মেহেরপুর জেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক দিলারা আফরোজ
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক (মাধ্যমিক) নির্বাচিত হওয়ার পর এবার জেলা পর্যায়ে ও শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন বাঁশবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দিলারা আফরোজ। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ এ গাংনীতে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক (মাধ্যমিক) নির্বাচিত হওয়ার পর এবার জেলা পর্যায়েও শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন তিঁনি।
জেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বছর মাধ্যমিক পর্যায়ে তিঁনি জেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারিক এর বড় মেয়ে দিলারা আফরোজ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই সংসার জীবনে প্রবেশ করেন। বাবা মায়ের বড় সন্তান তিনি। অদম্য পরিশ্রমী এই শিক্ষক বিয়ের পর এসএসসি এইচএসসি বিএ, এমএ ও বিএড সম্পন্ন করেন। তাদের নিজেদের কোন ভাই না থাকায় বড় মেয়ে হিসেবে পরিবারের সকল দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ছোট ৪ বোনের লেখাপড়ায় তিনি অনন্য ভুমিকা পালন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্বামীর সার্বিক সহযোগিতায় উভয় পরিবারের সকল দায়িত্ব পালন করেন । তিনি একজন সফল অনুষ্ঠান উপস্থাপক। বিদ্যালয়ের সকল অনুষ্ঠান ও জাতীয় দিবসে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তিঁনি। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতা, সংসার সামাল দিয়েও তিনি লেখালেখি করেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। ” দহনের দিন ” নামে একটি কবিতার বই রচনা করেন। তার কবিতায় প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ বারবার প্রতীকি হিসেবে কবিতায় তুলে ধরেছেন।
জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির অভ্যাস তাঁর। দিলারা আফরোজের জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৩শে অক্টোবর। তার বাবা রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা যিঁনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সরকারি গেজেটভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বই পড়া ও বই সংগ্রহের প্রতি প্রবল আগ্রহ রয়েছে এই শিক্ষকের। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার অনেক বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। একসময় তিনি পাড়ার বয়স্ক ও নিরক্ষর মহিলাদের বিনামূল্যে স্বাক্ষর জ্ঞান করার জন্য সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে তাদের পড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। পাড়ার অনেক মহিলা এখন লিখতে ও পড়তে পারে।তাদের বিনামূল্যে বই খাতা সরবরাহ করতেন। মহামারী করোনার পর এখন সে উদ্যোগ বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে গাংনীতে শ্রেষ্ঠ সংগ্রামী নারী পুরষ্কার লাভ করেন তিনি।
ব্যক্তিজীবনে তিনি কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আল আমিনের সহধর্মিণী। দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা সন্তানের জননী। মেধাবী দুই কন্যার মধ্যে বড় মেয়ে ডাঃ মাহজাবীন শাহীদি ঐশি ২০২২ সালের শেষে শহীদ মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে গাংনীতে প্যাকটিস করছেন। ছোট মেয়ে মুবাসসারাহ শাহীদি এশা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার ইন্জিনিয়ারিং এ অধ্যায়নরত। অত্যান্ত অতিথিপরায়ণ ও পরিশ্রমী এ শিক্ষক সমাজ ও মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করে চলেছেন। দিলারা আফরোজ মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।