মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে জনদুর্ভোগ লাঘবে সওজ এর সাড়ে ৯ কোটি টাকার সংস্কার কাজ আটকে আছে টেলিফোনের তারে
জনদুর্ভোগ থাকলেও মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ৯৪০ মিটার রাস্তা সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে আছে। টেলিফোনের তারের কারণে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও সেটি আর হচ্ছে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানীর সমন্বয়হীনতার কারণে কাজটি শুরু হচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন এবং খুব শীঘ্রই কাজটি শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
মেহেরপুর জেলা সওজ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী কুষ্টিয়া সড়কের রাস্তা প্রায় আট বছর আগে পূর্নাঙ্গ ভাবে কাজ হয়েছে। তারপর আর সেভাবে কাজ হয়নি। তাই এ রাস্তার গাংনী মহিলা কলেজ মোড় ও সাবেক সংসদ সদস্যর বাসার সামনেসহ অধিকাংশ রাস্তায় নষ্ট হয়েছে।
এর মধ্যে চোখতোলা মাঠের ৯৪০ মিটার রাস্তা একবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিবছরই ঔই স্থানে কোনরকম চলাচলের জন্য ব্যয় করা হয় কয়েক লাখ টাকা। স্থায়ীভাবে সংস্কার করণের লক্ষ্যে রি-টেন্ডার করা হয়। কাজ পায় জহিরুল লিমিটেড। মোট নয় কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যায়ে সংস্কার কাজটির কার্যাদেশ পান চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারী। এসময় কাজটি শুরু করা হলে টেলিফোনের তারের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি মেহেরপুর জেলা টেলিকমিউনিকেশনকে জানানো হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ অদ্যাবদি তার সরিয়ে না নেয়ায় কাজটি আর শুরু করা যায়নি। বারবার চিঠি দেয়া হলেও কোন সদুত্তোর মেলেনি।
মেহেরপুর টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ বলছেন অন্যকথা। তাদের ভাষ্য, সওজ বিভাগের চিঠি বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া সওজ ক্ষতিপুরণ না দিলে তার সরানো সম্ভব নয়। অনেক খরচের বিষয় থাকায় জেলা কার্যালয়ের সম্ভব হচ্ছে না তার সরানো। ফলে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে এই রাস্তার বেহাল দশায় স্থানীয় লোকজনের ভোগান্তির শেষ নেই। গাংনীর চোখতোলা নামক মাঠের মাঝের রাস্তার সমস্যা প্রায় ৫০ বছরের। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন বা তিন দিনই এখানে সড়কও জনপখের গাড়িতে ইট নিয়ে এসে ভেঙ্গে দিয়ে যায়। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। প্রতিদিনই ভাঙ্গা রাস্তায় কোন না কোন যানবাহন নষ্ট হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছে স্থানীয়সহ দুরপাল্লার যানবাহন। এছাড়াও মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়ার খলিশাকুন্ডি নামক স্থান পর্যন্ত সারা বছরই ছোট ছোট গর্তে পাথর দিয়ে তার উপর বিটুমিন ছিটিয়ে চলছে পুটিংয়ের কাজ।
আন্তঃজেলা চলাচলকারী এইচ আর পরিবহনের চালক সবুজ হোসেন বলেন আমাদের মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কসহ সব সড়কেই বাধা ধরা সময়ে গন্তব্যে পৌছাতে হয়। চোখতোলা মাঠের এই রাস্তার এ কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই ৫ মিনিট চলে যায়।
যথা সময়ে পৌছুতে না পারলে প্রতিমিনিটেই মোটা অংকের টাকা জরিমানা দিতে হয়। রাস্তাটা মেরামত না করায় মাঝে মাঝেই ভাঙ্গচোরায় পড়ে গাড়ী বিকল হয়ে যায়। একই কথা জানালেন এমএম পবিহনের চালক আঙ্গুর আলী।
জোড়পুকুর গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, জোড়পুকুর ও চোখতোলা মাঠের মাঝের এই জায়গাটা কোনদিনও ঠিক হয় না। প্রায় আট বছর আগে যখন রাস্তাটা নতুন করে তৈরি করা হয় তারপর মাসখানিক ভালো ছিলো তারপর আবার আগের অবস্থা।
মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হুদা বাঙ্গালী বলেন, যখন কাচা রাস্তা ছিলো তখনো দেখেছি চোখতোলা মাঠের ওখানে বেশি নষ্ট হতো। ১৯৬০ সালের দিকে যখন পাকা রাস্তা তৈরি হয় তখনও কয়েক বছর কিছুটা ভালো ছিলো। স্বাধীনতার পর থেকে কখনোই এই রাস্তাটা বছর জুড়ে ভালো থাকেনি। এই ৫০ বছরের সমস্যাটা যদি দুর করা যেতো তাহলে এ অ লের মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারতো।
বেশ কয়েকজন পথচারী মন্তব্য করেন, সরকারী দপ্তরের কোন গুরুত্ব নেই সড়কটি মেরামতের। সারা বছর এইটুকু রাস্তা দেখিয়েই বাজেট নিয়ে এসে এখানেই কাজ করে তবে ভালোভাবে করে না তাই নষ্ট হয়েই থাকে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানেরও কোন আগ্রহ নেই কাজ করার তাই হয়তো কাজ হচ্ছে না।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জহিরুল লিমিটেড এর স্বত্বাধীকারি জহিরুল ইসলামের সাথে বার বার যোগাযোগ করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই রাস্তা সংস্কারের জন্য বছরের প্রথম দিকেই কার্যাদেশ দিয়েছিলাম। ঠিকাদারও যথা সময়ে কাজ শুরু করেছিলো। কিন্তু রাস্তার পাশেই টেলিফোনের তার থাকায় কাজ বন্ধ করে দেই বিটিসিএল।
টেলিফোনের তার সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দুইবার চিঠি দিয়েছি তবুও কোনরকম সাড়া পাইনি। ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে, টেলিফোনের তার না সরানো হলেও করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই আবার কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লিমিটেড মেহেরপুরের সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ আমদের ক্ষতিপুরণ না দেওয়ায় তার সরানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি আবারও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে দেখবো কিভাবে সরানোর ব্যবস্থা করা যায়।
সরকারী দুই দপ্তরের সমন্বয়ের এবং রাস্তাটি সংস্কারের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম জানান, আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিরসনের ব্যবস্থা করবো।