মেহেরপুর জেলা কারাগার বন্দিসহ কারারক্ষীরা বিপাকে,ড্রেনের ময়লা পানি নিষ্কাশিত হয় না আট বছর
নিরাপদে রেখে আলোর পথ দেখানোর স্লোগান মেহেরপুর জেলা কারাগারের ফটকেই বন্দি। জেলের মধ্যে পানি নিষ্কাশন ড্রেনের পানি পচে সেখানে পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হয়েছে। বন্দিদের অভিযোগ, আট বছরের পচা পানিতে তারা মারাত্মক কষ্টে থাকেন। কারাগারের মধ্যে ড্রেনের পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে পানি পচে তাদের সেখানে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।
কারারক্ষীরাও বিপাকে পড়ছেন দায়িত্ব পালনে। কারা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকও কারাগারের বন্দিদের মাঝে মশাবাহিত ও চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। সম্প্রতি ডিআইজি প্রিজন মো. ছগির মিয়া কারাগার পরিদর্শন করে এ অব্যবস্থাপনা দেখে দুঃখ প্রকাশ করে সত্বর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে জেলা উন্নয়ন সভায় আলোচনাও হয়েছে। জানা গেছে, কারাগারে বন্দিদের গোসল, পোশাক পরিষ্কার করা, তাদের ব্যবহৃত ল্যাট্রিনের পানি নিষ্কাশন হওয়ার সুযোগ নেই। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ড্রেন ভরাট হয়ে দীর্ঘ বছর থেকে সেখানে মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বদ্ধ পানি পচে গন্ধের কারণে বন্দিদের ভেতরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।
কারাগারের মধ্যে দায়িত্বপালনকারী কারারক্ষীরাও নাক-মুখে কাপড় বেঁধে দায়িত্ব পালন করেন। জামিনে বের হয়ে আসা বেশ কয়েকজন বন্দি এমনই অভিযোগ করেছেন। জেল সুপারও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চলতি মাসে জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগ আছে, ২০১২ সালে মেহেরপুর জেলা কারাগার নির্মিত হয়।
নির্মাণকালীন ড্রেন নির্মাণ করা হলেও পানি বের হওয়ার ড্রেন তৈরি করা হয়নি। দীর্ঘ বছর ধরে ড্রেনের পানি নিষ্কাশন হয় না। সে পানি পচে জেলের ভেতরের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। পচা পানিতে বিস্তার ঘটেছে মশা-মাছিসহ নানা ধরনের রোগজীবাণু।
সম্প্রতি জামিনে বের হয়ে আসা বেশ ক’জন জানিয়েছেন, কারাগারে ব্যবহৃত পানি নিষ্কাশন হয় না। ড্রেনেই আটকে থাকে। বৃষ্টির সময় ড্রেনের পানি পুরো জেলখানায় ছড়িয়ে পড়ে। ওই ড্রেন মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মাছিও বেড়েছে মারাত্মকভাবে।
ড্রেনের পচা পানির গন্ধে এক হাতে নাক মুখ ধরে থাকতে হয়। অপর হাত দিয়ে শরীরে বসা মশা তাড়াতে হয়। কারারক্ষীরাও নাকে-মুখ কাপড়ে বেঁধে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে ২২৪ জনের ধারণক্ষমতার জেলা কারাগার নির্মাণ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১২ সালে।
কারাগারের ব্যবহৃত পানি নিষ্কাশনের জন্য কারাগারের বাইরে প্রাচীর ঘেঁষে একটি স্থায়ী ড্রেন নির্মিত হয়েছে। এতে পানি নিষ্কাশনের কোনো সুযোগ নেই। বাইরের এবং ভেতরের ড্রেনে সব সময় পানি ভরাট থেকে পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে। আধুনিক এ কারাগারে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সুপরিকল্পিত না হওয়ায় সেখানে মানবিকতা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
জেল সুপার মো. মকলেছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলা উন্নয়ন সভায় আলোচনা হয়েছে। ডিআইজি প্রিজন মো. ছগির মিয়া সম্প্রতি কারাগার পরিদর্শন করে পানি নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, কারাগারের উত্তর পাশের দেয়াল ঘেঁষে খাস জমি। সেখানে পুকুর করে ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের জন্য আলোচনা হয়েছে জেলা উন্নয়ন সভায়। ইতোমধ্যে প্রকল্প তৈরি শুরু হয়েছে।
মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু হবে।
জেলা কারাগারের চিকিৎসক ইনজামুল হক জানান, বিষয়টি অমানবিক। অতিসত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ড্রেনের পচা পানি ড্রেন উপচে পুরো কারাগারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাতে ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।