক আঘাত লেগে আহত করে(তিনি পরবর্তীতে ১ বছর চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মৃত্যুবরন করেন)।

পরে আসামীরা আমাকে যেখানে পাবে সেখানে হত্যা করবে মর্মে হুমকি দিয়ে আমার বাড়ী থেকে চলে আসে এবং মটরসাইকেল যোগে শহরের রাস্তায় আমাকে খোজাখুজি করতে থাকে। আমি তৎকালীন সময়ে এজটেক ঔষধ কোম্পানীর ডিস্টিবিউটর এর ব্যবসা করতাম। ঘটনার তারিখে আমি মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন ঔষধের দোকানে ঔষধ বিক্রয়ের টাকা আদায় করে বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছিলাম। এসময়ে নীলমনি সিনেমা হল রোডের পশ্চিম বোসপাড়া পেশকারের বাগানের সামনে দিয়ে যাবার সময়ে সামনের রাস্তা দিয়ে আসামীরা আসতে থাকে বিদ্যুতের আলোতে আসামীরা আমাকে দেখে চিনে ফেলে এবং ১-২ নং আসামীরা নির্দেশ দিয়ে বলে যে, ঐ যে ইমন ধর শালাকে, এসময়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে মটরসাইকেল যোগে পালাতে থাকে। পিছনে পিছনে আসামীরা আমাকে ধাওয়া করতে থাকে। আমি মটরসাইকেল যোগে ২য় ঘটনাস্থলে ২য় ঘটনার সময়ে উপস্থিত হলে সামনে মোড় থাকায় এবং লোকজন থাকায় আসামীরা আমাকে ধরে ঘিরে ফেলে। এসময়ে ১-২ নং আসামীর নির্দেশে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ৩ নং আসামী নাহিদ তার হাতে থাকা জিআই পাইপ দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার নাকের উপরে স্বজোরে আঘাত করে নাক ফাটিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে, এসময়ে ৪ নং আসামী রিয়েল তার হাতে থাকা জিআই পাইপ দিয়ে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার উপরে মাথায় মাঝ বরাবর স্বজোরে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ১১ নং আসামী তুফান তার হাতে থাকা জিআই পাইপ দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার বাম চোখের ভুরুর উপরে স্বজোরে আঘাত করে যাতে কেটে ও ফেটে রক্তাক্ত জখম করে। এতে আমি সেখানে পড়ে গেলে সকল আসামীরা আমাকে ঘিরে ধরে তাদের হাতে থাকা ভোতা অস্ত্র দ্বারা আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত করতে থাকে এবং সমস্ত শরীর নীলা-ফুলা জখম করতে থাকে।

এসময়ে অন্যান্য আসামীরা আমার মটর সাইকেলটি ভাংচুর করে আনুমানিক বিশ হাজার টাকার ক্ষয়-ক্ষতি করে। এসময়ে আসামীরা চিৎকার করে বলতে থাকে যে, শালা আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে গুমকুমারী বলেছে তাই শালাকে আজ খুন করে ফেল। এতে আসামীরা আমাকে একই ভাবে মারতে থাকে এবং আমার শরীরের উপরে উঠে লাথি মারতে থাকে এবং ৩ নং আসামী নাহিদ আমার প্যান্টের পিছনের বাম পকেটে থাকা মানিব্যাগটি চুরি করে নেয়। উক্ত মানিব্যাগে আমার আদায়ের ছাব্বিশ হাজার টাকা ছিল। এর পর আঘাতের যন্ত্রনায় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আসামীরা আমাকে মৃত ভেবে চলে যায়। এসময়ে সাধারণ পথচারীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গেলে, সেখানে পুলিশ এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসায় আমার জীবন বেঁচে গেলে চিকিৎসকরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেয়।

মিথ্যা হয়রানীমূলক ভাবে উক্ত ১৭ নং আসামী মিজানুর রহমান অপু আমার নামে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন/২০০৬(সংশোধনী/২০১৩) এর ৫৭(২) ধারা মিথ্যা মামলা দিলে, চিকিৎসাধিন অবস্থায় পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে এবং ৩ দিন চিকিৎসা শেষে পুলিশ আমাকে উক্ত মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করে।

পরবর্তীতে আমি থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে চাইলে থানা কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক কারণে মামলা গ্রহণ করে নাই। এছাড়া আসামীদের হত্যার হুমকি থাকায় বাদী ভয়ে আদালতে মামলা করতে পারেন নাই।

আপনার মতামত লিখুন :